রাখাইনে ‘গণহত্যার’ প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিশন

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘যুদ্ধাপরাধ’ খুঁজে পেলেও ‘গণহত্যার’ প্রমাণ পায়নি বলে জানিয়েছে সরকারি তদন্ত কমিশন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবিষয়ে মিয়ানমারের দিকে আঙ্গুল তুললেও এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি খুঁজে পায়নি বলে প্যানেলটি গতকাল সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিবৃতিতে জানিয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে রাখাইনের সাড়ে ৭ লাখ সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। 

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়াসহ তাদের নারীদের গণধর্ষণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে সেসময় রাজ্যটিতে ‘গণহত্যার চেষ্টায়’ নির্বিচারে রোহিঙ্গা হত্যা হয়েছে এবং শতশত রোহিঙ্গা অধ্যুষিত পুড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। 

জাতিসংঘ তদন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, একাধিক পক্ষ ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত সেসব যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িত ছিলো। সেসময় সেখানে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে নিরাপরাধ গ্রামবাসীকে হত্যা করে তাদের বাড়ি-ঘর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে মিয়ানমারের সরকারি প্যানেল তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। যেখানে গ্রামবাসী ও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা ৩০টি পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়েছিলো এবং তারা তাদের ওপর হামলা চালাতে উস্কানি দিয়েছে। 

এছাড়া প্রতিবেদনটিতে, পুরো পরিস্থিতিকে একটি ‘আন্তঃদলীয় সশস্ত্র সংঘর্ষ’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যেভাবে ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে রাখাইনে সেরকম কোনো হত্যাকাণ্ড অথবা বাস্তুচ্যুত করা অথবা পরিকল্পিতভাবে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মিয়ানমার সরকার এই তদন্ত কমিশনটি ২০১৮ সালে গঠন করতে বাধ্য হয়। কমিশনে দুইজন মিয়ানমারের ও দুইজন বিদেশি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। 

প্যানেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনটি মিয়ানমার সরকারকে দেয়া হয়েছে। তবে এখনো নিশ্চিত নয় কবে এটি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।

এ ব্যাপারে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) জানিয়েছেন, সরকার কমিশনের এই রিপোর্টের সঙ্গে একমত। এখন পরবর্বতী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এই রিপোর্ট সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হবে। 

তিনি এই রিপোর্ট সেনাপ্রধানের কাছে পাঠাবেন। যেন সেনাবাহিনী তাদের চলমান তদন্ত প্রক্রিয়া আরো তরান্বিত করতে পারে। এই রিপোর্টের উল্লেখযোগ্য অংশ সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

এর আগে রাখাইনের গু দার পিন গ্রামে সংঘটিত অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এক কোর্টমার্শালের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রেজিমেন্টের কয়েকজন অফিসার ও সৈনিককে শাস্তি দিয়েছিলো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //