‘পুরনো ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজার ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি’

বর্তমানে বিশ্বের মানবস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের নতুন সংকটের নাম ই-বর্জ্য। ই-বর্জ্যর বিশাল ক্ষতির থেকে দেশকে বাঁচাতে বিশেষভাবে কাজ করছে সোয়াপ। নতুন ডিভাইস কিনার পাশাপাশি পুরাতন বা সেকেন্ড হ্যান্ড ডিভাইস কেনার চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।

দেশের মানুষদের সাধ্যের মধ্যে তার পছন্দের পণ্য সার্ভিস ওয়ারেন্টিসহ তুলে দিতে এবং ই-বর্জ্য বিশাল ক্ষতির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে বিশাল ভূমিকা রাখছে একমাত্র রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম সোয়াপ। ২৪ মাসে প্রায় ৫০ গুণ বড় হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কাজ করছেন স্যামসাং, শাওমি, অ্যাপল, বাজাজের মতো লিডিং প্রতিষ্ঠানের সাথে। রাজধানীর বনানীর রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম সোয়াপের প্রধান কার্যালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সোয়াপের প্রধান নির্বাহী মো. পারভেজ হোসেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন মিরাজুল ইসলাম জীবন। 

সোয়াপের শুরুর গল্পটা যদি বলতেন?

ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইবিএতে পড়াশোনাকালীন নিজের জন্য পুরনো ল্যাপটপ কিনতে গিয়ে বেশ সমস্যার মুখোমুখি হয়, সেই থেকে ভাবতে শুরু করি এমন একটি সল্যুশন যদি তৈরি করা যায়, যেখানে যে কোনো মানুষ যে কোনো প্রান্ত থেকে একটি প্ল্যাটফর্মে পুরনো ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট কেনা এবং বিক্রি করার সুবিধা পাবেন। নিজের ডিভাইস কেনার সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো, মানুষের মধ্যে তো পুরনো জিনিসের চাহিদা রয়েছে। তখন থেকেই পুরনো ল্যাপটপ বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কেনাবেচার একটি ব্যবসা গড়ে তোলার চিন্তা মাথায় আসে। এই চিন্তা থেকেই রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম সোয়াপের (SWAP) যাত্রা শুরু।

রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আসলে কি? বিষয়টি যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন।

আসলেই শব্দটার সাথে অনেকে পরিচিত না। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাস্টমাররা। ই-কমার্স হলো ওয়েবসাইট থেকে ক্রেতারা তাদের পছন্দ মতো নতুন পণ্য মূল্য দেখে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অর্ডার করেন। প্রতিষ্ঠান অর্ডার পেয়ে ক্রেতার নির্দিষ্ট ঠিকানায় পণ্যটি ক্যাশ অন ডেলিভারি দেয়। ক্রেতা সেটি টাকা দিয়ে বুঝে নেন। আর রি-কমার্স হলো পুরনো পণ্য কাস্টমারের কাছ থেকে আমরা কিনে নিচ্ছি। সুতরাং এটা হলো রিভার্স ই-কমার্স। যেখানে আপনি ই-কমার্স থেকে নতুন পণ্য কিনছেন, সেখানে আমরা পুরনো পণ্য বিক্রি করার প্ল্যাটফর্ম দিচ্ছি। এটাকেই বলা হচ্ছে রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম।

সোয়াপের সেবা বা পণ্য সম্পর্কে জানতে চাই।

সোয়াপ বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র নির্ভরযোগ্য রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাফর্মে সোয়াপ একটি কাস্টমার টু বিজনেস (সিটুবি), বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) এবং কাস্টমার টু বিজনেস টু কাস্টমার (সিটুবিটুসি) মার্কেটপ্লেস হিসেবে কাজ করে, যেখানে গ্রাহকরা তাদের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক্স ও অটোমোবাইল কিনতে, বিক্রি করতে বা অদল-বদল করতে পারেন।

এখানে ব্যবহারকারীরা নানা প্ল্যাটফর্ম, পেমেন্ট পদ্ধতি ও পরিষেবামূলক বিকল্পগুলো ব্যবহার করতে পারেন নির্ভরযোগ্যভাবে ও সামর্থ্য অনুযায়ী। অনেক নিম্ন আয়ের উপার্জনকারীদেরও পণ্য ক্রয়, বিক্রয় এবং বিনিময় করতে প্ল্যাটফর্মটি সক্ষম, যা উদীয়মান ই-কমার্স বাজারে অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

সারাদেশের আগ্রহী গ্রাহকরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন ঘর বসে সহজে তাদের পুরনো পণ্য বিক্রি করতে পারেন। সেই সাথে তাদের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক পণ্যের বিনিময়ে শুধু ন্যায্য দামই নয়, বরং কম দামে নতুন পণ্য কিনতে পরেন সে দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সোয়াপ। এ বিষয়ে গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা ও পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের তাদের ই-বর্জ্য যথাযথভাবে বর্জন করার সুযোগও দিয়ে থাকে রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম।

এই প্ল্যাটফর্মে কী ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে?

প্রথমে আমরা পুরনো মোবাইল ফোন দিয়ে কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করি। পরে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কোম্পানির ল্যাপটপ ও গ্যাজেট যুক্ত হয় ক্যাটাগরিতে। গ্যাজেটের মধ্যে স্মার্টওয়াচ, ট্যাবলেট, আইপ্যাড, অ্যাক্সেসরিজ। এছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাইক, গাড়ি ও ফার্নিচার এসব পণ্য নিয়ে কাজ করছি।

আপনারা পুরনো পণ্যের এক্সচেঞ্জ সুবিধা দিয়ে থাকেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাই।

এ সেবাটা আমরা দুইভাবে দিয়ে থাকি। একটা হলো কাস্টমার যদি ঘরে বসে তার পুরনো ফোন, বাইক বা ল্যাপটপটি বিক্রি করতে চান, তাহলে ওই কাস্টমারকে বিক্রির জন্য আমদের এখানে ওয়েবসাইটে অনুরোধ করতে হবে। অনলাইনে প্রক্রিয়ার মধ্যে উল্লেখ করতে হবে আপনি কোন পুরনো পণ্যটা বিক্রি করে কোন নতুন পণ্যটা নিতে চান। তাহলে আমাদের টিমের সদস্যরা সাথে সাথে বাসায় গিয়ে ওই পুরনো পণ্য দেখে নির্দিষ্ট দাম দিয়ে নতুন পণ্যও দিয়ে আসবেন। যেমন একটা স্যামসাংয়ের ফোন নিতে চান। ফোনটার দাম ৩০ হাজার টাকা। এখন আপনার পুরনো ফোনের দাম ১২ হাজার টাকা। আপনি পুরানো ফোন দিয়ে বাকি ১৮ হাজার টাকা দিয়ে নতুন ফোনটা নিতে পারবেন। একই স্টাইলে বাইক বা ল্যাপটপটিও এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন।

রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম সম্ভাবনার জায়গা কতটুকু বলে মনে করেন?

বাংলাদেশে পুরনো পণ্যের মার্কেটের আকার অনেক বড়। আমরা একটা রিসার্চ করেছি। সেখানে দেখা গেছে এই মার্কেটে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি পুরনো ইলেকট্রনিক পণ্য রয়েছে, যা চাইলেই বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু দেখা যায় যে, ৫০-৬০% পণ্য বিক্রিই হয় না। বিশ্বে প্রতি বছর ১১% করে এই বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীতে পুরনো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মার্কেটটা নতুন মার্কেটের চেয়ে দ্বিগুণ বড় হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন স্মার্টফোনের বাজারের চেয়ে পুরানো বা ব্যবহার করা ফোনের বাজারটা তিনগুণ বড় হবে।

প্রতিষ্ঠানের কাজের উদাহারণ দিলেই আরও ভালো বুঝতে পারবেন। মাত্র ২৪ মাস বয়সী এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন ১০০ জন কর্মী । মাত্র ২৪ মাসে প্রায় ৫০ গুণ বড় হয়েছে সোয়াপ। স্যামসাং, শাওমি, অ্যাপল, বাজাজের মতো লিডিং প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার মানুষকে এই বিজনেসের সাথে কানেক্ট করেছে সোয়াপ। বর্তমানে আমাদের রেজিস্টার্ড গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার। সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে আমাদের অ্যাপটি। একদম প্রথম মাসে মাত্র ১৭ লাখ টাকা আয় হলেও গত নভেম্বর মাসে সোয়াপের আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ কোটি টাকায় এবং প্রতি মাসে প্ল্যাটফর্মটির সেল বাড়ছে প্রায় ১০ শতাংশ।

আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাস্টমারদের কাছে এই সেবাটি পৌঁছে দেওয়ার। প্রথমে ঢাকা থেকে এটি শুরু করেছিলাম। এখন আমরা ২৬টি জেলায় কাজ করছি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬৪টি জেলায় সেবাটি পৌঁছে দেওয়ার। রাজধানীতে পুরনো পণ্য বিক্রির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ সুযোগটা নেই। আমরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন লজিস্টিক কোম্পানি, ফোন কোম্পানি, বাইক ও গাড়ি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের বিশ্বাস, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এই স্বপ্ন সফল হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //