ইউরোপের নতুন যুগের প্রথম রাজা হালান্ড

ইউরোপের ফুটবলের শাসক সংস্থা উয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন আর্লিং হালান্ড। লিওনেল মেসি আর কেভিন ডি ব্রুইনকে হারিয়ে ২৩ বছরের হালান্ড জিতে নিয়েছেন ইউরোপের সেরা ফুটবলারের সম্মাননা। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স হালান্ডকে এনে দিয়েছে ইউরোপের ফুটবলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত পুরস্কার।

২০২২ সালের মে মাসে জার্মানির বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ম্যানসিটিতে নাম লেখান হালান্ড। সিটিজেনদের হয়ে প্রথম মৌসুমেই বইয়ে দেন রেকর্ডের বন্যা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩৬ গোলের রেকর্ড গড়েন। পুরো মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ম্যানসিটি জার্সিতে তার গোলের সংখ্যা ৫২। যা প্রিমিয়ার লিগ যুগে কোনো ইংলিশ ক্লাবের খেলোয়াড়ের করা সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। ২০২২-২৩ মৌসুমে ম্যানসিটি জিতেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ আর ইংলিশ এফএ কাপের শিরোপা। হালান্ড পেয়েছেন ইপিএলের বর্ষসেরা খেলোয়াড়, সেরা উদীয়মান তারকা আর সেরা গোলদাতার পুরস্কার। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবলে এক মৌসুমে ব্যক্তিগত তিনটি সর্বোচ্চ পুরস্কার জিতে নিয়ে ‘বিরল’ রেকর্ড গড়েন হালান্ড। 

মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রো-ডলারে সমৃদ্ধ ম্যানসিটি সাম্প্রতিক সময়ে শাসন করছে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবল। কিন্তু অধরা ছিল ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব। হালান্ডের কাঁধে চড়ে পূরণ হয়েছে সেই লক্ষ্যও। ম্যানসিটি প্রথমবারের মতো জিতেছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ। ১২ গোল করে হালান্ড দখল করেন চ্যাম্পিয়নস লিগের গোল্ডেন বুট। সেই সঙ্গে ইউরোপের সেরা গোলদাতার গোল্ডেন শুর মালিকানাও পেয়ে যান। ম্যানসিটির চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পরেই হালান্ড হয়ে ওঠেন উয়েফা বর্ষসেরার টপ ফেভারিট। মেসি ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনার হয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপ। কিন্তু ক্লাব ফুটবলে পিছিয়ে ছিলেন অনেকটাই। পিএসজির হয়ে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান ছাড়া কিছু জিততে পারেননি। পুরো মৌসুমে ৪১ ম্যাচে করেছেন ২১ গোল আর ২০টি অ্যাসিস্ট। এ ছাড়া হালান্ডের ম্যানসিটি সতীর্থ ডি ব্রুইন সব মিলিয়ে ৪৯ ম্যাচে করেছেন ১০ গোল আর ৩১ অ্যাসিস্ট। কিন্তু উয়েফার বর্ষসেরা হওয়ার জন্য তাদের পারফর্ম্যান্স যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়নি। তাই ৩১ আগস্ট মোনাকোয় উয়েফার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শেষ হাসি হেসেছেন নরওয়ের ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড হালান্ড।

গত দেড় দশক ফুটবল বিশ্ব শাসন করেছেন মেসি আর রোনালদো। তাদের পর বিশ্ব ফুটবলের পরবর্তী সম্ভাব্য শাসক হিসেবে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে নেইমার জুনিয়রের নাম। কিন্তু ইনজুরি-প্রবণ নেইমারের ক্যারিয়ারে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির ফারাক আকাশ-পাতাল। করিম বেঞ্জেমা, লুকা মদ্রিচ, রবার্ট লেভেন্ডস্কিরা বিক্ষিপ্তভাবে হানা দিয়েছেন দুই মহানায়কের দুর্গে। কিন্তু স্থায়ীভাবে হয়ে উঠতে পারেননি দুই মহানায়কের প্রতিদ্বন্দ্বী। সাম্প্রতিক সময়ে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ আকাশচুম্বী। ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গেছে। খেলেছেন টানা দুটি বিশ্বকাপ ফাইনাল। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ছিলেন সেরা উদীয়মান ফুটবলার। আর ২০২২ সালে জিতেছেন কাতার বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট। ফ্রান্সের ঘরোয়া ফুটবলেও দারুণ ধারাবাহিক এমবাপ্পে। পিএসজির ২৪ বছর বয়সী তারকা চারবার জিতেছেন ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের অ্যাওয়ার্ড। পাঁচবার জিতেছেন সেরা গোলদাতার গোল্ডেন বুট। 

অন্যদিকে হালান্ডের উত্থান উল্কার মতো। ২০১৯ সালের অনূর্ধ্ব-২০ ফিফা বিশ্বকাপে ৯ গোল করে বাগিয়ে নেন গোল্ডেন বুট। ২০২০ সালে জিতেছেন ইউরোপের সেরা তরুণ ফুটবলারের স্বীকৃতি গোল্ডেন বয় অ্যাওয়ার্ড। ২০১৭-১৮ মৌসুমে নিজ দেশের মল্ডে ক্লাবের হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ারে অভিষেকের পর করে ফেলেছেন ১৯০ গোল। কয়েক মৌসুমেই হালান্ড নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর স্ট্রাইকার হিসেবে। গোলমুখের সামনে ক্ষিপ্রতা, পজিশনিং সেন্স এবং নিখুঁত ফিনিশিং-----সবকিছুর সমন্বয়ে এই ফরোয়ার্ড হয়ে উঠেছেন প্রতিপক্ষের দুশ্চিন্তা আর মাথাব্যথার কারণ। ২০২০ সালে বরুশিয়ার হয়ে খেলার সময় থেকেই মূলত নজর কাড়েন হালান্ড। জার্মানির ক্লাবের হয়ে মাত্র আড়াই মৌসুমে ৮৯ ম্যাচে হাঁকিয়েছেন ৮৬ গোল। যা তাকে নিয়ে এসেছে পাদপ্রদীপের আলোয়। এমবাপ্পের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উচ্চারিত হতে থাকে তার নাম। আর ম্যানসিটির হয়ে প্রথম মৌসুমে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন এমবাপ্পেকেও। পেয়ে গেছেন ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //