উদ্বাস্তু জীবনে রাফার গানপাখিরা

গাজা উপত্যকার দক্ষিণতম শহর রাফা। আল-আওদা মসজিদের কাছে, রাফা শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি স্কুলের বাইরে দেয়ালে ঝুলন্ত খাঁচায় একটি ছোট্ট পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। এই স্কুলটি এখন ইসরায়েলি আগ্রাসনে বাস্তুচ্যুত লোকদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যুদ্ধের আগেও দীর্ঘকাল ধরে গানের পাখি- ক্যানারি, গোল্ডফিঞ্চ, লাভবার্ড এবং চড়ুই- তাদের সুরেলা ধ্বনির জন্য ফিলিস্তিনিদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। এখন তারা মানসিক স্বাস্থ্যের সহযোগী হয়ে উঠছে। আর এই গানপাখিরাও যে এ সময়ে গাজায় এক ভিন্ন কৌশলে গাজাবাসীর সংগ্রামের অংশীদার, তা বলাই বাহুল্য।

খান ইউনিস থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া রায়েদ আল-কুদরা বলেন, ‘ইসরায়েলি গোলাগুলির বিস্ফোরণের শব্দ ভয়ঙ্কর এবং ক্যানারির শব্দ ছাড়া শিশুদের আতঙ্ক কমানোর কোনো বিকল্প আমার জানা নেই।’ আল-কুদরা গত ১০ বছর ধরে পাখি পালন করছেন, দুই বছর আগে ২০২২ সালে শহরটিতে ইসরায়েলি বোমা হামলার সময় তার পরিবারের সদস্যদের পাখির গানের শক্তির সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়। এটি তাদের শান্ত থাকতে সাহায্য করেছে বলে জানান তিনি।

গাজা উপত্যকার ১০ লাখেরও বেশি শিশুর মধ্যে আল-কুদরার চার মেয়ে ও দুই ছেলেও রয়েছে, যাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনোসামাজিক সহায়তার তীব্র প্রয়োজন বলে মনে করছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। আল-কুদরা আরও বলেন, ‘আমার মেয়েরা পাখি পছন্দ করে কারণ তাদের রঙ নিরাপদ, শান্ত এবং আরও জীবন্ত বোধ করায়। ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে আমরা বাড়িতে পাখির উপস্থিতিকে বিনোদনের একটি বিকল্প উপায় হিসেবে বিবেচনা করি।’

বাস্তুচ্যুত হওয়ার কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও আল-কুদরা পাখির খোঁজে বারবার রাফা বাজারে ঘুরেছেন। কিছুদিন আগে তিনি এক বিক্রেতার কাছ থেকে তিনটি পাখি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। ওই বিক্রেতা গাজার অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে কম দামে পাখিগুলো বিক্রি করতে রাজি হন।

৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার বেশির ভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এতে প্রায় ২৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই শিশু ও নারী। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আরও হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাখি বিক্রেতা কামাল দেদার ‘বার্ডফিডের দাম কেজিপ্রতি সাত শেকেল (ইসরায়েলি মুদ্রা) থেকে বেড়ে প্রায় ৮০ শেকেল (প্রায় আড়াই হাজার টাকা) হয়েছে। গানের পাখি পালনের খরচ বেড়েছে, এদের দামও বেড়েছে, কিন্তু তাদের জনপ্রিয়তা কমেনি। ক্রেতারা এই কঠিন সময়ে প্রশান্তিদায়ক কণ্ঠের সান্নিধ্যে বেঁচে থাকার প্রেরণা পান। অনেক ক্রেতা সারাদিনে বিভিন্ন ধরনের সুর নিশ্চিত করতে একাধিক প্রজাতির পাখি ক্রয় করেন, কারণ কিছু পাখি দিনের বেলা ভালো গান গায়, আবার অনেকে রাতে কিচির মিচির করতেই বেশি পছন্দ করে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //