কুলিরাও এমন ভাষা ব্যবহার করে না, আইনজীবীদের হাইকোর্ট

বিচারককে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২১ আইনজীবীকে আদালতে তলব করে তিরস্কার ও সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট।

আজ সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

আদালত বলেন, আপনারা (আইনজীবীরা) যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা খুবই অশালীন। এমনকি কমলাপুরের কুলি, এসএসসি পাস করা মানুষরাও এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করেন না। আপনাদের আচরণে পুরো আইনজীবী সম্প্রদায় লজ্জিত, আমরা বিব্রত।

শুনানির শুরুতে ২১ আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন ফকির সময় চেয়ে আবেদন জানান।

তিনি এর আগে, তলবকৃত তিনজনের তারিখের সঙ্গে অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানান। তখন হাইকোর্ট বলেন, ওটার সঙ্গে এটা ভিন্ন। আগেরটা অভদ্রতা আর এটা অশ্লীল।

হাইকোর্ট বলেন, মেট্রিক পাস লোকও এরকম কথাবার্তা বলে না। এটা কোনো আন্দোলনের ভাষা? এটা আদালত অবমাননার চেয়েও খারাপ অপরাধ। আদালতের মেসেজ হচ্ছে, আমরা এসব আইনজীবীদের লাইসেন্স আজীবনের জন্য ক্যান্সেল করতে পারি। আপনারা যেতে চাইলে আমরা অনেক দূর যেতে পারি, নামতে চাইলে অনেক দূর নামতে পারি।

এ সময় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আইনজীবীরা সময় চাইলে আদালত ২১ আইনজীবীকে আদালত অবমাননার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন।

এর আগে, গত ১০ জানুয়ারি এজলাস চলাকালীন জেলা জজের নামে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান প্রদান করে বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ মানহানির অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা আইনজীবী সমিতির ওই ২১ আইনজীবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। 

ওই তলবের পরিপ্রেক্ষিতে তারা আজ হাজির হন। আইনজীবীদের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল, ব্যারিস্টার সাঈদ আহমেদ রাজা।

এর আগে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই ঘটনায় বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের প্রতি ‘অশালীন আচরণের’ অভিযোগের জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদক (প্রশাসন)সহ তিন আইনজীবীকে ১৭ জানুয়ারি তলব করেন হাইকোর্ট। ওই দিন তারা হাজির হলে আইনজীবীদের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

জানা যায়, গত ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের গালাগাল এবং অশালীন আচরণের অভিযোগে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ অন্য আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর একটি চিঠি পাঠান বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুক।

এরপর বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। পরে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠাতে নির্দেশ দেন।

তারই ধারাবাহিকতায় বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদক(প্রশাসন)সহ তিন আইনজীবীকে আগামী ১৭ জানুয়ারি তলব করেন হাইকোর্ট।

সেই সঙ্গে এদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়। এরপর ৯ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে একটি চিঠি পাঠান।

তাতে বলা হয়, এজলাস চলাকালে জেলা জজ সম্পর্কে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এরপর ২১ আইনজীবীর নাম সংবলিত চিঠি প্রধান বিচারপতির অনুমতিক্রমে বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়। এরপর শুনানি নিয়ে ১০ জানুয়ারি ২১ আইনজীবীকে তলব করে আদেশ দেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //