উখিয়ায় ইয়াবা ও অস্ত্রসহ ইউপি সদস্য আটক

মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে ইয়াবা নিয়ে আসা মাদক সিন্ডিকেটের শীর্ষ কারবারি জাফরুল ইসলাম প্রকাশ ওরফে বাবুল মেম্বারকে (৪২) আটক করেছে র‌্যাব।

গতকাল বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজারের টেকনাফের কাটাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র‌্যাব-১৫ এর একটি দল।

র‍্যাব জানায়, বাবুল টেকনাফ এলাকার শীর্ষ মাদক কারবারি। তিনি মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণসহ বিভিন্ন জিনিস দেশে নিয়ে আসতেন। বাবুলের হস্তক্ষেপে দেশে প্রতি মাসে প্রায় ৪০-৪৫ লাখ ইয়াবা নিয়ে আসা হতো। মাদক চোরাচালানের জন্য বাবুলের একটি নিজস্ব সশস্ত্র চক্র রয়েছে। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ২০-২৫ জন। চিংড়ি ব্যবসার আড়ালে এই মাদক ব্যবসা করে আসছিলেন বাবুল।

আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, গত রাতে র‌্যাব-১৫ এর একটি দল টেকনাফের কাটাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে কক্সবাজারের মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফরুল ইসলাম প্রকাশ ওরফে বাবুল মেম্বারকে (৪২) আটক করে। তাকে আটককের সময় ৫৫ হাজার পিস ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়।

বাবুল কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকার একজন অন্যতম শীর্ষ মাদক কারবারি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী। স্থানীয় এলাকায় মাদক চোরাচালানের গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত তিনি। বাবুল পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মাদক দেশে নিয়ে আসতেন। তিনি মাদক কারবারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য এলাকায় ২০-২৫ জনের একটি চক্র গড়ে তোলেন। তিনি এলাকায় চাঁদাবাজি, স্বর্ণ চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্র, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, চোরাই পথে গবাদি পশু চোরাচালান এবং অবৈধভাবে পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

আটককৃত বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার আল মঈন বলেন, বাবুল ২০০৫ সালের পরে টেকনাফ এলাকায় মাদক ও অন্যান্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার  থেকে মাদক এনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিতেন। ২০১৭ সালে এলাকার আরেক মাদক কারবারি লুৎফুর রহমানের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পলাতক তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী নবি হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। নবির সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকে বাবুল আরও বড় মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

বাবুল চিংড়ি ব্যবসার আড়ালে মাদকসহ চোরাচালানের ব্যবসা করে আসছিলেন। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এসব মাদক ২০-২৫ জনের একটি গ্রুপের সশস্ত্র পাহাড়ায় দেশে পৌঁছাত। বাবুল প্রতি সপ্তাহে চার-পাঁচটি ইয়াবার চালান দেশে নিয়ে আসতেন এবং বালুখালী এলাকায় তার চিংড়ি খামারে লুকিয়ে রাখতেন। প্রতি চালানে দেশে প্রায় দুই লাখ পিস ইয়াবা আনা হতো। দেড় লাখ টাকায় কিনে আনা ইয়াবার প্রতি চালানে তিন-চার লাখ টাকায় বিক্রি করতো বাবুল।

আটককৃত বাবুল ২০০১ সালে চট্টগ্রামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে ভর্তি হয়ে এক বছর পড়াশোনা করার পর তা বন্ধ করে দেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। তিনি ২০০৫ সালে পালংখালি এলাকায় জাবু নামের এক ব্যক্তির খুনের দায়ে আসামি হয়ে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকেন। তার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে টেকনাফ থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের হয়।

কমান্ডার মঈন জানান, ২০১৭ সালে জাবু হত্যা মামলায় প্রায় দুই মাস কারাভোগ করে বাবুল জামিনে বের হয়ে আসেন। মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের মাধ্যমে আয় করা টাকায় তিনি কক্সবাজারে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, ডামট্রাক, ট্রাক, এলাকাতে জমি এবং মাছের প্রজেক্টসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তোলেন। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় হত্যা এবং মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে নয়টির বেশি মামলা রয়েছে। বাবুল প্রতি মাসে ৪০-৪৫ লাখ পিস ইয়াবা দেশে নিতে আসতেন। এতে তার প্রতি মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা আয় হতো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //