ষড়যন্ত্র করছিলেন প্রিন্স হামজা: জর্ডানের উপ-প্রধানমন্ত্রী

জর্ডানের সাবেক ক্রাউন প্রিন্স বা যুবরাজ প্রিন্স হামজা বিন হুসেইন অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী আয়মান সাফাদি।

প্রিন্স হামজার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রিন্স হামজা ও আরো কয়েকজন বিদেশি একটি দলের সাথে মিলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, প্রিন্স হামজা সরকারের বিরুদ্ধে উপজাতীয় নেতাদের দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন। এ ব্যাপারে অনেক দিন ধরেই তদন্ত চলছিল এবং ব্যাপারটি আদালতে তোলা হবে।

এর আগে এক ভিডিও বার্তায় প্রিন্স হামজা জানান, তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।

প্রিন্স হামজা জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সৎ ভাই।  

এর আগে প্রিন্স হামজার মা রানি নূর টুইটারে এক পোস্টে বলেন, অসৎ অপপ্রচারের শিকার সবাই ন্যয়বিচার পাবে ও সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে- তিনি এই প্রার্থনাই করছেন।

সাফাদি বলেন, প্রিন্স হামজার স্ত্রী প্রিন্সেস বাসমাকে বিমানে করে জর্ডানের বাইরে নিয়ে যাবার জন্যএকটি বিদেশি নিরাপত্তা সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি সংস্থাটির নাম বলেননি।

তিনি আরো জানান, মামলা করার বদলে প্রিন্সকে এসব কর্মকাণ্ড থেকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা হয়েছিল, তবে তিনি তাতে নেতিবাচক সাড়া দেন। তবে এখনো তার সাথে আলোচনা চলছে।

প্রিন্স হামজাকে গৃহবন্দি করার পাশাপাশি মোট ১৬ জন লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে - যার মধ্যে বাদশাহ আবদুল্লাহর এক উপদেষ্টা ও রাজপরিবারের একজন সদস্য আছেন। উচ্চপর্যায়ের এসব লোকদের গ্রেফতার করাকে এক ‘কথিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সাথে সম্পর্কিত’ বলে বলা হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রিন্স হামজা কিছু উপজাতীয় নেতার সাথে দেখা করেছিলেন- যাদের মধ্যে থেকে তিনি কিছু সমর্থন পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে প্রিন্স কোনো অন্যায় করার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন না।

প্রিন্স হামজা তার আইনজীবীর মাধ্যমে বিবিসির কাছে পাঠানো এক ভিডিওতে তার দেশের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অদক্ষতা ও হয়রানির অভিযোগ আনেন।

এদিকে মিশর, তুরস্ক ও সৌদি আরবের মতো আরব বিশ্বের আঞ্চলিক শক্তিগুলো জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও বাদশাহ আবদুল্লাহকে একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে অভিহিত করে তার প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছে।

জর্ডান দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ খুবই কম এবং তাদের অর্থনীতি কভিড-১৯ মহামারির কারণে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া প্রতিবেশি সিরিয়া থেকে প্রচুর শরণার্থীও জর্ডানে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

রাজপরিবারের ভেতরে উত্তেজনা

জর্ডানের এক সাংবাদিক রানা সোয়েইস বিবিসিকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই রাজপরিবারের ভেতরে উত্তেজনা চলছিল। সাবেক যুবরাজ হামজাকে জনপ্রিয় বলে মনে করা হয়। তার সাথে বাদশাহ হুসেইনের চেহারার অনেক মিল আছে, তিনি স্থানীয় উপজাতিগুলোর মধ্যেও জনপ্রিয়।

জর্ডানে মহামারি শুরু হবার পর থেকেই দেশটির শক্তিধর গোয়েন্দা সংস্থাকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল এবং এজন্য মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এর সমালোচনা করছিল। তবে জর্ডানে উচ্চস্তরের রাজনৈতিক লোকদের গ্রেফতারের ঘটনা খুবই বিরল।

বিবিসির বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার বলছেন, মনে হচ্ছে রাজপরিবারের এই সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এছাড়া দেশটির অর্থনীতি কভিড মহামারির আগে থেকেই খারাপ অবস্থায় ছিল এবং সেখানে এখন গণঅসন্তোষ বাড়ছে। দেশটির প্রয়াত বাদশাহ হুসেইনের ছেলে এখন যেভাবে ভিডিও বার্তায় সরকারের সমালোচনা করছেন- তা অনেকটা দুবাইয়ের বন্দী প্রিন্সেস লতিফার বার্তার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

গত শনিবার জর্ডানে আরো যারা গ্রেফতার হয়েছেন তার মধ্যে আছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসেম আওয়াদাল্লাহ ও রাজপরিবারের এক সদস্য শরিফ হাসান বিন জায়েদ।

কে এই প্রিন্স হামজা?

প্রিন্স হামজা হচ্ছেন প্রয়াত বাদশাহ হুসেইন ও তার স্ত্রী রানি নূরের সর্বজ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি ব্রিটেনের হ্যারো স্কুল ও স্যান্ডহার্স্টের মিলিটারি এ্যাকাডেমির গ্রাজুয়েট ওে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন। কাজ করেছেন জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনীতে।

তিনি বাদশাহ হুসেইনের প্রিয় পুত্র ছিলেন এবং ১৯৯৯ সালে তাকেই জর্ডানের যুবরাজ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাদশাহ হুসেইনের মৃত্যুর পর তাকে উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করা হয়নি, কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল - তার বয়স অনেক কম ও তিনি অনভিজ্ঞ। ফলে তার পরিবর্তে তার সৎ ভাই আবদুল্লাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং তিনি ২০০৪ সালে প্রিন্স হামজার যুবরাজ খেতাব বাতিল করেন। -বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //