Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

ঢাকার ৫০ শতাংশ দূষণ দেশের বাইরে থেকে আসে : জিয়াউল হক

Icon

আবুল বাসার সাজ্জাদ

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৪০

ঢাকার ৫০ শতাংশ দূষণ দেশের বাইরে থেকে আসে : জিয়াউল হক

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নাম প্রায়ই শীর্ষ দূষিত দেশের তালিকায় উঠে আসে। এই বাস্তবতায় পরিবেশ অধিদপ্তর কীভাবে কাজ করছে, কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী-এসব জানতে সাম্প্রতিক দেশকাল কথা বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা শাখার পরিচালক মো. জিয়াউল হকের সঙ্গে। তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের দায়িত্বেও রয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশকাল নিউজের রিপোর্টার আবুল বাসার সাজ্জাদ।


বাংলাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা প্রতিবছরই বেড়ে চলছে, মূল কারণগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?

দেশের বায়ুদূষণের উৎস দুটি। একটি অভ্যন্তরীণ, অন্যটি হচ্ছে ট্রান্সবাউন্ডারি বা দেশের বাইরে থেকে আসে। এখানে দেশের ভেতরের দূষণ, যেমন-বর্জ্য পোড়ানো, ইটভাটা, ধুলাবালি, রান্নার ধোঁয়া ও গাড়ির কালো ধোঁয়াসহ নানাভাবে বায়ুদূষণ হয়। এই অভ্যন্তরীণ উৎস সারা বছরই আছে। তবে বেশি হয় শুষ্ক মৌসুমে। আর শুষ্ক মৌসুমে বেশি হয় ট্রান্সবাউন্ডারি দূষণ। এই সময়ে ঢাকার বাতাসে ট্রান্সবাউন্ডারির দূষণ অন্তত ৫০ শতাংশ যোগ হয়।

পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসা (ট্রান্সবাউন্ডারি) দূষণ আমাদের বায়ুমানকে কীভাবে প্রভাবিত করে? এটি মোকাবিলায় কূটনৈতিক বা আঞ্চলিক সহযোগিতা কীভাবে বাড়ানো যায়? 

বায়ু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় প্রবাহিত হয়। এভাবে পাকিস্তানের লাহোর থেকে উৎপত্তি হয়ে ভারত দিয়ে হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে উত্তরবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগর দিয়ে বেরিয়ে যায়। সেই দূষণ বাংলাদেশের বাতাসকে আরো দূষিত করে। এই দূষণের কারণে ঢাকার চেয়ে  রংপুরে বার্ষিক দূষণ বেশি দেখায়। ঢাকায় যদি গড়ে ৯৪ থাকে, রংপুরে ১১০ হবে। এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে অনেকের মনে, রংপুর কেন দূষিত? রংপুর তো ঢাকার মতো ঘনবসতি না, সেখানে এত যান চলাচল নেই, দূষণের উৎস কম। দূষণের কারণ হচ্ছে ট্রান্সবাউন্ডারি। আমাদের একটি ওয়েবসাইট আছে, সেখানে দেখা যায় কালো মেঘ লাল হয়ে গেছে। এটি অক্টোবর-নভেম্বর থেকে শুরু হয়। এই দূষিত বাতাস কেউ বলছে ৪৫ শতাংশ, কেউ বলছে ৫০ শতাংশও। এ ছাড়া ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন আমাদের দেশ কত পার্সেন্ট ট্রান্সবাউন্ডারি দূষণের আওতাভুক্ত। ভারতও কিছুটা প্রভাবিত হয়। আবার তারাও দূষণের জন্য দায়ী, এটি তারা মেনে নিয়েছে এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে। পরিবেশ দূষণ রোধে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে বাজেট ও লোকবল সংকট রয়েছে।

সরকারি পর্যায়ে এই ট্রান্সবাউন্ডারি দূষণ বন্ধে কী কী উদ্যোগ বা সমঝোতা রয়েছে? এর বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর।

এটি তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নাই। ওপর থেকে আসছে, কোনো বাউন্ডারির সুযোগ নেই। এটি গোড়ায় যদি না কমানো যায়, দেশে কমানো যাবে না। এটি প্রায় ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। আর ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার ওপরে উঠে প্রাইমারি থেকে সেকেন্ডারি পিএম বা পার্টিকল দূষণে রূপ নেয়। এটির জন্য প্রয়োজন কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। তবে এটির জন্য উদ্যোগ আছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও ইসিমোডর। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের সমন্বয়ে একটি সংস্থা ইসিমোড। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও ইসিমোডের যৌথ উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার বায়ুদূষণ কমাতে কো-অর্ডিনেশন কীভাবে করা যায়, টেকনিক্যাল সাপোর্ট কীভাবে বাড়ানো যায়-এসব বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে ভুটানে একটি সম্মেলন হবে। আমিও যাব ওখানে। ভারত-পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এখানে আসবেন।

এই ট্রান্সবাউন্ডারি বায়ুদূষণ তো হঠাৎ করে বন্ধ করার সুযোগ নেই। কারণ আন্তর্জাতিক কোনো আইনে এখানে ধরার সুযোগ নেই। এ জন্য কো-অপারেশনের মাধ্যমে কমানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। জাতিসংঘের ইস্কেপ এটি নিয়ে কিছুটা কাজ করেছে, তবে এটি তাদের মাথাব্যথার কারণ না হওয়ায় তেমন গুরুত্ব নেই। এটি তো শুধু দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশের সমস্যা। তাই নিজেদের উদ্যোগেই এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও নেপাল-এই চার দেশ একটি রোডম্যাপে সাইন করে বলেছিল, নিজ নিজ দেশের সরকারের অনুমোদন নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করবে। তো এটির চলমান প্রক্রিয়াটি হচ্ছে ভুটানের ডিসেম্বরের সম্মেলন। এটি ২০২২ সাল থেকেই চলছে।

দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর কী কী কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে? সেগুলোর ফলাফল কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

দূষণ রোধে আমরা ঢাকায় ব্যবস্থা নিয়েছি। সাভার উপজেলায় প্রচুর ইটভাটা রয়েছে, আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সব বন্ধ করে দিয়েছি। এখানে বায়ুদূষণের মাত্রাও অনেক বেশি ছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দৈনিক ট্রান্সপোর্টের বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে ঢাকায় আটটি অভিযান পরিচালনা করছে। আর বিআরটিএ তো আছেই। কনস্ট্রাকশনের দূষণের বিরুদ্ধেও মোবাইল কোর্ট দিনরাত কাজ করছে। এ ছাড়া সারা দেশে, বিশেষ করে বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে এটি অ্যাক্টিভলি কাজ করছে।

আগামী দিনে দূষণ নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো নতুন প্রকল্প বা নীতিমালা প্রণয়নের পরিকল্পনা আছে কি?

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান) অলরেডি ডেভেলপ করা হয়েছে। এটির বিধিমালায় একটি কমিটি আছে। ক্যাবিনেট সেক্রেটারি এটির সভাপতি, বিআরটিএ প্রধানসহ ১৩ জন সচিব এর মেম্বার। গত বছর তিনটি মিটিং হয়েছে, সেখানে এই বিধিমালা বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া এটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের ছোট একটি অংশ ৭০ মিলিয়ন ডলার পরিবেশ অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করবে। এর মধ্যে ৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে এনভায়রনমেন্ট ফান্ড হবে। সেটি থেকে কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া হবে ম্যানেজমেন্টের জন্য। আর ২০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট করা হবে। 

এ ছাড়া বড় একটা পার্টের কাজ করবে বিআরটিএ, আরেকটি বড় অংশের কাজ করবে ডিটিসিএ। বিআরটিএ গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দিতে এয়ার ইমিশন টেস্ট করার জন্য সারা দেশে টেস্ট সেন্টার স্থাপন করবে, আর ডিটিসিএ রাস্তাগুলোতে কোন রোডে গাড়ি চলবে, যাত্রীরা কোথায় নামবে, আর ২৫০টি ইলেকট্রিক গাড়ি কিনবে।

এদিকে দেশের যেসব বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি আছে, যেমন স্টিলমিল-ওদের চিমনি যেখানে দূষণ করছে, সরাসরি সেখানে আমাদের টিম থাকবে। এ ছাড়া দেশের কোন কোন সোর্স থেকে দূষণ হয়, কতটুকু হয়, এই তথ্য স্পেসিফিক আকারে তৈরি করা হবে।

দূষণ উৎস নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ের অভিযান থাকা সত্ত্বেও দূষণ কেন কমছে না বলে মনে করেন।

ঢাকায় আটটি মোবাইল কোর্ট দিন ও রাতে কাজ করছে। ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণে সাভার উপজেলার সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে এই কার্যক্রম চলমান আছে। দূষণ দিনকে দিন কিন্তু কমছে। কমছে না বিষয়টি এ রকম না। 

বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। এই সংকটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি?

বায়ুদূষণের ফলে স্বাস্থ্যগত সমস্যার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল যেন মানুষকে সচেতন করে। তারা একটি নীতিমালাও করছে। তিন-চার মাস আগে ইউনিসেফের এক প্রোগ্রামে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বায়ুদূষণ কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে ব্যাপারে তারা উদ্যোগ নিচ্ছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দূষিত দেশগুলোর একটি। এখান থেকে মুক্তি পেতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে কী ধরনের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ জরুরি বলে আপনি মনে করেন?

বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্টের টার্গেট আছে ২০৩০ সাল। পরবর্তী সময়ে আরেকটি মধ্যমেয়াদি টার্গেট ২০৩৫-এর মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। তবে এসবে সিটি করপোরেশনের কাজ বেশি। তারা বর্জ্য ডাম্পিং করে ৭০ শতাংশ, আর ৩০ শতাংশ যায় খাল-বিল বা নদীতে, না হয় তারা পুড়িয়ে ফেলে। এগুলো কোনোটাই পরিবেশসম্মত কাজ নয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরামর্শ হচ্ছে, এগুলোকে আলাদা করে ১০০ কেজিকে সাত কেজিতে রূপান্তর করা। সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প নিয়েছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করবে। এ জন্য আমিন বাজারে ডাম্পিং করছে। এটি শতভাগ পরিবেশসম্মত নয়। উন্নত দেশগুলো আগে এটি করেছে, তবে এখন তারা ফার্টিলাইজারের দিকে যাচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতিকর হচ্ছে পুড়িয়ে ফেলা, এর চেয়ে কিছুটা কম ক্ষতিকর হচ্ছে ওয়েস্ট টু পাওয়ার, আর সবচেয়ে ভালো হচ্ছে ফার্টিলাইজার করা।

বায়ুমান সূচক (AQI) পরিমাপ ও তথ্য প্রচারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা কতটা? প্রযুক্তিগত ঘাটতি বা তথ্য প্রকাশের সীমাবদ্ধতা আছে কি?

আমরা ৩১টির মধ্যে ১৬টিতে এয়ার কোয়ালিটি দিচ্ছি, বাকিগুলোতে ব্যাকআপ সিস্টেম নেই। উপরে বলা হয়েছে, ২০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট করা হবে, সেটি এখানেও ব্যয় করা হবে ব্যাকআপ সিস্টেম স্ট্রং করার জন্য। 

নাগরিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন? জনগণের ভূমিকা বাড়াতে কী পরিকল্পনা আছে?

মানুষ যত বেশি সচেতন হবে তত দূষণ কমবে। ধরা যেতে পারে একজনের একটা গাড়ি আছে, সে এটি মেইনটেন্স করছে না, এতে বায়ুদূষণ হয়। আবার কনস্ট্রাকশনের কাজ হচ্ছে­-বালু ঢেকে রাখছে না, ট্রাক বালু ঢেকে না আনায় রাস্তায় পড়তে পড়তে যাচ্ছে। এসব কিন্তু মানুষের তৈরিই দূষণ। এ ছাড়াও একজন একটি চিপস খেল, সে রাস্তায় খোসা ফেলে দিল, পরবর্তী সময়ে সেটি অন্যান্য বর্জ্যরে সঙ্গে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তার হকাররা বেশি দায়ী এসব দূষণের ক্ষেত্রে।

বেসরকারি খাত, বিশেষ করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে কীভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে?

সবাইকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী করা হয়। তবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর এয়ার কন্ট্রোলিং সিস্টেম নেই। বিশেষ করে পুরাতন স্টিল কারখানা আছে, এরা বেশি দূষণ করে। দূষণ বন্ধ করার জন্য এদের বাধ্য করা যাচ্ছে না। আবার এগুলো বন্ধ করে দিলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাতেও প্রভাব পড়বে। তারা যদি কন্ট্রোলিং সিস্টেম ডেভেলপ করতে যায়, নতুন একটি কারখানা তৈরির কাছাকাছি খরচ হয়ে যাবে। এ জন্য যখন কারখানা তৈরি করা হয়, তখনই এটি করতে হবে। এতে করে দূষণ কমবে। 

মেট্রোরেল, বিআরটি বা গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর বায়ুমানে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করেছেন কি?

মেট্রোরেল ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর বায়ুমানে অবশ্যই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। মেট্রোরেল পরিবহন বেশি, মানে দূষণ কম। এটি বিদ্যুতে চলছে, বায়ুদূষণের জন্য কোনো দায় নেই।

শিশু ও প্রবীণদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ কোনো সুরক্ষা পরিকল্পনা আছে কি?

শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে দূষণ বেড়ে যায়, এ জন্য আমরা এখন প্রচার করে যাচ্ছি বৃদ্ধরা কী করবে, শিশুরা কী করবে? জাতীয় দৈনিকগুলোতে এটি নিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়াতেও সার্বক্ষণিক প্রচারণা চালাচ্ছি। আমাদের মতো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও সচেতন করছে দূষণের ক্ষতির ব্যাপারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বায়ুদূষণের সম্পর্ককে আপনি কীভাবে দেখছেন? এই দুই সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত নীতি থাকা দরকার কি না?

ফজিল ফুয়েল বা ডিজেল পোড়ালে জলবায়ু পরিবর্তন হয়, আবার বায়ুদূষণও হয়। এ জন্য সোলার এনার্জির দিকে যাওয়া উচিত। আমাদের মতো দেশগুলো যাবে মিটিগেশন বা হ্রাস করার দিকে, আর উন্নত দেশগুলো যাবে এডাপটেশন বা অভিযোজনের দিকে। কারণ তারা বেশি ফজিল ফুয়েল পোড়ায়। জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের অবদান খুবই নগণ্য। তবে উন্নত দেশগুলো প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যয় করে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনে যেমন করছি আবার এডাপটেশনও করছি, যেমন-জলবায়ুর প্রভাব যেখানে বেশি পড়ে, সেসব অঞ্চলে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাকা বাড়ি করে দেওয়া, কৃষি সহযোগিতা দেওয়া হয়। এটি করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশের বায়ুদূষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর  পর্যবেক্ষণ বা সহযোগিতা কতটা কার্যকর?

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক লোন দিচ্ছে, তবে ডব্লিউএইচও সরাসরি কোনো কাজ করে না। আর উন্নত দেশগুলো বায়ুদূষণে খুব কমই কাজ করে থাকে। কারণ এটিতে তাদের মাথাব্যথা নেই। দূষণের সমস্যা বেশি সাউথ এশিয়ান দেশগুলোর জন্য। জাতিসংঘের পরিবেশ শাখা ইউনেফ জলবায়ু নিয়ে অনেক কাজ করেছে। তবে বায়ুদূষণ নিয়ে কোনো কাজ করে না। তবে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কিছু কাজ করলেও নিজ স্বার্থেই করে, লোন দেয় আরকি।

আগামী ৫-১০ বছরে বাংলাদেশের বায়ুমান কেমন হবে বলে আপনি আশা করেন?

এটি বলা কঠিন আসলে। যদি স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা) রাস্তার দূষণ কমাতে পারে যেমন-বর্জ্য, ধুলা-এসব কমালে ১০ বছর পর একটা পজিটিভ ফিডব্যাক আসবে। আর ট্রান্সপোর্টের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছর পর একটা পরিবর্তন আসবে। কারণ টেকনোলজির পরিবর্তন হচ্ছে। তেলে চলা গাড়ির বদলে মানুষ ইলেকট্রিক গাড়ির দিকে যাচ্ছে। জরিমানা করেও গাড়ির ধোঁয়া কমানো যাচ্ছে যে বিষয়টি কিন্তু এ রকম না। তবে মানুষ নিজের সেভিংসের জন্যই ইলেকট্রিকের দিকে যাবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের দুর্বলতা বা ঘাটতি আছে কি না?

আমাদের সক্ষমতার অভাব আছে। পর্যাপ্ত লোকবল নেই, একটা জেলা অফিসে মাত্র দুই-তিনজন কর্মকর্তা আছে। বড় বড় জেলাগুলোতে অনেক লোকের বসবাস, সেখানে এত অল্প জনবল দিয়ে হয় না। এ ছাড়া বাজেট ঘাটতি আছে। যত বেশি কাজ করা হবে, তত বেশি বাজেট লাগবে।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫