কবিরা রাজনীতি-নির্লিপ্ত থাকতে পারে না: রেহমান রাহী

জ্ঞানপীঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত একমাত্র কাশ্মীরি কবি রেহমান রাহী। সিয়াহ রুদ জায়েরেন মানয কবিতাগ্রন্থের জন্য তিনি ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। গ্রেটার কাশ্মীর পত্রিকায় ইংরেজিতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটির অংশবিশেষ ভাষান্তর করেছেন ধ্রুব সাদিক

আপনি কি কাশ্মীরি ভাষা ও কবিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত?

চিন্তিত কিন্তু দুঃখিত নই। কারণ কাশ্মীরে প্রতিনিয়ত নতুন লেখকের জন্ম হচ্ছে। আমাদের একটা ভালো সংখ্যক সিরিয়াস পাঠক আছে যারা কাশ্মীরি সাহিত্য পড়ে এবং তারপর মন্তব্য করে এবং লেখে। এই লোকজন বুঝতে পেরেছে যে কাশ্মীরি ভাষায় লেখা একটি গুরুতর বিষয়।

কাশ্মীরি সীমাবদ্ধ ভাষা নয়। এই ভাষার রয়েছে অসামান্য শক্তি। মাঝে মাঝে কবিতা লেখার সময় ফার্সি, সংস্কৃত, উর্দু বা এমনকি কাশ্মীরিতে কোনো শব্দ পাওয়া যায় না; কিন্তু কাশ্মীরি ভাষার প্রকৃতি এমন যে আমি নতুন শব্দ তৈরি করতে পারি, যা পরে গৃহীত এবং প্রশংসিত হয়েছে।

আমাদের স্কুল এবং কলেজের বাচ্চাদেরও আলাদাভাবে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত যাতে তারা কাশ্মীরি সাহিত্যে মনোযোগী হয়। যদি কাশ্মীরি জাতিকে সত্যিকার অর্থে টিকে থাকতে হয়, তবে তা কেবল কাশ্মীরি ভাষার মাধ্যমেই টিকে থাকবে। না হলে কাশ্মীরি জাতি হবে আত্মাহীন জাতি। 

বিজেপির উত্থান কীভাবে দেখছেন? এটা কাশ্মীরের জন্য কী ইঙ্গিত করে?

সংকীর্ণ চিন্তাধারার লোকেরা যখন ক্ষমতায় আসে তখন সবসময় কিছু না কিছু চিন্তার কারণ থাকে। তারা মনে করতে পারে তারা নিজেদের মধ্যে সঠিক; কিন্তু তারা তা নয়। উদাহরণ হিসেবে মোদির কথাই ধরুন। তিনি একজন হিন্দুত্ববাদী মানুষ এবং তিনি মনে করতে পারেন হিন্দুত্ব একটি মহান দর্শন। মোদি বা অন্য ভারতীয়রা যদি মনে করেন যে হিন্দুত্ব তাদেরকে কিছু ঐতিহাসিক পরিচয় প্রদান করে, এই দৃষ্টিকোণ থেকে এটা ঠিক আছে। হিন্দুত্ব সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তখন যখন তারা রাজনীতির সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হিন্দুত্বকে অবলম্বন করে।

আমরা প্রায়ই কাশ্মীরে হত্যার কথা শুনি। আমরা শুনি রাস্তার ধারে বা প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সময় কাউকে গুলি করা হয়েছে। বাড়িতে ঢুকে মানুষ হত্যার কথাও আমরা শুনি। বর্তমান সময়ের আরেকটি সমস্যা হলো দলীয় রাজনীতির অপচ্ছায়া এবং যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া। আমার তরুণবেলায় তরুণেরা রাজনৈতিক দলগুলোকে দার্শনিক ঘাঁটি হিসেবে দেখত। তরুণেরা রাজনীতিতে আকৃষ্ট হতো মূলত দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক দর্শন ছিল বলে।

কাশ্মীরের মতো অঞ্চলে একজন লেখক বা বুদ্ধিজীবীর ভ‚মিকা কী বলে আপনি মনে করেন?

কবিরা রাজনীতি-নির্লিপ্ত থাকতে পারে না। একজন লেখক বা কবির প্রাথমিক ভূমিকা হলো তার নৈপুণ্যের মাধ্যমে আন্দোলন ও প্রতিবাদ করা। তার ভূমিকা পাঠককে আন্দোলিত করা এবং যন্ত্রণা অনুভব করানো। কবি রিপোর্ট করেন না। এটা সাংবাদিকের কাজ। সাংবাদিক ব্যাখ্যা করেছেন যে এই পরিস্থিতিতে এই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। কবির কাজ হলো হত্যাকাণ্ডকে এমনভাবে চিত্রিত করা যেন এটি পাঠকের সামনে ঘটেছে এবং যেন পাঠক নিজেই নিহত হচ্ছেন। একটি কবিতার জীবন্ত বাস্তবতা যেন পাঠকের আত্মাকে নাড়া দেয়। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //