নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:০১ পিএম
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (মাউশি)
করোনার কারণে গত দুই বছর শিক্ষাব্যবস্থার অনেক ক্ষতি হয়েছে। নতুন বছর থেকে ঘাটতি পূরণে নতুন শিক্ষা কারিকুলামকে সামনে রেখে এগুবে সরকার। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সব ক্ষেত্রে বদলে যাবে শিক্ষা ব্যবস্থা। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ৬০টি স্কুলে প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পাইলটিংয়ের মাধ্যমে। এরপর ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে ২০২৫ সালে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে জোর দেয়া হয়েছে ধারাবাহিক মূল্যায়নে (শিখনকালীন)। অর্থাৎ মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে।
বিদ্যমান পাঠ্যক্রম অনুযায়ী, প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মোট চারটি পাবলিক পরীক্ষায় (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট, এসএসসি ও এইচএসসি) অংশগ্রহণ করতে হয় শিক্ষার্থীদের।
নতুন কারিকুলামে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। এর মধ্যে পাঁচ বিষয়ে হবে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) এবং বাকি পাঁচ বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা। এ ছাড়া একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আলাদা দুটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের একটি বড় দিক হলো পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা কমানো এবং শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বাড়ানো (শিখনকালীন)।’
হঠাৎ করে দশম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়বে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন শিক্ষাক্রমের ডিজাইন এমনভাবে করেছি যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষাভীতি থাকবে না। নতুন কারিকুলামে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষাই রাখা হয়নি।
‘এর পরির্বতে এ তিন শ্রেণিতে হবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন)। এ ছাড়াও দশম শ্রেণিতে ১০টি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বাকি পাঁচ বিষয় হবে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন)।’
তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ দুটি শ্রেণিতে আলাদা করে পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।’
নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার সংখ্যা কমানোর উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলাম পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা কমানোর জন্য। সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে নতুন কারিকুলামে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়নের যে কথা বলা হচ্ছে, তাতে যেন কোনো ঘাটতি না থাকে, এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
পাবলিক পরীক্ষা কমানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আরও গবেষণা করার ওপর জোর দেন সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রিন্সিপাল ব্রাদার লিও পেরেরা।
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা কমানোর উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ডে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ শ্রেণিতে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমাদের শিক্ষার্থীদের মাইন্ড সেট পরীক্ষাকেন্দ্রিক পড়াশোনা করার। ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর জোর দেয়ার বিষয়টি যুগোপযোগী। তবে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আরও বেশি গবেষণা করার প্রয়োজন আছে।’
জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমের আরও একটি বড় পরির্বতন হলো নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন তুলে দেয়া হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা বিভাগ বিভাজন (বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায়) করবে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে। অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অভিন্ন ১০টি বিষয়ে পড়ানো হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ে কোন বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নে ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘বিষয়বস্তু উপস্থাপনের ধরনে বড় পরিবর্তন আসবে। আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীরা যেন সহজে শিখতে পারে- এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে। এ ছাড়া এতে তথ্য ও তত্ত্বগত বিষয় কমিয়ে ব্যাবহারিক শিক্ষায় জোর দেয়া হচ্ছে।’
কবে নাগাদ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে- এমন প্রশ্নে ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৫ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে। এর জন্য আমরা একটি রোডম্যাপ করেছি।
‘রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। এরপর ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। আর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।’