তিন দফা দাবিতে অচল দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে ঘোষিত ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে একযোগে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন। কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সোমবার (১ জুলাই) সকাল থেকে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এই কর্মবিরতির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। অচলাবস্থায় পড়েছে দেশের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও চলমান আন্দোলনের বিষয়ে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের কেউ। এতে সংকট আরো ঘনিভূত হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। 

এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালে বেতন স্কেলে গ্রেডের সমস্যা নিয়ে কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। যদিও সে দাবি পূরণ হয়নি বলে জানা যায়।  

কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)সহ অন্যান্য সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা। তাদের দাবি তিনটা। এগুলো হলো- প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। এর বাইরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হোক।

প্রসঙ্গত, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৩ মার্চ প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে এর বিরুদ্ধে সরব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। কিছু কর্মসূচি পালনের পর ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। এরপরও দাবির বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না দেখে ৪ জুন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গত সপ্তাহে টানা তিনদিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।

এতদিন কর্মবিরতি পালিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষাগুলো এর আওতার বাইরে ছিল। কিন্তু আজ থেকে যে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ দাপ্তরিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন শিক্ষকেরা।

গতকাল রবিবার (৩০ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ফটকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতির এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া। তারপর দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একে একে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। 

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে।

তিনি বলেন, ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয় এবং ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন হয়েছে। 

অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, যাতে আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //