কর্পোরেট কর্মজীবীদের ইফতার পার্টি

সামসুন নাহার স্মৃতি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৪২ পিএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৫০ পিএম

খেজুর। ছবি: সংগৃহীত

খেজুর। ছবি: সংগৃহীত

সারাদিন রোজা রেখে অফিস-আদালত, স্কুল কিংবা ব্যাংকে যারা জব করছেন তাদের ক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক পরিশ্রম বেশি হয়। তাই এ পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখেও মানসিকভাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক থেকে অফিসিয়াল কর্মকাণ্ড চালাতে পারেন তার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনার। সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে রোজা রাখার জন্য এবং কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করার জন্য প্রয়োজন অস্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে ইফতার ও সেহেরির আয়োজন ঠিক করা। 

সেহরিতে খেতে পারেন সুষম ও সহজপাচ্য খাবার। সহজে হজম হয় এমন খাবার দিয়ে সেহেরি করলে বদহজম কিংবা গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন খুব সহজে। অনেকে আছেন সেহরিতে গুরুপাক খাবার খেয়ে পরের দিন অফিস করা তাদের জন্য খুব মুশকিল হয়ে পড়ে বিশেষ করে বদহজম হতে পারে, ডায়রিয়াও হতে পারে। হতে পারে লুজ মোশন কিংবা বুক জ্বালাপোড়াও হতে পারে। তাই যারা কর্মজীবী তাদেরকে সেহেরিতে সুষম এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। তাহলে তারা দিনে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে অফিস করতে পারবেন। অবশ্য একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে শরীর যাতে কোনোভাবে ডিহাইড্রেড না হয়ে যায় অর্থাৎ শরীর যেন পানি শূন্য না হয়ে যায় এই জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।

অনেকেরই অফিসে ইফতার করতে হয় কিংবা অফিসে বিভিন্ন ধরনের ইফতার পার্টি থাকে কিংবা অফিসের বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইফতার পার্টির আয়োজন করতে হয়। যেসব কর্পোরেট ব্যক্তিগণ অফিসে ইফতার করেন কিংবা বিভিন্ন ধরনের ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণ করেন তাদের জন্য ইফতারে খাবারে মেনু সিলেক্ট করা বেশি জরুরি। কারণ এসব ইফতার পার্টিতে বেশিরভাগ সময়ে হিসেবে থাকে অতীব মিষ্টি-কার্বনেটেড পানীয়। যেমন সফটিং সোডা পানি, কৃত্রিম ফলের রস কিংবা বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংকস। সারাদিন রোজা রাখার পর এসব পানীয় গ্রহণ করা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

কেননা দীর্ঘ ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা রোজা রাখার পর আমাদের শরীর এমনিতে পানি শূন্য হয়ে যায় তার মধ্যে অতিরিক্ত চিনি যুক্ত কার্বনেটের পানি কিংবা কৃত্রিম ফলের রস খেলে আমাদের শরীর ডিহাইড্রেড হয়ে যেতে পারে। কারণ এই সমস্ত অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়গুলো আমাদের শরীরের কোষের পানি শুষে নেয়। ফলে শরীর পানি শূন্য হয়ে পড়ে খুব সহজে। অতি একটা চিনি যুক্ত শরবত কিংবা সফট ড্রিঙ্কসগুলো খেলে আমাদের বাড়তি ক্যালরিও জমা হয়ে যায়। শরীরে যার ফলে খুব দ্রুত ওজন বেড়ে যেতে পারে। শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগা, অবসাদ লাগা কিংবা  কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

তাই এইসব কর্পোরেট ইফতার পার্টিতে শরবত হিসেবে রাখতে পারেন-

n অল্প চিনি যুক্ত কিংবা চিনিমুক্ত লেবুর শরবতের সঙ্গে চিয়া সিড ও ভুসি মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।

n কচি ডাবের পানি

n টক দই, শরবত কিংবা টক দইয়ের লাচ্ছি

n তাজা ফলের রস

n বেলের শরবত ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর পানীয়।

এইসব পানীয় পান করলে আমাদের তৃষ্ণা মিটবে। একইসঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যাবে। যা আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

এতসব শরবত যদি রাখা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি রাখাটাই শ্রেয়।

সারাদিনে রোজা রাখার পর এই ১ টা বা ২ টা খেজুর ই সারাদিনের ক্লান্তি  দূর করে দিবে নিমিষেই।কারণ খেজুর রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুক্র এবং এর সাথে রয়েছে পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন যা আমাদের শরীরে এনার্জি প্রদান এর পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা দূর করতে পারে খুব সহজে।

ইফতার পার্টিতে বাজারের খোলা ভাজাপোড়া না রেখে এর পরিবর্তে যদি সম্ভব হয় দই, চিড়া, কলা কিংবা দুধ, কলা, কনফ্লেক্স সাথে খেজুর ও বাদাম রাখা যেতে পারে। এছাড়া সাগু দানার ফ্রুটস কাস্টার্ড রাখা যাবে। এসব খাবার খেলে বদহজম কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেবে না। দই, চিড়া, কলা কিংবা দুধ, কলা, ওটস যদি খাই তাহলে সারাদিনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে খুব সহজে।

ডেজার্ট হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ফলের সালাদ কিংবা ফ্রুট কাস্টার্ড রাখা যেতে পারে। যেমন, অল্প চিনি যুক্ত পুডিং কিংবা সাবুদানার পায়েস, টক দই কিংবা হালকা টক মিষ্টি দই প্রভৃতি।

এভাবেই অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবারে পরিবর্তে খাবারের সমন্বয়ে রেডি করতে পারেন আপনার অফিসের ইফতার পার্টি। এতে করে সবাই যেমন পার্টিটি উপভোগ করতে পারবে তেমনিভাবে থাকবে সুস্থ ও নিঃরোগ। যার ফলে ইফতার পার্টি করেও পরের দিন অফিস করতে কারো কোন সমস্যা হবে না।

লেখক: ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিষ্ট অ্যান্ড ডায়েটিশিয়ান, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh