কালীদাহ সাগরে ১৫০ বছর ধরে পালিত হচ্ছে বারুনী স্নান

রফিক মজিদ, শেরপুর

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২১ পিএম

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বারুনী স্নান। ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বারুনী স্নান। ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা এলাকায় ঐতিহ্যবাহী কালীদহ সাগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বারুনী স্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ স্নান ও মেলা ১৫০ বছর যাবত পালিত হচ্ছে বলে স্নানে আগত মুরুব্বিরা জানায়।

প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী বৈদিকমন্ত্র উচ্চারণসহ কালিদহ সাগরে পূণ্য স্নান করেন। ওইসময় পূণ্যার্থীরা পূর্ব পুরুষের আত্মার শান্তির জন্য তর্পণ করেন। এতে হাজারও ভক্তকুল ও পূণ্যার্থী অংশ নেন।

জানা যায়, প্রায় দেড়শ বছর আগে থেকে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের গড়জরিপা গ্রামে কোচ সামন্ত আমল থেকে ঐতিহ্যবাহী গড়জড়িপা মাটির দুর্গ সংলগ্ন কালীদহ সাগরে বারুনী স্নান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো জেলা ও জেলার বাইরে থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থীরা ভোর থেকেই দলে দলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন ওই কালিদহ সাগর পাড়ে। কিন্তু বর্তমানে ওই কালীদহ সাগর শুকিয়ে যাওয়ায় এর জৌলুস কমে গেছে। এরপরও এখনো এখানে অনেক পূণ্যার্থী তাদের নানা মনোবাসনা পূরণে এবং পূণ্যের আশায় ছুটে আসেন এই কালিদহ সাগরে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে স্নান ও পূজা অর্চনা শুরু হয়। তবে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই দিনের বিভিন্ন সময়ে এসে স্নানের কাজ সারেন। পূণ্যার্থীদের বিশ্বাস, কালিদহ সাগরে স্নান করলে মনের সকল কুটিলতা, সংকীর্তনতা ও পাপ মোচন হয়। স্নান শেষে পূণ্যার্থীগণ সাগরপাড়ে গঙ্গাপূজা ও সংকীর্তনের আয়োজন করেন। স্নান ও পূজা অর্চনাকে কেন্দ্র করে কালিদহ সাগরের পাশে মেলা বসে। মেলায় নানা পণ্য ও মুখরোচক খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।

প্রতিবছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে বারুণী স্নান হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

স্নানের মাধ্যমে পূণ্য লাভের আশায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক ভক্ত ও পূণ্যার্থী ঐতিহ্যবাহী ‘কালিদহ সাগরে’ এসে সমবেত হন।


ফুল, ধান-দুর্বা, তুলসিপাতা, মাটি, কলা, ডাবসহ নানা উপাচার নিয়ে পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত পাপ মোচন ও মনোবাসনা পূরণের জন্য স্নান সম্পন্ন করেন ভক্ত ও পূণ্যার্থীরা।

ভোর থেকেই ঢাকের বাদন, উলু ধ্বনী ও কাসর ঘণ্টার শব্দে বারণী স্নানের স্থান ছিল মুখরিত।

স্নান উপলক্ষে কালিদহ সাগর তীরে গঙ্গাপূজা হয়। পূজা শেষে পূণ্যার্থীদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

এ স্নানের আয়োজক দুলাল চন্দ্র সাহা জানায়, আমার বাপ দাদার আমল থেকে এ স্নানের আয়োজনের সাথে জড়িত। তাই বংশানুক্রমে আমি এর দায়িত্ব নিয়ে সম্পূর্ণ নিজ খরচে স্নান ও গঙ্গা পূজার নানা আয়োজন করে থাকি। তবে ওই এলাকায় রাস্তার সমস্যার জন্য স্নানে আগত ভক্তকুলদের একটু সমস্যা হয়ে থাকে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh