‘দেখ যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধ চলবে; কিন্তু বেন বেল্লা, বেনখেদ্দার মতো আমরাও মারা যাব’

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. এমএ মবিন। নিভৃতচারী একজন দেশ অন্তঃপ্রাণ মানুষ। প্রবাসী হলেও দেশ, সমাজ ও মানুষ নিয়ে এখনও ভাবেন। দেশ নিয়ে একদিকে যেমন রয়েছে তাঁর প্রবল ভালোবাসা, তেমনি রয়েছে অভিমান। তার জীবন গল্পের কাহিনীকেও হার মানায়। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার প্রতিবাদে লন্ডনের হাইড পার্কে যে কয়েকজন বাঙালি পাসপোর্ট ছিঁড়ে তাতে আগুন ধরিয়ে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছিলেন তাদেরই একজন ডা. মবিন। তারপর বৃটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে ‘রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের’ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে সংগ্রহ করেন ভারতীয় ভিসা। 

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তার কালজয়ী সৃষ্টি ‘একাত্তরের দিনগুলি’র ১৬১-১৬২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- ‘‘চেনা হয়ে উঠেছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডা. এমএ মবিন। এরা দুইজনে ইংল্যান্ডে এফআরসিএস পড়ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে বিলেতে চারবছর হাড়ভাঙা খাটুনির পর যখন এফআরসিএস পরীক্ষা আর মাত্র এক সপ্তাহ পরে, তখনই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু। ছেলে দুইটি পরীক্ষা বাদ দিয়ে বাংলাদেশ আন্দোলনে অংশ নিলো, পাকিস্তানি নাগরিকত্ব বর্জন করলো, ভারতীয় ট্রাভেল পারমিট জোগাড় করে দিল্লিগামী প্লেনে চড়ে বসলো। উদ্দেশ্য ওখান থেকে কলকাতা হয়ে রণাঙ্গনে যাওয়া। প্লেনটা ছিল সিরিয়ান এয়ারলাইন্স-এর। দামাস্কাসে পাঁচঘণ্টা প্লেন লেট, সব যাত্রী নেমেছে। ওরা দুইজন আর প্লেন থেকে নামে না। ভাগ্যিস নামেনি। এয়ারপোর্টে এক পাকিস্তানি কর্নেল উপস্থিত ছিল, ওই দুইজন ‘পলাতক পাকিস্তানি নাগরিককে’ গ্রেপ্তার করার জন্য। প্লেনের মধ্য থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না, কারণ প্লেন হলো ইন্টারন্যাশনাল জোন। দামাস্কাসে সিরিয়ান এয়ারপোর্ট কর্মকর্তা ওদের দুইজনকে জানিয়েছিল- ওদের জন্যই প্লেন পাঁচ ঘণ্টা লেট। এমনিভাবে ওরা বিপদের ভেতর দিয়ে শেষ পর্যন্ত মে মাসের শেষাশেষি সেক্টর টু রণাঙ্গনে গিয়ে হাজির হয়েছেন।’’

যুদ্ধ যখন বিস্তার লাভ করে যুদ্ধক্ষেত্রে হতাহত যোদ্ধা, উদ্বাস্তু ও নির্যাতনের শিকার অসংখ্য নর-নারীর জরুরি চিকিৎসাসেবার জন্য প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় একটি হাসপাতালের। মুক্তিযুদ্ধের ২ নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ ও ভারতের জিবি হাসপাতালের প্রধান সার্জন ডা. রথিন দত্তের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম জিএস ডা. এমএ মবিনকে নিয়ে আগরতলার বিশ্রামগঞ্জের মেলাঘরে হাবুল ব্যানার্জির আনারস বাগানে গড়ে ওঠে প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল- ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’। মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতাল।

গত বছরের শুরুতে আমরা ডা. এমএ মবিনের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। সাম্প্রতিক দেশকালের পক্ষে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরশাদ সিদ্দিকী।


মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি যুবক, চাকরি করছেন ইংল্যান্ডে। এ সময় সেই নিরাপদ জীবনের হাতছানি ছেড়ে কোন অনুপ্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ইংল্যান্ড থেকে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন?

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স কতো, সঠিক মনে নেই, আটাশ হতে পারে। হাসপাতালে চাকরি করতাম। ১৯৭১-এ, চারমাসের একটা ফেলোশিপ কোর্স করছিলাম। মার্চ মাসের শেষের দিকে যুদ্ধ যখন শুরু হলো, হঠাৎ করে ইউনিভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। চাকরির মাঝে একটা কোর্স করার জন্য ঢুকেছিলাম। 

ওই সময় আমরা টেলিভিশন দেখতাম সন্ধ্যায়। তারপর একটা ঘণ্টা বাজাতো তখন খেতে যেতাম। সম্ভবত ২৬ বা ২৭ তারিখে একটা নিউজ এলো, কুষ্টিয়ার কাছে বাংলায় বলছে পানি দে পানি দে, বলে ওরা পানি ছড়াচ্ছে। 

Kushtia was bombed or something. Then I came to know that there was a problem. Most probably March, 26-27. And from then on everyday there was some news of crack down of Pakistan Army in Bangladesh.

ওখানে যেসব বাঙালি ডাক্তার ছিল, অনেকের সাথে কথাবার্তা বললাম। তখন অনেকে বলছে পাকিস্তানের বাংলাদেশ। কেউ কেউ তো বাংলাদেশের নামই শুনেনি। বলছে- কি বলো, এ রকম হয়েছে? হয়তো ইন্ডিয়ানরা অ্যাটাক করেছে। যেহেতু ইন্ডিয়ান ওখানে ঢুকেছে এইজন্য পাকিস্তান অ্যাটাক করেছে। সিক্সটি ফাইভ ওয়ার, তারপরে এটা-ওটা বলছে, যেমন ইন্ডিয়া বোধ হয় ইস্ট পাকিস্তানে কিছু করেছে। 

আমি তখন ওদেরকে বললাম ইন্ডিয়া না, পাকিস্তান ইস্ট পাকিস্তানে অ্যাটাক করেছে। দু’চারজন আমাকে সাপোর্ট করল। আমরা প্রায় বিশজন বাঙালি ছিলাম। দু’চারজন মিলেই একটা কমিটি করার চেষ্টা করলাম। বেশির ভাগ তখন ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে আমি গেলাম। ওরা সবাই একটা গ্রুপ খুলল।


দেশে ছাত্র থাকাকালীন আপনি কি কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন? 

আমি আসলে ছাত্র সংগঠন করতাম না। নটরডেমে পড়তাম। সেখানে কোনো ছাত্র সংগঠন ছিল না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজেও কোনো অর্গানাইজেশন ছিল না। তখন ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগের ছেলেপেলেরা আমার কাছে আসত। ঢাকা কলেজে-ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র রাজনীতি স্ট্রং ছিল। 

নটরডেম কলেজের কেউ রাজনীতিতে জড়িত ছিল না। আমি অবশ্য ঘুরতাম। কথাবার্তা বলতাম। এই মেনন, মতিয়া চৌধুরী ওদের খবরাখবর রাখতাম। শেলী আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। ঢাকা কলেজে পড়ত। ছাত্র শক্তি করত। পরে আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চলে যাই। ওখানে নির্বাচিত হই। তখন শেলী দাবি করল যে, মবিন আমার ছাত্র শক্তি করে। রাও ফরমান আলীর একটা পার্টি ছিল, তারই স্টুডেন্ট ফোর্স ছাত্র শক্তি।

তারপর আমি অনেকগুলো মুভমেন্টের সাথে জড়িত হই। যে রকম জাফরুল্লাহ ছিল জেনারেল সেক্রেটারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ, আর আমি ছিলাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। আমরা দু’জনই দেখলাম যে ডাক্তারি পাস করা হাউজ অফিসার, যারা বেতন পায় না। পাঁচ বছর ধরে লেখাপড়া করার পর পাস করে তাদের কাজ করতে হতো উইদাউট পে। তো এটা নিয়ে একটা মুভমেন্ট করছিলাম। এবং আমরা সফল হয়েছিলাম।


মুভমেন্টে আপনার ইনভলবমেন্ট সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলবেন? 

ওই যে আমাদের হাউজ অফিসারদেরতো বেতন দিত না। এরা ছয় বছর ধরে পড়াশোনা করেছে, বাপে টাকা দিয়েছে। এখন ডাক্তার হয়ে সমস্ত কাজ করছে, কিন্তু পয়সা পাচ্ছে না। আর সার্টিফিকেটও দেবে না। যেহেতু ট্রেনিং কমপ্লিট হয় নাই।

তারপরে দেখলাম যে, মেডিকেল কলেজে যতগুলো প্রফেসর আছে সব পাকিস্তানি, পাঞ্জাবি বা উর্দু স্পিকিং, সিন্ধি। ১৯৫৯ এ আমি যখন ভর্তি হই তখন ৩০০ জন পরীক্ষা দিয়ে ৩০ জন টিকলাম। তখনতো বুঝতাম না। খুব খুশি। পরে দেখলাম পাকিস্তানের পাঞ্জাব, পেশোয়ার থেকে ছাত্র-ছাত্রী আসছে। প্রায় ২০ জন, ৩০ জন ছেলে-মেয়ে এলো কোটা বেসিসে। ওদের জন্য সিট রাখা হলো। 

আবার অন্যদিকে ৪৫% না পেলে আমাদের ২য় বিভাগ হয় না, কিন্তু ওদের ছিল ৪০%। তারপরে দেখেন ফার্স্ট ইয়ারে পরীক্ষা যখন হবে তার এক মাস আগে Most of the students started said, we have to go back to Pakistan. আমি জিজ্ঞাস করেছি

Why? Why do you want to go back? 

Exam is coming in months, I have to seat for the exam. 

Why do you seat for the exam? 

I have failed in one or two subjects in compartmental exam. 

মানে পাসও করে নাই। দেখেন, ওরা কীভাবে ডিসক্রিমিনেশন করতো। এসব দেখে আমি পরে মুভমেন্ট শুরু করলাম।

১৯৫৯ সালে কেবলমাত্র দুটো মেডিকেল কলেজ ছিলো। ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ তখনও কমপ্লিট হয় নাই। তার মানে প্রকৃতপক্ষে দুটো মেডিকেল কলেজ ছিলো। মেয়েদের আলাদা কোনো মেডিকেল কলেজ ছিলো না। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানে তখন ছয়টি মেডিকেল কলেজ ছিলো। আমাদের তো উচিত ছিল এ বিষয়গুলো আগেই বলা।


মুভমেন্টটা কি চট্টগ্রামেই করলেন আপনি?

না ওখানে না, ঢাকাতে। মুভমেন্টটা করলাম জাফরুল্লাহর সাথে। জাফরুল্লাহ পলিটিক্স করতো জানতাম। মনে হয়েছিলো সে এটার মধ্যে ইনভলব হবে। এ মুভমেন্টটার জন্য আমাকে অনেক খেসারত দিতে হয়। ৬৭ সালে বিলাতে আমার চাকরি হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ আমার পাসপোর্ট জব্দ করলো। চাকরি পেলাম না। তারপর আমি প্রায় এক বছর স্যান্ডেল পরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম। 

আমার বাবা এসপি ছিলেন। উনি আইজির কাছে নিয়ে গেলেন। সেই আইজি পরে বিরাট প্রমোশন পেয়ে ফরেন অ্যাফেয়ার্সে গেলেন। তিনি বললেন, He is a … How dare you bringing a … anti-Pakistani son to the … My father was insulted.

এক বছর পরে অবশ্য ওরা আমার পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়, আমি লন্ডন গেলাম।


২৬ মার্চের পর লন্ডনে কি আবু সাঈদ চৌধুরী মিটিং কল করলেন? 

আবু সাঈদতো কল করলেন না। বাংলাদেশিরা মিটিং কল করলেন। একটা উইকেন্ড হবে বোধ হয়। মিটিং হবে, আমি একটা গাড়ি করে একাই চলে এলাম। তখন আমার ছোট্ট একটা গাড়ি ছিল। আর কেউ এলো না। আবু সাঈদ চৌধুরীর মিটিংয়ের পরে আমি অনেককে জড়ো করলাম। 

আমরা Bangladesh Medical Association UK Branch করেছিলাম। জাফরুল্লাহ সেক্রেটারি, আমি ছিলাম জয়েন্ট সেক্রেটারি। তখন বাংলাদেশ কিন্তু হয় নাই। কেন যে নাম দিলাম তা-ও মনে নাই আমার। আমরা বললাম যে একটা নামতো দিতে হয় তখন এই নামটা দেয়া হলো। ওখানে অনেকে ছিলেন। যাদের অনেকে মারা গেছেন।


৭১ সালে কি আপনি বিবাহিত ছিলেন?

No, No. I married in much after Seventy One.


যুদ্ধে কীভাবে যোগ দিলেন?

ওখানে লন্ডনে যারা ছিল, আশেপাশে যেমন ম্যানচেস্টার, এখানে ওখানে মিটিং করতো। যখন জানতো যে ওদের ভাই, বাবা কেউ মারা যায় নাই, They start stop coming to the meeting. তখন আমি জাফরুল্লাহকে বললাম যে, কী হচ্ছে এগুলা? What are we doing here? Wasting our time. সে বলল, কী করব? বলি, চল যাই যুদ্ধে। যুদ্ধ যদি করতে হয় চল ইন্ডিয়া যাই।

আমরা Indian High Commission গেলাম। হাইকমিশন প্রথমদিন আমাদের ইন্টারভিউ নিলো না। Second day ইন্টারভিউ নিল ডেপুটি হাইকমিশনার। সে বলল, How do we know you are not a Pakistani Agent? তোমাদের কেন ইন্ডিয়া পাঠাব? তো আমরা বললাম যে আমরা যুদ্ধ করব। বলে, আমাদের ওখানে এতো সোলজার আছে, তোমাদের বাংলাদেশি ভলান্টিয়ার আছে। বাংলাদেশের থেকে যারা আসছে তারাও সোলজার হতে চায়,, millions, we can’t recruit all of them. Plus we got our own solders. তা আমি বললাম, তাইলে কী করব? We want go to India. তারা বলল, Why you want to go to India? Only you can help is rise money. 


এটা লন্ডনে বলেছে?

একেবারে পাক্কা বলে দিলো।


হাইকমিশনেই বলেছে?

হ্যাঁ, হাইকমিশনেই বলেছে। Rise money as you have doing and then liaison with us. তারপরে কয়েকদিন পরে আবার গেলাম। বলে, তুমি যে টাকা পেয়েছ সেগুলো আমাদের দাও। আমরা ওদেরকে সাহায্য করব। আমরা উপলব্ধি করলাম, আমরা যুদ্ধ করতে চাই, অস্ত্র ধরতে চাই। ওই যে, যুবক ছিলাম বললাম না? যাই হোক আমরা বারবার ঐ একই কথা বলি, আমরা ইন্ডিয়া যাব। পরে ওরা রাজি হলো, ঠিক আছে ইন্ডিয়া যাও, যাও। You go as a refugee, help the refugees. আমি বললাম, ওকে। তখন ভিসা দিলো। জাফর আমাকে বলল, your visa as a refugee worker.

তখনতো আমাদের হাতে টাকাপয়সা নেই। আমার ছোট একটা গাড়ি ছিল, সেটা এক বন্ধুর কাছে বিক্রি করে দিলাম। দুইদিন লেগেছিল আমার গাড়িটা বেচতে। তখন খুব কম বেতন পেতাম। ৭০-৮০ পাউন্ড। আর কোর্স করাতে আমার ব্যাংকে বোধহয় ম্যাক্সিমাম ১০০-২০০ পাউন্ড ছিল। যাইহোক, আমি আর জাফরুল্লাহ পরদিন সিরিয়ান এয়ার লাইনসের টিকেট কাটলাম। And we came to Delhi. দিল্লিতে এক কর্নেল এবং শ্রী পদ্মজী নাইডু, She was the governor for the relief organization আমাদেরকে রিসিভ করলেন।


পদ্মজী নাইডু? 

পদ্মজী নাইডু। উনি বোধ হয় নেহরুর কী একটা আত্মীয়।


উনি জানলেন কী করে যে আপনারা যাচ্ছেন?

ঐ যে ইন্ডিয়ান হাইকমিশন বলে দিয়েছে না। পদ্মজী নাইডু আর কর্নেল আমাদেরকে দিল্লি এয়ারপোর্টে একটা ছোট্টরুমে নিয়ে গেলেন। বললেন দেখ, আমরা লাখ লাখ, কোটি কোটি লোককে এখানে খাওয়াচ্ছি। এদের জন্য শাড়ি, লুঙ্গি, ভাত কিনতে হয়। তোমরা যদি পারো তাহলে টাকা আনো। আর কর্নেলকে বললেন, এরা যতদিন পর্যন্ত না কিছু করতে পারবে, ততদিন এখানেই একটা হোটেলে রেখে দাও। কিছুদিন থাকার পরে যখন দেখলাম এখানে থেকে লাভ নাই, আমি আর জাফরুল্লাহ একদিন টিকেট কেটে আগরতলায় চলে এলাম।


ওখান থেকে সরাসরি আগরতলায় চলে এলেন?

না, সরি! কলকাতায়। দিল্লি থেকে কলকাতায়, প্লেনে করে। পাঁচদিন ছিলাম দিল্লিতে। কর্নেলটা প্রায়ই এসে জিজ্ঞেস করতো, তোমার অর্গানাইজেশনের ওরা কি আমাদের কাপড়-চোপড়, টাকা-পয়সা পাঠাচ্ছে? কী করবে না করবে? বলি, আমরাতো যোগাযোগ করছি এখন কী করা যায়? একদিন সুযোগ পেয়ে আমরা কলকাতায় চলে এলাম। As simple as that. কলকাতায় আসলাম।


টিকেট কাটলেন কি এয়ারপোর্টে এসে? 

টিকেট কেটে এয়ারপোর্টে এলাম। ইন্টারনাল ফ্লাইটে, কী একটা যেন ছিল আমার মনে নাই। জাফরুল্লাহ বলল, আজ আবার আমাদেরকে নাম চেঞ্জ করতে হবে। আমি বললাম, কেন? বললো যে, ওই ইন্ডিয়ান কর্নেল ব্যাটা আছে। ওতো বলেছে এটা ওটা করতে। তাতে হয়তো এয়ারপোর্টে ঢুকতে দেবে না। পরে আমরা কলকাতায় এসে খোঁজ পেলাম যে বাঙালি বেশিরভাগই একটা হোটেলে থাকে। কী বলে যেন রাস্তাটার নাম, হ্যাঁ, থিয়েটার রোড। ওর কাছাকাছি একটা হোটেল ছিল। ওখানে যেয়ে দেখি সাদেক ভাইকে, তাঁকে অনেক আগেই চিনতাম। কিংবা নাম জানতাম।


সাদেক খান?

হ্যাঁ, এনায়েত উল্লাহ খান, বাদল খানের ভাই সাদেক খান ওখানে বসে আছেন। তারপরে ব্যারিস্টার মওদুদ, স্কোয়াড্রন লিডার খন্দকার। যে মারা গেছে পরে। সে-ও ওখানে ছিল। আরও অনেক বাঙালি বসে আছে। তো আমরা ওখানে এক কোণায় বসে চা খাচ্ছি। আমার মনে হয় এরপরের দিন, মওদুদ কী করে খবর পেলেন যে আমরা লন্ডন থেকে এসেছি। বললেন- আপনারা এদেশে যুদ্ধ করতে এসেছেন, এটা ওটা? বলি, হ্যাঁ। চলেন তাজউদ্দীনের সাথে দেখা করিয়ে দেই। তো আমাকে তাজউদ্দীন সাহেবের কাছে নিয়ে গেলেন। তাজউদ্দীন সাহেব একটা কথা বলেছিলেন যেটা আমি কোনোদিন ভুলবো না। ‘দেখ যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধ চলবে। কিন্তু বেন বেল্লা, বেনখেদ্দার তাদের মতো আমরাও মারা যাব। দেশ স্বাধীনের পরে আমরাও মারা যাব’। আপনার মনে আছে বেল বেল্লা, বেনখেদ্দা আলজেরিয়ান রেভ্যুলেশন করার পরে পলিটিক্যাল কারণে তাদেরকেও মারা হলো, যেভাবে তাজউদ্দীন সাহেবকে জেলে নিয়ে রাখল এবং পরে মেরে ফেলা হলো।

অনেক কথা জিজ্ঞেস করলেন। তোসাদ্দকের নামটা মনে আসে। তোসাদ্দক আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগার ছিল লন্ডনে। ওরা কী করছে? ওরা কি জানে আমরা যুদ্ধ করছি। এটা ওটা। তারপরে উনি বললেন যে, দেখ আমাদের প্রচুর ডাক্তার আছে। আর ডাক্তারের দরকার নাই। তোমরা ফিরে যাও। যেয়ে বল আমরা যুদ্ধ করছি। আমাদের যেন সাপোর্ট করে। আমাদের জন্য দোয়া করে।


এটা তাজউদ্দীন সাহেব বললেন?

হ্যাঁ, তাজউদ্দীন সাহেব আমাদের বললেন। আরেকটা কথা বললেন। যেটা বললাম একটু আগে। তো আমরা দুইজন আবার ডিসঅ্যাপয়েন্টেড হলাম। আমরা ভাবছিলাম যে, তাজউদ্দীন সাহেব বলবেন, হ্যাঁ ভালো হয়েছে। আপনারা এসেছেন। যান যুদ্ধ করেন গিয়ে। এটা ওটা। কিন্তু তার কিছু হলো না।

তারপরের দিন বোধহয়, আমরা বসে বসে বিয়ার খাচ্ছি। জাফরুল্লাহ আবার বিয়ার খায় না, আমি খেতাম। কথাবার্তা বলছি। সাদেক ভাই একটা টেবিল থেকে উঠে এসে বলল, শুনলাম আপনারা বিলেত থেকে এসেছেন? আমি বলি, হ্যাঁ। আপনারা সত্যিই যুদ্ধ করবেন? আমি বলি, হ্যাঁ। কাকে একটা কাগজ আনতে বললেন। সে কাগজ এনে দিলো। চিঠি লিখলেন। লিখে ইনভেলাপের মধ্যে ভরে বললেন, এই চিঠিটা নিয়ে আপনারা আগরতলায় চলে যান। ওখানে খালেদ মোশাররফ আছে। তার নামে অ্যাড্রেস করবেন। তাকে গিয়ে চিঠিটা দেন। ও আপনাদের এনলিস্ট করে দেবে। ও আমাদের বন্ধু মানুষ।


সাদেক খান খালেদ মোশাররফকে চিঠি লিখে দিলেন?

হ্যাঁ। তখন উনি মেজর ছিলেন। মেজর খালেদ মোশাররফ।


তখন আপনারা আগরতলায় গেলেন?

হ্যাঁ, আমরা চিঠি নিয়ে আগরতলায় প্লেনে করে গেলাম। ওখানে একটা হোটেলে গিয়ে উঠলাম। বাঁশের মাচার মতো হোটেল। লন্ডন থেকে আসায় আমাদের আরও অদ্ভুত লাগে। যাই হোক ওখানে উঠলাম। তারপরের দিন রাস্তায় হাঁটছি, কোথায় যাই? কোথায় খালেদ মোশাররফ? খোঁজ নিচ্ছি। হঠাৎ মোছওয়ালা, বেশ মোটাসোটা একটা ছেলে পিকআপ থেকে নেমে এসে বলল, আপনারা দুইজন ডাক্তার? আমি বললাম, হ্যাঁ। আপনারা লন্ডন থেকে এসেছেন? হ্যাঁ। আমি ক্যাপ্টেন আক্তার, সেক্টর-২ এ আছি বলে হ্যান্ডশেক করলেন। আপনারা ঠিক কী জন্যে এসেছেন? আমি বললাম, আমরা যুদ্ধ করতে এসেছি। তারপরে বললাম, আমাদের কাছে খালেদ মোশাররফের জন্য একটা চিঠি আছে। তিনি জানতে চাইলেন, এখানে কোথায় আছেন? আমি হোটেলে বলার পর জানতে চাইলেন, হোটেলে কী আছে? ছোট্ট একটা হ্যান্ডব্যাগ ছিল। তো নেন লাগেজটা উঠান বলে, ওই পিকআপে করেই আমাদেরকে মেলাঘর বলে একটা ক্যাম্পে নিয়ে গেলেন। ওখানে সেক্টর-২ এর হেডকোয়ার্টার ছিল। সেদিন আবার খালেদ মোশাররফ ছিলেন না। কোনো সাবসেক্টরে গেছেন, ফেরেননি। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন, মতিন। পরে হয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার। ক্যাপ্টেন মতিন বললেন, ‘ও বিলাত থেইকা আইছেন। যান ঐখানে গিয়া শুইয়া থাকেন’। তো আমাদের একটা জায়গা দেখিয়ে দিলেন। দেখি ওখানে কতগুলো বাঁশ কাটা। একটা মাচাঙ্গের মতো আছে। গাছের নিচে আর কিচ্ছু নেই। বালিশ নেই, কিচ্ছু নেই। শোয়াও যায় না। তারপরে দেখলাম ক্যাপ্টেন হায়দার, লেফটেন্যান্ট … কী নাম যেন ভুলেও গেছি। এরা সব মাচাঙ্গের উপরে খড় দিয়ে ওই যে In between in bamboo একটুও গর্ত হয় না ঐটা করে সমান করে ফেলেছে। তো দেখলাম খড় পড়ে আছে। আমি আর জাফরুল্লাহ, আমরাও শুরু করলাম। এরপর আমাদের যে হ্যান্ডব্যাগ ছিল, সেটা মাথায় দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। খালেদ মোশাররফ একদিন না দুইদিন পরে এসে আমাদেরকে ডাকলেন। ওনার আবার একটা ছোট্ট টেন্ট ছিল।


এটা কোন মাস নাগাদ?

মে, জুন হবে। তখন খালেদ মোশাররফের টেন্টটা ছাড়া কোন টেন্ট ছিল না। বৃষ্টি হলে সবাই পানিতে, গাছতলায় ভিজত। যাই হোক, খালেদ মোশাররফ একদিন আমাকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, লন্ডন থেকে এসেছ? বলি হ্যাঁ। যাই হোক, এরপর বললেন, তোমরা দুইজন ডাক্তার। আমারতো ডাক্তার দরকার নাই। আমাদের প্রচুর ছেলে যুদ্ধ করতে এসেছে। I don't need any doctor. ওরা এসেছে মরার জন্য। যুদ্ধ করার জন্য। we need arms and ammunition. ইন্ডিয়ানরা আমাদের কিছু দিচ্ছে না। তোমরা আমাকে আর্মস এন্ড অ্যাম্যুনিশন, ওয়াকিটকি, স্কুবা ডাইভিং এগুলো এনে দিবা? আমরা বললাম ঠিক আছে। আমাদের তুমি লিস্টটা দাও। আমরা লন্ডনে গিয়ে এনে দেবো। উনি বললেন, তোমরা দুইজন যেতে পারবে না। একজন থাকতে হবে। চালাক লোক। তখন আমি জাফরকে বললাম, you are the better organizer than me. আমি কাজ করতে পারি। কিন্তু আমি অর্গানাইজার ভালো না। আমাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হলো জাফরুল্লাহ প্রথমে যাবে। আর আমি পরে। সুতরাং সে চলে গেল।

আমি ওখানে থেকে গেলাম। তখন তো খুব বেশি রোগী নেই বা কোনো উন্ডেড হচ্ছে না। কাশি নিয়ে যারা আসে তারা। আমাদের কাছে ফার্স্ট এইড এর মতো কিছু ছিল। সেসব নাজিম দেখাশোনা করতো। ডা. নাজিম ময়মনসিংহের। আমি তখন কিছু ট্রেনিং নেয়া শুরু করলাম। ওই ট্রেনিং-এ প্যারেড-ট্যারেড করাতো না। দুই চারটা মেশিনগান কীভাবে খুলতে হয় না হয়, এসএমজি-স্টেনগান কীভাবে খুলতে হয়, এসব দেখাত হাবিলদার, মেজর।

বলছিলেন যে রোগী তখন কম ছিলো

ফার্স্ট এইডে বেশির ভাগ যেগুলো আসত সর্দি, কাশি, ডায়রিয়ার রোগী। তারপরে হঠাৎ করে দুই চারটা রোগী আসা শুরু করলো। স্প্লিন্টার, এটা ওটা। তখন আগস্ট, সেপ্টেম্বরের দিকে, আমাদের ক্যাম্পগুলোতে। তখন কিন্তু রীতিমতো ট্রেনিং শুরু হয়ে গেছে। ওখানে লাইট এম্যুনেশন দিয়ে তারা প্র্যাকটিস করছে। আমাদের ফ্রিডম ফাইটাররা এবং রেগুলার বাংলাদেশি যারা প্রতিরোধ করছিল তারা তখন মেশিনগানগুলিকে ধোয়ামোছা, এটা ওটা করে। শ্যুটিং করে দেখে হচ্ছে কি না। ওখানে তো প্রপার শ্যুটিং গ্রাউন্ড নেই যে কারণে কিছু accidental bulleting হয়েছিল। তো তখন রোগীকে নিয়ে আসত। আনার পরে আমি ফার্স্ট এইডে কিছু করার থাকলে করতাম। আর কিছুই ছিল না। একটা মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলাম দিল্লি হাসপাতালে। ওর পেটে গুলি ঢুকেছিল। এসব যখন হওয়া শুরু করল মোশাররফকে বললাম, Look bullet inside coming. But I have nothing. প্রথম প্রথম বলতেন,  Let them die. তারপর কয়েকদিন পরে আমাকে বললেন, Ok. In that case find the place where you build a field hospital.


ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কথা কী খালেদ মোশাররফ বললেন? 

হ্যাঁ, খালেদ মোশাররফ। সেক্টর কমান্ডার। তারপর আমি খুব খুশি হয়ে গেলাম। এবার কিছু করা যাবে। তখন আমাকে একটা কন্ডিশন দিলেন যে মেলাঘরের কাছাকাছি করা যাবে না। Melaghor was only few miles from border. বললেন, তুমি এখান থেকে আরও ১০ মাইল ভেতরে যেয়ে করবে। তো ঘুরতে ঘুরতে আমি একদিন একটা জায়গা পেলাম। ওটার নাম হাবুল ব্যানার্জির বাগান। পাশে একটা পুকুর আছে। আমাদের পানি দরকার। তার নিচে একটা খাঁড়ির মতো আছে। বেশ কিছু ফাঁকা জায়গা ছিল। আমি পরে জানতে পারলাম, হাবুল ব্যানার্জি স্বদেশি ছিলেন। মাস্টারদার সাথে মুভমেন্ট করতেন। কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্টে উনি ছিলেন। তারপরে এখানে অনেক জায়গা নিয়ে ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘরে থাকতেন। ছোট্ট একটা ঘর ছিল। সেটা বিশ্রাম ঘর। তখন খালেদ মোশাররফ এসে জায়গাটা দেখে বললেন- তোমার ফিল্ড হাসপাতাল খুব সুন্দর হবে। আমি বললাম, কীভাবে হবে? উনি বললেন, বাঁশের ঘর হবে। What do you need? আমি বললাম বাঁশের ঘর করতে হলে বাঁশ, ছাদের জন্য টিন দরকার। তখন ইন্ডিয়ায় রিফিউজিদেরকে প্রচুর পলিথিনের বিরাট শিট দিত। ওটা দেখে আমার একটা আইডিয়া হলো। সেই সময় এইচ টি ইমাম চট্টগ্রামে ছিলেন। যিনি এখন পাওয়ারে। সেই এইচ টি ইমাম সিএসপি। তিনি চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নাম শুনে তিনজন ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ওরা তিনজনই বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার। তখনকার দিনে সাব-এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। একজন হুদা, অন্যদের নাম ভুলে গেছি। যাই হোক আপনি এদের নাম বের করতে পারবেন। আক্তারের বইতে আছে এসব। ঐ তিনজন ইঞ্জিনিয়ারকে বললাম আমি এ রকম চাই। তারপরে আমরা সবাই মিলে বসে ঠিক করলাম যে একটা থিয়েটার, একটা রিসেপশন, আর মেয়ে পেশেন্ট, ছেলে পেশেন্টদের জন্য আলাদা ঘর, একটা নার্সদের আর একটা ডাক্তারদের জন্য ঘর হবে। তখন আমাকে ইন্ডিয়ার বেশকিছু লোক জানত, চিনত। যেহেতু বিলাতের একটা সিল ছিল, গেলেই খুব খাতির করতো। আমি গেলে কয়েকটা ট্রাক দিয়ে পলিথিনের ওই শিটগুলো দিলো। বাঁশ আনব কোথা থেকে? ফরেস্ট্রি ছিল একটা। বাঁশ কাটতে লোক লাগে। তখন আমি কো-অর্ডিনেটর অফিসারদেরকে বললাম। ওরা যাকেই রিকোয়েস্ট করে কেউ বাঁশ কাটতে চায় না। বলে আমি যুদ্ধ করছি, বাঁশ কাটব কেন? খালেদ মোশাররফ একদিন এসে এদের সব কটাকেই লাইনে দাঁড় করিয়েছেন। ওরা পাঁচশ’ ফ্রিডম ফাইটার এবং রেগুলার সোলজার। লাইন দেয়ার পরে উনি বক্তৃতা দিলেন। বললেন, দেখ যারা বন্দুক দিয়ে গুলি মারে তারাই কি শুধু যুদ্ধ করে? যারা যুদ্ধ করে, তাদের যদি পেটে ভাত না থাকে তাহলে কি যুদ্ধ করতে পারবে? এটা ওটা বুঝাল। বুঝানোর পরে বলল, those who cut bamboos they are also soldiers, those who cook foods they are soldiers. বলার পরে দেখি প্রচুর ভলান্টিয়ার পেয়ে গেছি। এরপরে ইন্ডিয়ার রিলিফ অর্গানাইজেশন আমাকে ট্রাক দিলো। আমি মাঝে-মধ্যে নিজেই বাঁশ কাটছি। ভালোই লাগত। কেটেকুটে এনে আমরা ঘরটা তৈরি করলাম। এর মধ্যে রোগী আসা শুরু করল। তখন আমাদের প্রপার নার্স বলে কিছু ছিল না। এই সুলতানা কামাল, শাহেদা কামাল তার ছোট বোন, আসমা, রেশমা, তারপরে পদ্মা, গীতা, বড় গীতা, ছোট গীতা- এরা সবাই এখানে একটু একটু নার্সিং করত। অনেকের নাম মনে নেই। আলম নামে একজন ছিলো। আলম একটা অ্যাকশনে গিয়েছিল। অ্যাকশনে যখন গেছে বাইরে ব্রিজ-ট্রিজ উড়াবে। কিন্তু পাকিস্তানি আর্মির একটা বুলেট ওর থাই বোনের হাড্ডিটা ফুটা করে দিয়েছে। ভেঙে ফেলেছে। ওকে নিয়ে এসেছে। বেঁচে আছে, মরে যায়নি। আমি বললাম, চলো তোমাকে জিবি হাসপাতালে নিয়ে যাই। ও বলল, না আমি ওখানে যাব না। আমি বললাম, তোমাকে আমি কী করব? বলে, আপনি যা পারেন সেই চিকিৎসা করেন। এইখানে আমার চিকিৎসা করতে হবে। তখন আমার ঐ পুরনো নলেজ। মেডিকেল কলেজে যা এটা-সেটা শিখেছি। কামারের কাছে গেলাম। কামারের কাছে গিয়েছি, এজন্য জাফরুল্লাহ আমাকে বলে জঙ্গলে অপারেশন করেছ। এটা ওটা করেছ। তুমি এখন কেন পার না। এখন তো নলেজ আছে। তখন তো নলেজ ছিল না। যা খুশি করেছি। যাই হোক তখন আমি কামারের কাছে গিয়া যন্ত্র বানাই। ওটা এককালে সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারের সময় ব্যবহৃত হতো। তো আমি সেটা বানিয়ে নিয়ে চলে যাই। ইঞ্জেকশন দেই, ব্লিডিং বন্ধ হয়ে যায়। এখন সে বীরপ্রতীক। কুমিল্লা বাড়ি। একজনের নাম আলম আরেকজনের নাম কী যেন বলেছিল, ও পাহাড়ি। তারও গুলি লেগেছিল। দুইজনেই বীরপ্রতীক। যাই হোক আরেকদিন ওকে আমি জিবি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। তো ওখানে চিকিৎসার পরে সবাই ভালো আছে। দুইজনেই এখনও বেঁচে আছেন। 

সালেক আহমেদের আন্ডারে ছিল সালদা নদীর সেক্টরটা। তিনি আবার আমাদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী সাহেবেরও আত্মীয় হন। ওখানে অক্টোবরের শেষের দিকে এসে ক্যাপ্টেন সেতারা, হায়দারের ছোট বোন এখন অবশ্য সেতারা বেগম আমাদের সাথে যোগ দেয়।


উনি কি তখন ক্যাপ্টেন? ক্যাপ্টেন সেতারা?

সে ফার্স্ট পোস্টিংয়ে ক্যাপ্টেন হয়। লেফটেন্যান্ট না বলে ক্যাপ্টেন বলে। ডাক্তার হলে ক্যাপ্টেন হয়। সে মাত্র পাকিস্তান থেকে এসেছে। পাকিস্তান থেকে অনেক কষ্ট করে এসেছে।


পাকিস্তান থেকে সরাসরি ওখানে চলে এলেন?

ইস্ট পাকিস্তানে বোধ হয় পোস্টিং ছিল। ডাক্তার মাহমুদ চোখের স্পেশালিস্ট ছিলেন। ডাক্তার হিসেবে ছিল নাজেম, ক্যাপ্টেন সেতারা আর আমি। এই তিন-চারজন আমরা ডাক্তার ছিলাম। আর জাফরুল্লাহ মাঝে মধ্যে আসত।


উনি তাহলে ওই সময় কী করছিলেন?

ও লন্ডনে সব অর্গানাইজ করেছে। সে স্কুবা ডাইভিং সেট, ওয়াকি-টকি, টর্চ আনতো। আবার কলকাতায় অথবা আগরতলায় গিয়ে আমাদের একটা ফকার ফিল্ড শিপের গাড়িতে রিফিউজি খাবার, কাপড়-চোপড় আনত। তার মধ্যে ওসব থাকত। সবাই জানত, কেউ কিছু বলত না। আমি ওসব নিয়ে এসে খালেদকে দিতাম।


তাহলে এই পর্বটা আপনার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার। জুলাই-আগস্টের দিকে ফিল্ড হাসপাতাল পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেছে। এটা আপনার ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল। ওখান থেকে আপনার ফিরে আসার পরের ঘটনাটা বলুন?

আচ্ছা, the day to Dhaka declare independence ক্যাপ্টেন গাফ্ফার এবং ক্যাপ্টেন আক্তার নাজিরহাটে ছিলেন। ওরা আমাকে বললেন, আর্মস এম্যুনিশন কমে গেছে। আমার কিছু আর্মস এম্যুনিশন লাগবে। আর আক্তার বলল, আমার কিছু ওষুধপত্র লাগবে। তখন একটা বেশ বড় জিপ গাড়ি ছিল। ইন্ডিয়ানরা ত্রাণ আনতে দিয়েছিল। For medical purposes. তা আমি নিজেই ড্রাইভ করে কী করে রাস্তা চিনলাম জানিও না। But I went to Nazirhat. নাজিরহাট গিয়ে ওদের সাথে দেখা হলো।


নাজিরহাট তো চট্টগ্রামে?

হ্যাঁ, চট্টগ্রামে। আমি ওখানে থেকে ড্রাইভ করে চলে এলাম। If you ask, how do I go there. I don't know. ওখানে জানতাম যে এই দিক দিয়ে যাওয়া যায়। পানি-টানির মধ্যে দিয়া একটা জিপ চালিয়ে চলে গেলাম। এর মধ্যে আরও একটা ব্যাপার ছিল। সেটা একটু বলে নেই। তাতে আমার নিজের জন্যেই ভালো হবে। I can't still believe. In the month of September or October খালেদ মোশাররফ একদিন বললেন, তোমাকে পাক্কা সোলজার বানাতে চাই। Do you want to go to Dhaka? আমি বলি ইয়েস, আই। বললেন যাও। তখন আমাদের একটা আইডেনটি কার্ড বানাতে হতো। আগরতলা গিয়ে একটা আইডেটিন্টি কার্ড বানালাম। So he wanted some information about a Power Station. প্রথমে আমরা মেলাঘর, তারপর কুমিল্লা থেকে দাউদকান্দি হয়ে ঢাকা। আমি এখনো অবাক হই এসব কী করে করলাম? মিলিটারি বলে ‘ডান্টি কার্ড দেখাও, ডান্টি কার্ড দেখাও’। আমি আইডেন্টি কার্ড দেখাতাম। কাঁহা যাতা হে? ক্যায়া করতা হে? আমরা বলতাম এটা ওটা।

 

আইডেন্টি কার্ডটা কে বানিয়ে দিতো?

আগরতলায় ছবি দিয়ে একটা কার্ডের মতো বানাত। এটা প্রচলন যে কীভাবে শুরু হয়েছে জানি না। পাকিস্তানিরা আইডেনটি কার্ড দেখতে চাইত। তো আমরা দেখিয়ে দেখিয়ে তিনটা ফেরি পার হয়ে চলে এলাম বাসায়। এলিফ্যান্ট রোডে থাকতাম। আমার বাবা বললেন, তুমি যে আসলা এখন যদি ওরা জানতে পারে তুমি মুক্তি বাহিনীর তাইলে আমাদের সবাইকে মারবে। So you cant stay. পরের দিনই ফিরলাম।


নিজের বাসাতে একরাতও থাকতে পারলেন না?

না, একরাত ছিলাম। বাবা বললেন, একরাত থেকে সকালে চলে যাও। তো রাত্রে কোনো রকমে থেকে ভোরে এসে বকুলকে নিলাম। সে বলল, হ্যাঁ। প্ল্যানটা সে পেয়েছে। ওটা নিয়ে ফেরত যাওয়ার সময় একটু মজা করলাম। মানুর মার বাসায় গিয়ে ধাক্কা দিলাম, কাকরাইলে। ও গালাগালি শুরু করল। তোমরা বখাটে ছেলে। আমার ছেলে ইন্ডিয়ায় যাবে না। এটা ওটা। যাই হোক আমরা দুইজনেই যাওয়ার সময় দেখেছিলাম আসার সময় ফেরিতে যারা যায়, তাদের আইডেনটি কার্ড চেক করে। তার পাশে দিয়ে যে কয়েকটা বোট যাচ্ছে তাদের চেক করে না। তখন আমরা বলি, চল বোটে যাই। তাহলে আর চেক করবে না। বাইচান্স কখন কী হয়ে যায়। এভাবেই চলে এলাম। পরে খালেদ মোশাররফ বলেছেন- Now you are a season soldier. তো এটা আমার খুব অবাক লাগে যে How did I do that? So what happened was চট্টগ্রামে ডিক্লেয়ার করলে আক্তার বলল মবিন ভাই, আমরা স্বাধীন। চলেন যাই। তো আমার যে জিপ গাড়িটা ছিল ওটা নিয়ে, আমার ছোটখাটো খাকি ড্রেস ছিল সেটা পরলাম। সবাই আমরা এসএমজি ক্যারি করতাম। ওটা নিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি। পাশ থেকে পাকিস্তানি সোলজাররা কাঁধের মধ্যে মেশিনগান নিয়ে যাচ্ছে। If we remember, Chittagong surrender a day after Dhaka. আরেকটা কথা বলে নেই। এর মধ্যে আমিতো ওখানে ডাক্তারি করতাম, কিছুদিন পরে খালেদ মোশাররফ এসে আমাকে একদিন বললেন যে, আই নিড ইউ। আপনি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার হবেন liaison between Bangladesh Army, Freedom Fighters and Indian Army.  

আমি বলি এটা আমাকে কেন দিচ্ছেন? তখন জানলাম, He was under scrutiny. ওরা সন্দেহ করছে, খালেদ মোশাররফ after the liberation war or liberation ক্যু-ট্যু করতে পারে। আমাদের বাদল গ্রুপ ছিল, অনেক ছেলে-পেলে ওটার সাথে জয়েন করছিল। তখন একটা নকশালাইজ মুভমেন্ট হচ্ছিল।


শহীদুল্লাহ খান বাদল?

হ্যাঁ, শহীদুল্লাহ খান বাদল। আমাদের অনেক রকম ছেলেপেলে ছিল। ওরা সন্দেহ করত খালেদ মোশাররফকে, ওরা যে আর্মস অমুনেশন দিচ্ছে সেটা সে অন্যদিকে রেখে দিচ্ছে। তো আমাকে আবার ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট চিঠিও দিয়েছিল। I should be allowed to any part of India সেটা করার জন্যে আমাকে প্রায়ই আগরতলা, কলকাতা, গৌহাটি, এখানে ওখানে যেতে হতো। তখন একদিন কলকাতায় কী কাজে যেন এসেছি। হঠাৎ দেখি আমাকে মেজর নুরুল ইসলাম নামে একজন খুঁজছে। তার আসল নাম নুরুল ইসলাম। ‘শিশু’ বলে সে সময় তাকে আমি চিনতাম খুব ভালো করেই। শিশু আমাকে বললেন, খালেদ মোশাররফ তোমাকে খুঁজছে। আমি বলি why? বললেন, He is injured. He is in Guwahati. He wants to you to go there immediately. নুরুল ইসলাম ছিলেন তখনকার প্রাইম মিনিস্টারের এপিসি। তখন আমি বললাম কীভাবে যাব? জানালেন, ইন্ডিয়ান এক আর্মি প্লেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তো আমাকে এয়ারপোর্টে নিয়ে গেল। ওখানে ক্যাপ্টেন মদন ছিল। ক্যাপ্টেন মদন, আমি আর পাইলট তিনজনে মিলে ছোট্ট একটা প্লেনে গৌহাটি গেলাম। গৌহাটি যেয়ে দেখলাম, খালেদ মোশাররফ কনশাস। একটা ছোট্ট স্প্লিন্টার ঢুকেছে। চোখটা বন্ধ হয়ে আছে। বললেন, মবিন তুমি এসেছ? will you take me to England? তখন আমরা ওকে বললাম, দেখেন আপনি যে এখানে আছেন, আপনাকে যদি ইংল্যান্ডে নিয়ে যেতে পারি তাহলে দারুণ পাবলিসিটি হবে যে, যুদ্ধ হচ্ছে। তিনি বললেন, “আমারে কলকাতায় নিয়ে যাও”। আমি বলি অফকোর্স। তারপরে আমরা তাকে ঐ ছোট প্লেনে করেই আবার গৌহাটি থেকে কলকাতায় নিয়ে এলাম। ওখানে প্রাইম মিনিস্টার তাজউদ্দীন, নুরুল ইসলাম শিশু, মনির সবাই ছিলেন। পরের দিন তাকে একটা ইনভেস্টিগেশন করার জন্য কনসেন্ট ফর্ম সাইন করতে বলা হয়। তার কেরোটিতে একটা এনজিওগ্রাম করতে হবে। খালেদ মোশাররফ সাইন করেননি, তাই ইনভেস্টিগেট হয় না। তখন ওরা কী করে খবর পেয়েছে যে, আমি খালেদকে মেরে ফেলতে পারি। খালেদ হয়তো বলতে পারে, তাকে আমরা লন্ডনে নিয়ে যাবো। ওখানে বড় আর্মি অফিসার ডাক্তার এসেছেন। ক্যাপ্টেন আমিনা হক ছিলেন। পরে জেনারেল হয়েছিলেন।

যাই হোক, আমরা মেসে প্রথমদিন খেলাম। দ্বিতীয় দিন আমাকে এক আর্মি অফিসার বললেন, Who are you? How do you come to India? I’m not supposed to stay in Delhi. So who is provide you all the money? How can you take Khaled Mosharraf to England to treatment? What is your source? বললেন, তোমার পাকিস্তানের সাথে লিঙ্ক আছে। সিআইএ’র সাথে লিঙ্ক আছে। আমি বললাম, What CIA? বলল, meaning of CIA. এরপর বলল, No. There is something wrong here. How to take him to England? Tell us, tell us. আমি খালি বলি I’m actually a field … soldier. আমরা ওরকম কিছু না। তো পরে খালেদ ভাইকে গিয়ে বললাম, খালেদ ভাই এরকম অবস্থা। সাইন করেন। কিন্তু তার এক কথা- না, আমি সাইন করব না। তখন for three days they keep me a one room. খাওয়া-দাওয়া দিত। Everyday you come. Look you are not going anywhere. Khaled Mosharraf not going anywhere. And we are making more enquiry about you. তিনদিন পরে খালেদ মোশাররফের শালা দিপু এলো। দিপু পরে বিরাট বিজনেসম্যান হয়েছিল। বিয়ে করছিল বাদলের বোন শিরিনকে। সুতরাং, They are inter related. ওরা এসে আমার সাথে দেখা করল। আমাকে রুম থেকে বের করে এনে জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে? আমি বলি, আমাকে তো একরকম আটকে রেখেছে। খালেদ ভাইকে সাইন করতে বলেন। সাইন করুক তারপর দেখা যাবে। এরপরে তিনি সাইন করলেন। আমাকে আবার রুমে নিয়ে পরেরদিন এক মেজরের সাথে ট্রেনে উঠিয়ে দিলেন। ফার্স্ট ক্লাসে। ওখানে রাম আর ছোলা। তালা বন্ধ করে আমরা দুইজনে রাম আর ছোলা খেতে খেতে এলাম।


রাম আর ছোলা?

ইন্ডিয়ানরা খুব রাম খায়। আর ছোলা ভাজা খায়।


রাম, ছোলা খেয়ে। ডিনার-টিনার কিছু না?

আমাকে সবসময় খাবার-দাবার দিয়েছে। তো ওখানে ডিনার হয়তো করছি। মনে নেই। খাওয়াতে আমার কোনোদিন অসুবিধা করে নাই। খাওয়া দিত।


লক্ষ্ণৌ থেকে কলকাতা?

লক্ষ্ণৌ থেকে কলকাতা পর্যন্ত এলাম। ডাইরেক্ট ট্রেন ছিল সেটাও মনে আছে। তো এসেই সকালে আমাকে শিবপুরে নিয়ে গেল। শিবপুরে সবাই কিন্তু পাঞ্জাবি, উর্দু কথাবার্তা বলে। বাংলায় কেউ কথা বলে না। এক বাঙালি লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসে বলে Mobin you are in a big trouble. I have no doubt you are innocent. But these people are suspecting. আর একবার যদি তোমাকে ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্সি নিয়ে যায়, তাহলে কিন্তু অনেক ঘোরাঘুরি করতে হবে। অনেক ভোগাবে। যুদ্ধের সময় অনেক কিছু হয়। তুমি কাউকে চেনো এখানে? 

আমি বলি কাউকে চিনি মানে, খালেদ মোশাররফকে চিনি। বললেন, বাংলাদেশ আর্মি খালেদতো ইনজুর্ড। আর কাউকে চেনো? হ্যাঁ, মতিনকে চিনি, হায়দারকে চিনি। আর উপরের কাউকে চেন? ওসমানীকে চিনি খুব ভালো করে। বললেন, will he know you? ফোন দেই? বলেছি হ্যাঁ। পরে ফোন করে কথা বলেছে। ওসমানী ওয়াজ ভেরি কাইন্ড। আমি জানতাম।

ওসমানী এককালে সিয়াটোল হয়ে স্কটল্যান্ডে ছিলেন কিছুদিন। স্কটল্যান্ডের গল্প বলতে খুব ভালোবাসতেন। আর একটু হুইস্কি খান। ঘণ্টা দুয়েক পরেই দেখি শেখ কামাল, তিনি তখন প্রথম ব্যাচের লেফটেন্যান্ট হয়েছেন। বিলেতে তিন বা চার মাসের কোর্স ছিল, সেটা করে এসেছেন। এডিসি হয়েছেন তখন। তো আমাকে একটা গাড়িতে করে শেখ কামাল নিয়ে গেলেন ওসমানীর কাছে। ওসমানী আমাকে বললেন, আমার এখানে থাক। ডাইরেক্টর হও হেলথ সার্ভিসের। আমি বলি ধুর, এখানে বহু ডাক্তার। তখন আমার ব্রাদার ইন ’ল খোরশেদ ছিল। স্কোয়াড্রনের শামসুল হক বর্ডার ক্রস করে গেছেন। মেজর আলম পাকিস্তান আর্মির সব। আমি বলি তোমার বহু পাগল আর্মি আছে। আমি এসব আর্মি-টার্মিতে ঢুকতে পারব না। ও বলে তুমি আর্মিতে কমিশন নাও। আমি বলি ধুর, ওসব হবে না। একরাত ছিলাম। তারপরে থ্যাংকইউ বলে আবার আগরতলায় চলে এলাম। তারপরের ঘটনা ছোট্ট করে বলি। তাহলে এটা শেষ হয়ে যাবে। জাফরুল্লাহ এর মধ্যে কিন্তু দু-তিনবার দেশে এসেছে। আমি এরকমভাবেই হাসপাতালের সাথে ইনভলব হয়ে গেলাম। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই ওসমানী বলেছেন তোমাকে কমিশন দেবো, এটা-ওটা দেবো। তখন তিনি সার্কিট হাউজের পাশে থাকেন। এর মধ্যে সেখানে তখন আবার এডিসি চেঞ্জ হয়ে গেছে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে শেখ কামালতো বিগ শট। হি ওয়াজ ওয়েটিং ফর হিজ ফাদার। তখন ক্যাপ্টেন নূর যে নাকি পরে শেখ সাহেবকে মারল। ও তখনকার এডিসি। ওকে আমি চিনতাম আগেই। ওসমানীর কাছে নিয়ে গেল। আমার নাম বলাতে সাথে সাথে ডাকল। আই ওয়ান্ট টু গো ব্যাক। কিন্তু এখানে কোন ট্রান্সপোর্টতো নেই। আমার পাসপোর্ট ছিল না। ওই সময় ভিসা ছিল। বাংলাদেশের এ রকম পাসপোর্ট। All I want is get me back to Delhi. এখানে কোনো প্লেন নাই। আমি যদি এভাবে যেতে চাই আমাকে কলকাতায় যেতে হবে। টিকিট কাটতে হবে। তো তখন ইন্ডিয়ান একটা অফিসার ছিল। ওকে ডাকল। ডেকে বলল যে ওকে কি দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছান যাবে? বলল, আজকে তো স্যার  নাই। It will recently within two or three weeks.


মানে এটা কখনকার ঘটনা?

দেশ স্বাধীন হওয়ার তিন সপ্তাহ পরে। এই তিন সপ্তাহ আমি বহু চেষ্টা করছিলাম and prove them in the cantonment. ইন্ডিয়ানরা ঢুকতেই দেয়নি তখন। ওসমানী বলেন যে, No. You are not allowed. আমাকেই ঢুকতে দেয় না, তোমাকে কী দিবে। আমি বলি Hospital.


মানে ফিল্ড হাসপাতালে আপনি ঢুকতে পারছিলেন না?

তখন অমাকে সিএমএইচ-এ ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমি তিন সপ্তাহে বহু চেষ্টা করেছিলাম। প্রফেসর সিরাজ উল্লাহকে বললাম। কেউ পারল না। এর মধ্যে জাফরুল্লাহ কোথা থেকে এসে পৌঁছাল। ওকে নিয়েও কয়দিন এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করলাম। তারপর দেখি যে কেউ নেই। সবাই বলে যেও না, যেও না। এই করব, সেই করব। আমি বলি Look, we have been back three times. জেনারেল ওসমানী বলাতে ইন্ডিয়ান একটা কার্গো প্লেন যাচ্ছিল দিল্লিতে, ওর পিছনে কোনো সিট-টিট নাই। ওখানে কোনোরকমে বসেই দিল্লি পর্যন্ত চলে গেলাম। Look, we have been back three times. প্রথমে আমাকে জিজ্ঞেস করল তোমার পাসপোর্ট নাই, যাবে কীভাবে? আমি বললাম, ভিসা আছে না, দেখ। ইংল্যান্ডে যখন লন্ডন এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম পাসপোর্ট! পাসপোর্ট! আমি বলি নো পাসপোর্ট।

 

ঢাকা থেকে কার্গো প্লেনে কোথায় গেলেন?

দিল্লি। দিল্লিতে আমাকে কয়েকবার বলেছে পাসপোর্ট না হলে তোমাকে ঢুকতে দেবো না। আমি বলি, দেখ আমি একবছর পর্যন্ত এভাবেই কাটিয়েছি। এই কাগজপত্র। পুরনো ভিসাটা আর কতগুলি চিঠিপত্র ছিল। নুরুল ইসলামের একটা চিঠিও ছিল।

 

এরপর আপনি বৃটিশ হাইকমিশনে ভিসার জন্য গেলেন?

নাহ। ওখান থেকে ডাইরেক্ট দিল্লি। আমি এখান থেকে দিল্লি গেছি। দিল্লি এয়ারপোর্টে বলে Where is your passport? আমি বলি আমাদের পাসপোর্ট নাই। But they are very sympathetic. আমাকে লন্ডনে যেতে দিলো। লন্ডনে গিয়ে যখন পৌঁছালাম, ইমিগ্রেশন বলে তোমার পাসপোর্ট? I said, we don’t have. অনেকক্ষণ বলার পরে প্রথমে রাগ করল। এরপর একটা রুমে বসিয়ে রাখে। একঘণ্টা পরে এসে বলে, Go back to your hospital. Don't move from there. Go to the police station.


তারপর এডিনবার্গে চলে গেলেন?

হ্যাঁ। আমার ’ল হসপিটাল। এডিনবার্গে তো আমি কোর্স করতাম ’ল হসপিটালে। সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার রুমটা ঠিকই আছে। আমার ছোট একটা গিটার ছিল। গিটার-টিটার সব আছে। তারা একটা টেলিভিশন প্রোগ্রামে আমাকে দেখিয়েছিল যে Khaled's war. ওখানে আমি কিছু লোককে চিকিৎসা দিচ্ছি। 

আর আপনি যদি এর সম্বন্ধে আরেকটু জানতে চান ক্যাপ্টেন আক্তারের বইয়ে লিখেছে। কে এম সিং এর একটা বই আছে। খুকুকে বললে ও হয়তো আমাকে একটা কপি দিয়ে দেবে। মেজর আক্তারের স্ত্রী। ও মারা গেছে কিডনি ফেইলর হয়ে। আরেকজন হলেন বীরপ্রতীক আলম।


বীরপ্রতীক আলম? 

ঢাকা ক্লাবে সবসময় থাকে। মোছটোছওয়ালা। আলম একটা বই লিখেছে Brave of Heart. বোধ হয়, বইটার বেশ কয়েক জায়গায় আমার ছবি দিয়েছে।


আপনারা তো যুদ্ধে অংশগ্রহণ, কন্ট্রিবিউট করলেন। জয়ী হলেন এবং ফিরে এলেন। এই সময়কালে পলিটিক্যাল যে মোটিভেশন মানে ইন্ডিয়ানদের, আমাদের পলিটিশিয়ানদের দুটো প্রশ্ন আপনি কিন্তু এর মধ্যে বলেছেন। তাজউদ্দীন বলেছিলেন ‘আমরাতো মারা যাব’। আমি এর আগে কখনও এই স্টেটমেন্টটা পাইনি। এটা ফার্স্টটাইম আপনার কাছে পেলাম যে উনি এ ধরনের কথা বলেছেন, তা-ও যুদ্ধ চলাকালীন।

অবশ্যই তখনতো … ওসমানী তো লন্ডনে গেলে দেখা করতেন। ডেপুটি স্পিকার শওকত আমার সাথে স্কটল্যান্ডে গিয়েছিলেন। তারপরে কর্নেল মাহবুব। যাকে মেরে ফেলা হলো মঞ্জুরের সাথে। He was very good friend of my wife. লন্ডনে গেলে প্রথমেই আমার বাসায় যেয়ে উঠত। লন্ডন ক্যান্টে, এখানে ওখানে। He actually gave me a hint. 


আপনি যেটা বলেছিলেন যে, আপনার একটা পলিটিক্যাল মোটিভেশন কাজ করছিল। যদিও আপনি খুব সক্রিয় রাজনীতি করেননি। কিন্তু আপনি বলেছেন যে, আমি পলিটিক্যাল। কিন্তু যুদ্ধের পর আপনি কেন দেশে আর পলিটিক্যালি ইনভলভ হলেন না। ফিরে গেলেন? 

না, আপনি যেটা বলছেন তা ঠিক, আমি কিন্তু পলিটিক্সে খুব একটা ইনভলভ ছিলাম না। দেখেন, to be honest did anybody in March wanted Bangladesh? beginning of the March? আপনি একটা লোক দেখাতে পারবেন না যে বলছে আমরা বাংলাদেশ চাই বা ইনডিপেনডেন্ট চাই।

 

ফার্স্ট মার্চ পর্যন্ত?

আমার তো মনে হয় তাই। মুজিবুর রহমান কিন্তু চাচ্ছিলেন আমাদের অটোনমি দাও, রাইটগুলি দাও। Tell me one person who say before March, forgive March say February who said we want Bangladesh. আমাকে একজন বলেন, পুরনো পত্রিকায় লিখছে যে আমরা স্বাধীনতা চাই। ওইভাবেই কথাটায় আসছিলাম, বলছি দেখেন। ওহ ১৯৪৭-এ আমরা এখন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সম্বন্ধে বলি, সোহরাওয়ার্দী সম্বন্ধে বলি- did they really think of Bangladesh? In the Forty, We had demanded lots of thing we got few things. But should you not have ask more. এটা সাতচল্লিশের আগের পলিটিক্স বলছি। আবার মনে করেন ৪৭ থেকে ৫৭ ধরেন। আমাদের উপরে পাকিস্তান সবসময় অত্যাচার বলবো না, ডিসপারেটি সবসময় দেখিয়ে এসেছে। আমি যে মেডিকেল কলেজের কথা বললাম ওখানে ছয়টা মেডিকেল কলেজ ছিলো- এখানে একটা। ওখানে মেয়েদের মেডিকেল আছে, এখানে নেই। এখানে কর্ণফুলী পেপার হচ্ছে, পশ্চিম পাকিস্তানে যাচ্ছে। সিল মেরে এখানে আসছে। Only we protested rightly so Bangla Bhasha. How dare Jinnah says that Urdu shall be and will be state language. ওটা আমরা প্রোটেস্ট করলাম। এমনকি তখনো আমাদের ওই জেনারেশনের টনক নড়েনি যে, আমাদের উপরে অন্যান্য অত্যাচারগুলো হচ্ছে। ওখানে ডেজার্টকে আমের বাগান করে ফেলা হলো। বেলুচিস্তানকে ইয়ে করে ফেলা হলো। ব্যানানা তৈরি করা শুরু করল। কীসে? যত টাকা আসত আমি এখন চিন্তা করি- The reason I'm saying that generation of the forty seven to fifty seven also failed. ওখানকার যারা ছিল পলিটিক্স করতো। তারা কোনোদিন বলেনি আমাদের উপরে অত্যাচার হচ্ছে, আমাদের ঠকানো হচ্ছে, স্কুল-কলেজে ভর্তি করানো হচ্ছে না। তারপরেও যদি আসেন দেখেন, এই যে পঞ্চাশের পরে ষাটের দিকে আসেন। এরা এখন সবাই বলে যে, আমরা তিন খলিফা, এটা ওটা বলে। Did they ever say Bangladesh? এই যে এতো ডিস্পায়ার হচ্ছে কেউ বলছে কোনোদিন? So we failed again. 


তিন খলিফা মানে চার খলিফার কথা বলছেন?

চার খলিফা না কি ছিল। ওই যে শাজাহান সিরাজ, আ.স.ম রব আরও কে কে ছিল না? এরা কোনোদিন বলছে? মতিয়া চৌধুরী বলেন, মেনন বলেন, এরা তো বিরাট বিরাট পলিটিক্যাল লিডার ছিল।


হ্যাঁ, কিন্তু মওলানা ভাসানী তো বলেছেন। কী বলেছেন?

উনিতো কাগমারী সম্মেলনে বললেন ওয়ালাইকুম আস্সালাম। এটাতো চুয়ান্নতেই বলে দিলেন। 

উনি বলেছিলেন? তাহলে খুব ভালো কথা। I will take my hat off.  কিন্তু উনি অর্গানাইজ করতে পারেননি ওনার পার্টিকে। আমি তো ছোটবেলায় খবর রাখতাম, যখন নাকি সোহরাওয়ার্দী বোধ হয় প্রাইম মিনিস্টার হন, তখন একটা দুর্ভিক্ষ হয়। আমি পল্টনের মধ্যে গিয়েছিলাম। তখন ভাসানী বলেছেন, আমারে চাইল দাও। আমি মাথায় করে করে নিয়ে গিয়ে গ্রামের লোককে খাওয়াব। সোহরাওয়ার্দী তখন বললেন যে, চাল যদি থাকে তাহলে তোমার মাথায় নিতে হবে না। লোকেরা তো এমনিই এসে নিয়ে যাবে। এ রকম একটা কথা বলেছিলেন। আমি জানি না আমাদের বাংলার Independent Bangladesh Movement eve Greater Bengal Movement এর কথা হচ্ছিল, কিন্তু বাংলাদেশ নামে আমরা একটা আলাদা দেশ হবো; এই সম্বন্ধে কেউ মুভমেন্ট করছে- আমার খুব একটা মনে ছিল না। আপনি বললেন, আমি খুব খুশি, Bhashani? yes, he is the great patriot. আর তারপরে যদি বলেন- স্বাধীনতা, স্বাধীনতা মানে কী? এটার ডেফিনেশনটা খুব ডিফিকাল্ট। স্বাধীনতা মানে কী এই যে আমরা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এলাম? স্বাধীনতা মানে তো এই না। এই যদি সত্যি সত্যি স্বাধীনতা হয় so are we free of anything? We are not free of anything at all. আমরা এখনও not free from hunger, যদিও এরা বলে বেড়াবে যে- আমাদের দেশে এখন ভিক্ষা নেই, এটা নেই, ওটা নেই। ঠিক আছে, আগের চেয়ে একটু বেটার আছে। কিন্তু আমাদের দেশে গরিব নেই এটা যখন বলে- দিস ইজ নট ট্রু। আপনি হাসপাতালে যান, দেখবেন চিকিৎসার অভাবে কত লোক মারা যাচ্ছে।


কিন্তু এত কষ্ট করে দেশ স্বাধীন করলেন, স্বাধীনতার পর দেশে না থেকে আপনি ফিরে গেলেন?

না। আপনি বললেন না দেশ স্বাধীন করলাম? আমিতো আর দেশ স্বাধীন করি নাই। But I wanted was এই যে, Oppression চাই  না। এই জন্যই করছিলাম। I didn't wanted Independent from Pakistan. I wanted independent from oppression. এই যে আমাদের উপর জুলুম হচ্ছে, by the British, by the India, by the Pakistan. Yes I wanted Bangladesh.  এই যে আমাদের বাংলাদেশের ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে, ফুটবল খেলছে, Yes I'm proud of them. I'm very pleased. দেশ উন্নত হচ্ছে- yes that is true. But there should be at least some short of equilibrium.  তো এই ইনডিপেনডেন্স তো আমরা পাই নাই। What is the different between Pakistan and Bangladesh? The time the Pakistan ruling class is to rule us poor ordinary people. Now Bangladeshi ruling classes created their rules. আপনি যদি ওইভাবে বলেন, তাহলে বলবো ইয়েস, আমি রাজনীতির ভেতরে involve. I'm not involve within BNP, Awami league. আপনি যদি বলেন Independence, no, we are not independent in true sense. 

And we also be beware so called Indian influence. তাদেরতো মোটিভ থাকবেই। Do you think they did help us? Just for the sake of Bangladesh. They help their own motive. They knew they can separate two part  তাহলে দুইটা ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হবে না। Can you imagine the money their saving every month? From the budget? Military budget? Billions of pound. তারা তো এখন রাস্তা দিয়েই চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি কেয়ারফুল না হয়, ওরা যেমন সুবিধা পাচ্ছে আমরাও পেতে পারি।


তাহলে আপনি বাংলাদেশের প্রসপেক্টটা কীভাবে দেখতে পারছেন এই মুহূর্তে?

বাংলাদেশের প্রসপেক্ট ভালো। ... Do you think our boys will be hundred percent flying the planes and all. What I see a future is bright. আমাদের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। কেননা we have achieved quite a lot already. আমাদের স্বাধীন ক্রিকেট দল আছে, ফুটবল দল আছে। But unfortunately the development is not spread out properly যাচ্ছে। তা আমরা আপনারা প্ল্যান করেও করা যায় না এ রকম। আমাদের টাকা যেগুলো আসছে, সেগুলো খুব গরিবদের কাছ থেকে আসছে। আমিতো খুব একটা মানুষের সাথে কথা-টথা বলি না। পেপার- টেপারও নিয়মিত পড়ি না। Present situation is quite bad. There no opposition, no political party. এটা হলে তো দেশ নিচের দিকে যাচ্ছে। আনফরচুনেটলি আমাদের পলিটিক্যাল সিস্টেমটায় এখনও ডেমোক্রেটিক প্রসেসটা শুরুই করলো না।


আপনি তাহলে ফিরে যাচ্ছেন, পরে ফিরছেন কবে আবার?

এর আগে প্রত্যেকবার এলেই ওই হাসপাতালে কাজ করতাম ভালো লাগত। এখন কিছুদিন পরে ঝগড়া হয়ে আবার ছেড়ে দিলাম। এবার খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলাম। আমার অন্য কোনো উপায় ছিল না।


আপনি শুরুতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল নিয়ে কথা বলছিলেন। মাঝখানে ইন্টারাপ্ট করেছিলাম। এটা আপনারই উদ্যোগ ছিল কিন্তু পরবর্তীতে …

আমারই শুধু না। জাফরুল্লাহরও ছিল। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, Post war আমরা একটা কিছু করব। এখানে প্রফেসর কাজী কামরুজ্জামান ইনভলব ছিলেন, কমিউনিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান, আলতাফ, বরকত আমরা সবাই দেশের জন্য ছিলাম। এই জন্যই তো এসেছিল সবাই। আমি আর জাফরুল্লাহ যদিও প্রথমে আসি। ওরা পরে এসেছিলেন। And we wanted to do something literary keep our studies and all. জাফরুল্লাহ বলে এফআরসিএস দরকার নাই। আনফরচুনেটলি কাজী রাগ করে একটা কমিউনিটি হাসপাতাল করেছে, মেডিকেল কলেজ। তার আরেকটা হাসপাতাল পাবনাতে আছে। হুইচ ডুয়িং ভেরি ওয়েল। And we wanted to do something literary keep our studies and all. 

প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে আমরা ওটার নামও দিয়েছিলাম বাংলাদেশ ফিল্ড হসপিটাল। শেখ সাহেব অবজেকশন দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ হাসপাতাল মানে এটাই এক নম্বর। তোমরা এটার ডামি করতে পার না। বাংলাদেশে তো আরও হাসপাতাল আছে। তোমরা নাম চেঞ্জ করো। তারপর জাফরুল্লাহ গণস্বাস্থ্য করলো। He started lot of good thing. আমরা এগ্রিকালচার প্রথম শুরু করলাম। তারপরে জুতা, হ্যান্ডব্যাগ তৈরি, মেয়েদেরকে ড্রাইভার করা।


আমরাতো একটা অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি?

অবশ্যই। তবে আমাদেরকে একটুখানি শুরুর থেকে শুরু করতে হবে। এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //