নাটোরে রিকশাচালককে পেটানোর ঘটনায় এএসআইকে প্রত্যাহার

নাটোরের সিংড়ায় এক অটোরিকশা চালককে পেটালেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সেলিম রেজা। ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাত ১১টার দিকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ-সিংড়া বাস্ট্যান্ড রোডের দেশ ফার্নিচার দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেলিম রেজাকে পুলিশ লাইন্সে লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

অভিযুক্ত পুলিশ ওই কর্মকর্তা সিংড়া থানায় কর্মরত এবং ভুক্তভোগী ওই অটোরিকশা চালকের নাম হারুন আলী। তিনি সিংড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাইশা গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ সুপারের নির্দেশে শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে তাকে লাইনে ক্লোজড হয় বলে সিংড়া থানার ওসি আবুল কালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় রিকশা চালক হারুন আলীকে যেতে বলছেন আর টস লাইট দিয়ে চালকের মাথায় মারধর করছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রতিকার চেয়ে কোন অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না।

জানা যায়, ভুক্তভোগী রিকশাচালক হারুন আলী দমদমা থেকে সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিলেন। এসময় উপজেলা পরিষদ রোডে দেশ ফার্নিচার দোকানের সামনে পৌঁছালে এএসআই মো. সেলিম রেজা রিকশা থামায়। এরপর এএসআই, এক পুলিশ কনস্টেবলসহ তিনজন তার রিকশায় উঠে বসেন। তাদের সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যেতে বলেন। এসময় চালক এএসআইকে বলেন, স্যার মিটারের তার সংযোগ কাজ করছে না, তাই গাড়ি যাচ্ছে না। অনেক কষ্টে আমি হাত দিয়ে তার ধরে এ পর্যন্ত এসেছি অকেজো হওয়া এই রিকশা নিয়ে যাওয়া যাবে না।

এদিকে ওই ভিডিওতে এএসআইকে বলতে শোনা যায়, আরে বেটা আমি তোরে বলছি তুই যা, একে বারে কান ফাটাই ফেলাবো যা যা। এসময় অকথ্য ভাষায় চালককে গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায় এএসআই ক্ষুব্ধ হয়ে তার হাতে থাকা টস লাইট দিয়ে চালকের মাথায় মারধর করতে থাকেন। পরে আবারও দ্বিতীয় দফায় চালকে মারধর করতে দেখা গেছে। এসময় চালকের কান্নায় আশপাশের লোকজন জড়ো হলে তাদের ধমক ও গালি দিয়ে সরিয়ে দেন এএসআই। এরপর চালক ওই এএসআইসহ তিনজন রিকশায় নিয়ে চলে যান।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই অটোরিকশা চালক হারুন আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাতে দমদমায় আমার রিকশার মিটারের তার ছিঁড়ে যায়। আমি এক হাত দিয়ে তার চেপে অনেক কষ্টে বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিলাম। এসময় কোর্ট মাঠ পার হলে দুই পুলিশসহ তিনজন রিকশা থামায়। তারা আমাকে বলে, তোকে সিগন্যাল দিলাম, তুই দাঁড়ালি না কেন। আমি বললাম, আমি বুঝতে পারিনি স্যার। আমার গাড়ির মিটারের একটি তার ছিঁড়ে গেছে তাই মেরামত করতে সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিলাম। এসময় তিনজন আমার রিকশায় চড়ে বলে চল থানায়। এরপর আমাকে ওই পুলিশ অনেক মারধর করতে থাকেন। পরে আমার নষ্ট গাড়িতে তিনজন উঠে জোর করে আমাকে দিয়ে টেনে সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যায়। আমরা গরীব মানুষ বলে কি আমাদের কোনো ইচ্ছা, সুবিধা-অসুবিধার মূল্য নেই। আমাকে মারধর করছে দুঃখ পেলেও সয়েছি কিন্তু তাকে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সিংড়া বাস্ট্যান্ড পর্যন্ত গায়ের শক্তিতে হাতে টেনে তিনজনকে নিয়ে যাওয়ায় বেশি আহত হয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে পুলিশের  অফিসার এএসআই সেলিম রেজা বলেন, ওই রিকশা চালককে তিনি কোন মারধর করেন নাই, শুধু তাকে যেতে বলেছেন এসংক্রান্ত  প্রতিবেদকের কাছে ভিডিও রয়েছে জেনে ফোন কেটে দেন।

সিংড়া থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলামের নির্দেশে এএসআই সেলিম রেজাকে পুলিশ লাইনন্সে ক্লোজড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেছেন, তদন্ত করে আইনগতভাবে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে যতটুকু অপরাধ করবে তার সেই টুকু বিচার হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //