কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে রাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪, ০৩:১৮ পিএম

রাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। রাবি প্রতিনিধি

রাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। রাবি প্রতিনিধি

হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। 

কর্মসূচিতে বক্তারা সরকারি চাকরিতে সবধরনের কোটা বাতিলের দাবি জানান। মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের চাকরি না দিয়ে বৈষম্যের সৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আঠারোর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘মেধাভিত্তিক নিয়োগ চাই, প্রতিবন্ধী ছাড়া কোটা নাই’, ‘সকল কোটা বাতিল হোক, মেধাবীদের চাকরি হোক’, ‘শেখ হাসিনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ প্রভৃতি সম্বলিত প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে পপুলেশন সাইন্স এবং হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আমানুল্লা আমান বলেন, ২০১৮ সালে ঢাবি, রাবি, চবিসহ সারা বাংলায় কোটার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যদি সোনার বাংলা গড়তে হয় তাহলে কোটা প্রথা বিলুপ্ত করা হবে। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল হাইকোর্টে রিট করে আবারও কোটা ব্যবস্থা চালু করেছে। যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক, এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমরা আমাদের বাবা মায়ের ধান বিক্রির টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি। আমাদের পিতামাতার স্বপ্নকে নিয়ে কোন ছেলে খেলা আমরা কখনোই মানবো না।

আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, পাকিস্তান আমলের যে বৈষম্য সৃষ্টির ফলে আমাদের যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই বৈষম্য যদি তাদের প্রজন্মের মাধ্যমে পুনরায় ফিরে আসে সেটা মেনে নেওয়া যায় না; তা হবে লজ্জার। প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নারীদের জন্য কোটা বরাদ্দ আছে, তবুও আমি এই কোটার বিরোধিতা করছি। কারণ আমার মধ্যে যদি মেধা-দক্ষতা থাকে তাহলে নিজ যোগ্যতায় আমি চাকরি অর্জন করতে পারব। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মেয়ের সে সক্ষমতা আছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো কোনো কোটার মাধ্যমে দেশ শাসনে আসেনি। তিনি তার নিজ যোগ্যতায় এখানে এসেছেন। এখানে আসার জন্য তার কোনো কোটার দরকার হয়নি। তবে সরকারী চাকরিতে কেন কোটার দরকার হবে?

ইনফরমেশন সায়েন্স এবং লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান সরকার এমন কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না, যে সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করতে চান তাহলে তাদের স্বর্ণখচিত আবাসনের ব্যবস্থা করে দেন, তাদেরকে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা সম্মানী দেন। বাংলাদেশের কোন ছাত্রসমাজ তার বিরুদ্ধে কথা বলবে না। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীর মেধার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোটার  বৈষম্যের সৃষ্টি করবেন না। তাহলে ছাত্র তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলবে। বাংলাদেশ বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি পেতে ১৯৭১ সালে যে রক্ত দিয়েছিল কিন্তু আজ ২০২৪ সালে এসে এই বৈষম্যের স্বীকার হতে যাচ্ছে যা কোন সাধারণ শিক্ষার্থী মেনে নিবে না।

এসময় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এহসানুল মারুফের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বুধবার (৫ জুন) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh