আনু মুহাম্মদের বিশেষ সাক্ষাৎকার

করোনার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে

আনু মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে কথা বলেছেন- বাজেট, করোনাকালীন অর্থনীতি, সরকারের নীতি, দুর্নীতির বিস্তার ও জনকল্যাণের নৈরাজ্য প্রসঙ্গে, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- এম এইচ রশিদ

করোনাভাইরাস নজিরবিহীন সংকট তৈরি করেছে। এই সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটুকু সফল বলে আপনি মনে করেন?

করোনাভাইরাস পৃথিবীর সবদেশেই আকস্মিক আঘাত হেনেছে। এটার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। এই ভাইরাস পৃথিবীর সবদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের সংবেদনশীলতাকে একটি পরীক্ষায় ফেলেছে। পৃথিবীর অনেক দেশই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।  কোনো কোনো দেশ কিছু কিছু ক্ষেত্রে উত্তীর্ণ হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশ সবগুলোতেই খারাপ করেছে। ঘটনাক্রমে আমাদের করোনা আক্রান্ত কম। হতে পারে সেটি পরীক্ষা কম হচ্ছে সেই কারণে। আমরা যদি ধরেও নেই আক্রান্ত কম; কিন্তু এত কম আক্রান্ত হলে হাসপাতালে চিকিৎসা, টেস্ট ও অক্সিজেন সেবা ভালো পাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো মানুষ বিপাকে পড়েছে। অন্যান্য রোগের রোগীর চিকিৎসা সংকট তৈরি হয়েছে, মাতৃমৃত্যু বেড়েছে। ঢাকার বাইরে আইসিইউ বেড নেই, অক্সিজেন নেই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নাজুকতা উন্মোচন হয়েছে। জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের সংবেদনশীলতার অভাব, জনগণের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও তার চাহিদার কথা রাষ্ট্রের কী পরিমাণ অনীহা পরপর দুই অর্থবছরের বাজেট তার প্রমাণ। হাসপাতাল, বেড, চিকিৎসক-নার্স, অন্যান্য যন্ত্রপাতি নেই। এরপরও স্বাস্থ্য বাজেট দেখলে মনে হয়, করোনা বলতে কিছু নেই। এই পরীক্ষায় এ রাষ্ট্র ফেল করেছে।

আরেকটি পরীক্ষায় ফেল হচ্ছে- যারা নিয়মিত আয় করতেন তাদের আয়ের পথ করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে। যারা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন এই রকম জনসংখ্যা ৫ শতাংশও হবে না- যারা সরকারি, আধা সরকারি ও বড় ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই ধরনের লোকছাড়া কারও নিরাপদ নিশ্চিত আয় নেই। শ্রমজীবী তো বটেই করোনাকালে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিল্পী কারও বেতন অর্ধেক, কারো চাকরি চলে গেছে, কেউ বিনা বেতনে ছুটিতে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা ভয়াবহ বিপর্যয়ে আছেন। মানুষের আয় কমে গেছে; কিন্তু তাদের বাড়ি ও যাতায়াত ভাড়া বেড়েছে। সরকার নিজেই এসব বাড়াচ্ছে। করোনাকালে পাটকল, চিনিকল বন্ধ হয়েছে, গার্মেন্টস থেকে লোক চলে গেছে। শুধু সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে পাঁচ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন।

পৃথিবীতে এমন দেশ কম পাওয়া যাবে, যারা করোনাকালে মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট করেছে। এমন সরকার কম পাওয়া যাবে, যারা দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যবস্থা করেনি। লক্ষ-কোটি টাকার প্যাকেজের কথা বলা হয়; কিন্তু এটি করা হয়েছে বৃহৎ ব্যবসায়ীদের জন্য। এখানে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু রাখা হয়নি। করোনাকালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে করোনাকালে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণে। অন্যান্য দেশে করোনাকালে লকডাউন দিতে বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক সমর্থন দেওয়া হয়েছে, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলোর কোনো কিছু না করার কারণে লকাডাউন কার্যকর হয়নি এবং ব্যাপকসংখ্যক মানুষ আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছেন। এ কারণে অনেকের লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে, বিশাল জনগোষ্ঠী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে না। করোনাকালে মানুষের জন্য বিপর্যয় অনেক বেশি নেমে এসেছে এবং সরকার এই জায়গায় পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ব্যর্থতা অর্থ হচ্ছে সারাপৃথিবীর রাষ্ট্র নায়কদের যে পরীক্ষা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ সরকার বড় ধরনের অকৃতকার্য হয়েছে।

বাজেট ঘোষণায় বলা হয়েছে এটি জীবন ও জীবিকা রক্ষার বাজেট। আপনার কাছে কি মনে হয়- সরকার দুর্যোগ কাটাতে সঠিক নীতি গ্রহণ করতে পেরেছে?

করোনাকালে বাজেটে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা স্বাস্থ্য খাত। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা এখন সবার চোখে ধরা পড়ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ব্যবসার বিষয় নয়। এটি অবশ্যই রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে নিতে হবে। বিশ্বের বহু দেশ পাবলিক হেলথকেয়ার সিস্টেম চালু করছে। যেসব দেশে এটি শক্তিশালী ছিল তারা করোনা মোকাবেলায় অনেক সফল হয়েছেন। স্বাস্থ্য খাত যারা বেসরকারিকরণ করতে গেছে, তারাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যেমন- ভারত। তাদের স্বাস্থ্য খাত বেসরকারিকরণ হয়েছে। বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে যান; কিন্তু করোনাকালে ভারত বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এটি ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য খাতের বাণিজ্যিকীকরণে ফল। বাজেটে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সরকারীকরণে মনোযোগ থাকা দরকার ছিল।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাশাপাশি আরেকটি বিষয় হচ্ছে, জাতীয় সক্ষমতা। আমাদের এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আছে; কিন্তু করোনার মোকাবেলার জন্য কী কী গবেষণা হলো বাংলাদেশে? জাতীয় সক্ষমতার কী পরিচয় আমরা দেখলাম? টিকার জন্য হাহাকার। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা। আমরা এখন অনিশ্চিত টিকার জন্য আমাদের কী হবে। টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা কেন থাকবে না। সক্ষমতা বাড়াতে শিক্ষা খাতে, গবেষণা খাতে যে ধরনের বরাদ্দ দেওয়া উচিত, বাজেটে তা দেওয়া হয়নি। প্রকৃত গবেষকরা যেন গবেষণায় আসেন, সেই ব্যবস্থা না করে সরকারের তোষণ করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে একটি বিজ্ঞাপন দেখলাম উন্নয়ন গবেষণার পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এর অর্থ হলো সেইসব গবেষণা অর্থায়ন করা হবে, যারা সরকারের উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করবে। এটি গবেষণার উল্টো বিষয়। অন্যদিকে যেসব খাতে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ বেশি। এসব খাতে এমন প্রকল্প আছে, যা বাংলাদেশের জন্য আর্থিকভাবে বোঝা হবে এবং অসুখ তৈরির কারখানা হবে।

অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, এটি জীবন ও জীবিকা রক্ষার বাজেট; কিন্তু জীবন রক্ষার জন্য এমন একটি আর্থিক কাঠামো করতে হবে, যেন জীবন অসুস্থ না হয়ে পড়ে। অসুস্থ হলে যেন চিকিৎসা হয়। এই দুই ক্ষেত্রেই বাজেট ফেল করছে। জীবিকা হলো কর্মসংস্থান যেন না কমে। সরকার নিজেই অসুখ তৈরির কারখানা করেছে। যেমন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এককভাবে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে। এটি যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, তার থেকে দশভাগের একভাগ খরচ দিয়ে এর থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এই ব্যয়বহুল প্রকল্প আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ততা বাড়াবে, বিদ্যুতের দাম বাড়াবে এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলবে। এরপর মাতারবাড়ী, রামপালের জন্য বড় বরাদ্দ আছে। এগুলো উন্নয়ন প্রকল্প নয়- এগুলো বিপর্যয় সৃষ্টি এবং অসুখ তৈরির কারখানা। 

এ ছাড়া অবকাঠামোখাতে সড়ক, সেতু, ভবন প্রত্যেকটির নির্মাণ খরচ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। জনগণের টাকায় বড় বড় ব্যয়ের প্রকল্পের বরাদ্দের বড় অংশ দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট হচ্ছে। এই বাজেট জীবন-জীবিকা রক্ষার তো নয়ই-এটি যেভাবে প্রনীত হয়েছে যারা বড় বড় ব্যবসায়ী তারা তো খুশি। তাদের খুশিটাও যুক্তিযুক্ত। করপোরেট করসহ তারা অনেকভাবে সুবিধা পেয়েছে। এমন এমন প্রকল্পে বড় অঙ্কের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এতে তাদের সুবিধা হয়েছে। সুতরাং সম্পদ কেন্দ্রীভবনের প্রক্রিয়া বাজেটে জোরদার হয়েছে; কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য তেমন গুরুত্ব নেই। 

বাজেট বিষয়ে আরেকটি কথা হল আমরা বলে আসছি অর্থবছর জানুয়ারি অথবা বাংলা নববর্ষ অনুসারে এপ্রিল থেকে করা হোক। এটি করা গেলে মে-জুনে মানুষ বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ব্যাপক দুর্নীতির যে সুযোগ পায়, সেটি বন্ধ হবে। এই সুযোগটি কমে যাবে বলেই হয়তো সরকার এই সহজ সিদ্ধান্তটি নিতে পারছে না। 

কালো টাকার অর্থনীতি নিয়ে নানা আলোাচনা হচ্ছে। সরকারও ক্রমাগত সুবিধা দিচ্ছে। আপনার মূল্যায়ন কী?

করোনার কারণে কালো টাকার মালিকরা অসুবিধায় পড়েছেন। তারা বিদেশেও যেতে পারছেন না, পাচারও করতে পারছেন না। অর্থ পাঠানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে কালো টাকা পাচার হওয়ার তুলনায় দেশে জমা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে চাপ আছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার। যেহেতু সরকারের ঘনিষ্ঠজনদের সুযোগ আছে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হওয়া। সুতরাং তাদেরকে সুবিধা দেওয়ার জন্য, চোরাই টাকার মালিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ‘মানবিক’ দৃষ্টি দিয়েছে সরকার। এ বছরে সবচেয়ে বেশি সাদা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এটি সিগন্যাল দেওয়া যতবেশি কালো টাকার মালিক হবেন তত সুবিধা পাবেন।

করোনাকালে দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হচ্ছে। এদের সহায়তায় সরকারের কর্মসূচি কি যথেষ্ট?

অনেক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। সমীক্ষার প্রয়োজন নেই, সামাজিক জীবনের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, কত মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এক করোনার ধাক্কাতেই দারিদ্র্য পরিস্থিতির এ রকম অবনতি কেন হয়? দারিদ্র্যের হিসাব-নিকাশ আগে থেকেই ত্রুটিপূর্ণ। একটি বিশাল জনগোষ্ঠী, যাদের আগে দেখানো হয়েছে দরিদ্রসীমার ওপরে, তাদের জীবন-জীবিকা সবই একটা সরু সুতার ওপর ঝুলে ছিল। স্থায়ী বা স্থিতিশীল, নিরাপদ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, এ রকম মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে ৫ শতাংশের বেশি হবে না। ৮০ শতাংশই নাজুক অবস্থায়, অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটান। এটি করোনা পূর্বকালীন অর্থনীতির কাঠামোর ফলাফল। এমন অবস্থা কেন হবে যে, একটা ধাক্কা লাগলেই পড়ে যাবে। আসলে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই। যা সামান্য আছে তাতেও বিস্তর দুর্নীতি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করা ঘায়েল করা। জিডিপি, দরিদ্রতার হার, মাথাপিছু এগুলোর পরিসংখ্যান আপডেটেড না, একটির সঙ্গে আরেকটির মিল নেই, সংখ্যার মধ্যে ম্যানুপুলেশন আছে। সরকারের আকাঙ্খা অনুযায়ী হিসাব মেলানো হয়। যেমন মাথাপিছু আয় এমন সময় বাড়লো, যখন চারিদিকে মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। একটা মানুষের মাথাপিছু আয় ১৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ চারজনের পরিবারের মাসিক আয় ৬৪/৬৫ হাজার টাকা। হিসেবে দেখা যায় ১১ কোটি মানুষের মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকার বেশি না। বাকি ৩৫ হাজার টাকা গেল কই। গবেষণা করলে দেখা যাবে, বাস্তবে আয় নেই কিন্তু হিসাবে দেখানো সেই আয় চলে যাচ্ছে কিছু লোকের পকেটে, যাদের জন্য সাধারণ মানুষের ওপর সরকার দমনপীড়ন করছেন, এই শাসন চালাচ্ছেন। করোনাকালে তাদের সহায়তায় যা দরকার ছিল, তার ধারে কাছেও বাজেটে কোনো বরাদ্দ নেই।

দেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা নাজুক। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হলো?

আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা হলো, ধনিক শ্রেণি তৈরি করার একটি মাধ্যম। কোটিপতি তৈরি যন্ত্র বলা যায় কিংবা কোটিপতি শ্রেণির মানুষদের আরও বেশি সম্পদ তৈরির প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক সমগ্র ব্যাংকিং খাতটাই জড়িত। এই কাজে সরকারের আপত্তি আছে তা মনে হয় না। আপত্তি থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ঘটনা ঘটল তার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো। বেসিক ব্যাংকের মতো ঘটনা ঘটলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেকে পাচার করছেন, আত্মসাৎ করছেন। যারা করছেন তারা সরকারিভাবে ক্ষমতাবান। এদের ধরার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানই কাজ করছে না। কিছু লোকের লবিং এবং ওপরের নির্দেশে যদি চলে, তাহলে বিশৃঙ্খলা তো থাকবেই। 

করোনাকালে আয় কমলেও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর কারণ কী?

করোনাকালে বিপুলসংখ্যক মানুষের আয় কমলেও, কিছু মানুষের আয় কিন্তু বেড়েছে। ধনী বৃদ্ধির হারে শীর্ষে বাংলাদেশ। এই প্রক্রিয়া কাউকে না কাউকে ঠকিয়ে হয়েছে। সরকারের কোনো তদারকি নেই। বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে। সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। বেশির ভাগ মানুষের যেসব পণ্য দরকার, সে সব পণ্যের দাম বেশি; কিন্তু অল্প মানুষের যেটি ব্যবহার সেটির দাম বাড়ছে। অন্য দিকে বাড়ি বাড়ছে। সরকার এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে পণ্যের দাম বাড়ছে। সরকার নিজেই পানির দাম বাড়াচ্ছে। মানুষকে রক্ষার পরিবর্তে বিপদে ফেলার নীতি গ্রহণ করছে। এক দিনের নোটিসে ইঞ্জিনচালিত রিকশা বন্ধ করা হয়েছে; কিন্তু তাদের কথা চিন্তা না করে, বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জীবন-জীবিকা যেখানে রক্ষা করার কথা, সেখানে হুমকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। জীবিকাকে বারবার অনিশ্চিয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে লাখ লাখ মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। 

১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর কার্যকর হচ্ছে। এটি কীভাবে করলে জাতীয় উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে। 

যে সমস্ত প্রকল্প জনগণের জন্য ক্ষতিকর সেটি বন্ধ করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠন করতে হবে। পাবলিক হেলথ কেয়ার গড়ে তুলতে হবে। এখন বাজেট পুনর্বিন্যাস করতে হবে। বড় বড় প্রকল্পে যে বরাদ্দ আছে, সেটি স্বাস্থ্য খাতে নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা ও গবেষণাখাতে ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে। এতে অর্থের সমস্যা হবে না। কারণ বড় বড় প্রকল্পে অনেক বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন করলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে এবং জনস্বার্থ কিছু ক্ষেত্রে ক্ষুণ্ণ হবে। এগুলো বাদ দিতে হবে। এর পরিবর্তে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ব্যবসার বিষয় না রেখে রাষ্ট্রের দায়িত্বে সম্প্রসারণ করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার নৈরাজ্য দূর করতে উদ্যোগ নিতে হবে। যেন টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হয়। পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থাসহ সামাজিক অর্থবহ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাণ ও প্রকৃতি মানববিনাশী সব প্রকল্প বন্ধ করা দরকার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //