হজ ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনের অনুভূতি

যদিও হজ ক্যাম্প আগেও দেখেছি। কিন্তু এর কার্যক্রম সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণভাবে অবগত ছিলাম না। হজ ক্যাম্পের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে স্কাউট দের উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয় তাও জানতাম না। হজ ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী রোভারদের যখন গ্রুপে বড় ভাইয়েরা নাম দিতে বলেন। তখন আমি এই ভেবে নাম দেই, যে যেহেতু হজ ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে যাই হোক না কেন হাজার হাজার হাজিদের সাথে সাক্ষাৎ তো করতে পারব। হাজার হাজার হাজিদের সেবা দেওয়া ও তাদের কাছ থেকে দোয়া নেওয়া। কিন্তু যাওয়ার পরে যে এত ভালোলাগা কাজ করবে কখনো কল্পনা করতে পারিনি। যাওয়া মাত্রই সবাই কেমন যেন আপন করে নিলো। মনে হচ্ছিল কত যুগ যুগ ধরে মানুষগুলো আমাকে চিনে। সবার ব্যবহার কত অমায়িক ছিল। দায়িত্বে থাকা স্যার, ম্যাম, বড় ভাই, পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রম আমাদের মুগ্ধ করেছেন। নিজেদের সন্তানদেরও মনে হয় কেউ এভাবে যত্ন করে না।

বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে আসা রোভারদের ব্যবহার ছিল অসাধারণ। তারা খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে। তাদের মধ্যে আমি যে জিনিসটা বেশি লক্ষ্য করেছি সেটা হচ্ছে হিংসা, অহংকার তাদের মধ্যে নেই। তিন দিনের জন্য যাওয়া হজ ক্যাম্পে গাড়িতে বসে ভাবছিলাম কিভাবে কাটবে সময়গুলো। যাওয়ার পরে সবার ব্যবহার দেখে মনে হলো তিনটি দিন নয় তিনটি প্রহর ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শেষ হয়ে গেল সময়। হজ ক্যাম্পে দায়িত্বরত সকল রোভার ছিল বড় হৃদয়ের অধিকারী। তারা সব কিছু ভাগাভাগি করে খেত। তারা সব সময় অন্যের সমস্যায় সাহায্য করেছে। কেউ নামাজ পড়তে গেলে বা খাবার খেতে গেলে তার পরিবর্তে অন্য রোভার দায়িত্ব পালন করেছেন স্ব ইচ্ছায় কোনো ধরনের সংকোচ বোধ তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। স্যার, ম্যাম ও বড় ভাই সব সময় আমাদের কাছে আসতেন এবং কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইতেন। কারো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক তার সমাধান নিশ্চিত করতেন। তারা শত অন্যায়ের পরেও আমাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করেছেন।কখনো চরা কথা বলেনি। 

সকল হাজি আমাদের জন্য দোয়া করেছেন। আমাদের কাজকে তারা স্যালুট জানিয়েছেন। অনেকেই আমাদের কাজের ধরন জানতে চেয়েছেন এবং বলার পরে তারা মুগ্ধ হয়েছেন। অনেক হাজি খুশি হয়ে বকশিস দিতে চেয়েছেন। কিন্তু রোভার সদস্য তা গ্রহণ না করে বলেছেন আমাদের জন্য দোয়া করবেন। সকল রোভার তার সাধ্যমত হাজিদের পছন্দের পাত্র হয়ে উঠতে চেয়েছেন। হাজিরা অসুস্থ হলে রোভার সদস্য তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। হাজিরা খুশি হয়ে অনেককে নাস্তা করিয়েছেন। এটা ছিল আমাদের জন্য বড় পাওয়া। হাজিদের ব্যবহার ছিল আত্মায় হিম শীতল বাতাস ছুয়ে যাবার মতো। রোভার ছেলেদের জন্য সংরক্ষিত ওয়াসরুম এবং বেসিন সুন্দর ছিল। কিন্তু দরজাগুলো একটু শক্ত ছিল যা সহজেই লাগানো যেত না। ঘুমানোর জন্য এসির ব্যবস্থা থাকলে ভালো হত। গরমে রোভারদের একটু কষ্ট হয়েছিল। দায়িত্ব পালনের পর যখন চলে এসেছি। দায়িত্বরত সকল রোভার সদস্যদের খুব বেশি মিস করছিলাম। ডাইনিংয়ে খাবার খেতে গিয়ে যেদিকে তাকাই সেদিকে রোভারদের চেনা মুখগুলো ভেসে উঠছিল। তাদের উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব তারা খুব সচেতনতার সাথে পালন করেছেন। সবাই অনেক দায়িত্ববান ছিল। সবাই দায়িত্ব নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। রোভারদের কথা স্মরণে দুই চোখ ভিজে জ্বল আসতে থাকে। অবশষে এই কথাই বলতে চাই। ভালো থেক রোভার মনে রেখ মোরে, দেখা হলে সালাম দিয়ে বুকে টেনে নিয় আমাকে।

লেখক: ইমন হাওলাদার, শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //