জেগে উঠছে ঘরোয়া ফুটবল

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান প্রজন্মের কাছে ফুটবল মানেই বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লড়াই। তাদের মনন আর চিন্তায় কেবল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর লিওনেল মেসি। অথচ একদা বাংলাদেশের ফুটবলে মোহামেডান আর আবাহনী ছিল প্রথম এবং শেষ কথা। 

পেলে-ম্যারাডোনা কিংবা রোনালদো-মেসি নয়। তর্ক বেধেছে সালাউদ্দিন, বাদল, চুন্নু, মোনেম মুন্না, কায়সার, সাব্বির, আসলামদের মধ্যে কে সেরা- তা নিয়ে। উপচে পড়া গ্যালারিতে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে হাঙ্গামা না হলে তো ম্যাচই জমতো না যেন!  

ঘরোয়া ফুটবলে মোহামেডান-আবাহনী দ্বৈরথ নিয়ে উন্মাদনা এখন স্রেফ স্বপ্ন।  হালে বসুন্ধরা কিংসের রাজকীয় উত্থানে ঐতিহ্যবাহী দল দুটি হয়ে পড়েছে পার্শ্বচরিত্র। আবির্ভাবেই টানা চারটি পেশাদার লিগ শিরোপা জেতা বসুন্ধরা দেশের ঘরোয়া ফুটবলে প্রতিষ্ঠা করেছে একক আধিপত্য। ঢাকা আবাহনী  পেশাদার লিগে সর্বোচ্চ ৬টি শিরোপা জিতেছে। কিন্তু বিগত চার বছরে  ধানমন্ডির অভিজাত ক্লাবটি জিতেছে একটি করে ফেডারেশন আর স্বাধীনতা কাপ। তুলনায় মোহামেডান আরও বিবর্ণ। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া পেশাদার লিগে সাদাকালো শিবিরের কোনো শিরোপা নেই। ২০২৩ সালে ফেডারেশন কাপ দিয়ে মোহামেডান দীর্ঘ ৯ বছরের শিরোপা বন্ধ্যত্ব ঘুচিয়েছে।  চলতি মৌসুমের শুরুতেও স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে ওঠা মোহামেডান দিয়েছে পুনর্জাগরণের ইঙ্গিত। আবাহনী আর বসুন্ধরার বাইরে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব তিনবার আর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র একবার পেশাদার লিগ  জিতেছে। কিন্তু তারাও এখন সাফল্যের জন্য হাহাকার করছে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, ঘরোয়া ফুটবলের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় কেন? কারণ বহুবিধ। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) দায়সারাভাবে ঘরোয়া মৌসুম শেষ করার প্রচেষ্টায় কম সমালোচিত হয়নি। আছে ভেন্যু নিয়েও তুমুল অভিযোগ।  সংস্কারের নামে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে ফুটবল নির্বাসিত বহুদিন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন ভেন্যু নিয়েও আছে অভিযোগ। ইতিপূর্বে বালু ভরাট করে প্রায় ঘাসহীন ‘অযোগ্য’ টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে লিগ আয়োজনকে বাফুফের তামাশা বললেও ভুল হবে না। চলতি লিগের খেলা হচ্ছে ময়মনসিংহ, মুন্সীগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী আর ঢাকায়। নামে ‘পেশাদার’ হলেও লিগের ১০ দলের মধ্যে বসুন্ধরা কিংস ছাড়া কারও নিজস্ব  স্টেডিয়াম নেই। মোহামেডানেরর মতো বড় দলের নেই নিজস্ব অনুশীলন মাঠ।  যাযাবরের মতো যখন যেখানে সুযোগ মেলে, অনুশীলন করে সাদাকালোরা- ভাবা যায়! 

বাফুফে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক হতে পারেনি। ঘরোয়া ফুটবলে  প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগে। গোললাইন কিংবা  ভিডিও রেফারিং প্রযুক্তি এখনো স্বপ্ন। তবে আশার কথা হচ্ছে, ২০২৩-২৪  মৌসুমে পেশাদার লিগ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বাফুফে সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান। বসুন্ধরা কিংসের সফল সভাপতি হিসেবে দারুণ আলোচিত তিনি। তার উদ্যোগে পেশাদার লিগে যোগ হয়েছে কিছু আকর্ষণীয় বিষয়। প্রতি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় আর মাসের সেরা রেফারিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে পুরস্কার। যা দিচ্ছেন সাবেক ফুটবলাররা। এতে সাবেক ফুটবলাররা সম্মানিত হচ্ছেন, উৎসাহ পাচ্ছে বর্তমানরা। দেওয়া হচ্ছে মাসের সেরা রেফারিকে আর্থিক পুরস্কার। অথচ একদা বাফুফের কাছে ‘বকেয়া ম্যাচ  ফি’ আদায়ে আন্দোলন করতে হয়েছে রেফারিদের! এ ছাড়া প্রিমিয়ার লিগের সব তথ্য সংগ্রহে চালু হয়েছে ওয়েবসাইট। 

তবে ফুটবলের প্রাণ হচ্ছে দর্শক। মোহামেডান আর আবাহনী ছাড়া কোনো ক্লাবের বড় সমর্থকগোষ্ঠী নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বসুন্ধরা কিংস নেমেছে নিজস্ব  সমর্থক তৈরির প্রয়াসে। কিংসের তরুণ ভক্তদের কালার স্মোকের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে ফায়ারওয়ার্ক্স (পাইরো), ভুভুজেলা, ড্রামের মাধ্যমে আলট্রাসদের সরব উপস্থিতি মাঠে আলাদাভাবে নজর কাড়ে। মোহামেডান আর আবাহনীর সমর্থকদের রয়েছে একাধিক সংগঠন। যারা প্রিয় ক্লাবের খেলা দেখতে নিয়মিত দেশের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকছে। দিন দিন বাড়ছে   গ্যালারিতে দর্শক উপস্থিতি। 

ঢাকা লিগে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে টানা ছয়টি লিগ শিরোপা জেতার কৃতিত্ব সম্রাট হোসেন এমিলির। তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, “তারকা খেলোয়াড়  সৃষ্টি না হলে মাঠে দর্শক আসবে না। ‘আইকন’ খেলোয়াড় থাকতে হবে। যাদের খেলা দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে দর্শক। একটা সময় বড় দলের প্রায় সব খেলোয়াড়ের নাম মুখস্থ ছিল দর্শকদের। এখন জাতীয় দলে খেলা কয়জন খেলোয়াড়ের নাম মানুষ বলতে পারবে?” এমিলি ভুল বলেননি। বেশ কয়েক বছর ধরে জামাল ভূঁইয়া ছাড়া এক নামে চেনার মতো বাংলাদেশে কোনো  ফুটবলার খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে মোরসালিন আর রাকিবদের মধ্যে বড় তারকা হওয়ার আভাস মিলেছে। তাদের খেলা দেখতে হলেও মাঠে দর্শক আসবে- আপাতত চাওয়া এটাই।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh