জনসমর্থনের নির্ভরতায় নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ নিক বিএনপি: আমিনুল ইসলাম আমিন

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন সরকারের এক দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে দেশে গণ-আন্দোলন তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপির এই গণ-আন্দোলনকে মোকাবিলা করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সাম্প্রতিক দেশকালের কাছে বর্তমান রাজনীতির এরকম একটি প্রেক্ষাপটে নিজেদের অবস্থানের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অনিন্দ্য আরিফ...

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে আপনারা অনড় অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু বিএনপি আপনাদের এই অবস্থানকে মানতে চাচ্ছে না।
এখানে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়টি মুখ্য নয়। সংবিধানে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আমরা এই নির্দেশনার বাইরে যেতে পারব না। আর সরকার কখনো নিজে নির্বাচন করে না, করে নির্বাচন কমিশন। সরকার সেখানে একটা সহায়তা প্রদানকারীর ভূমিকা পালন করে। এখানে নির্বাচনকালীন সরকার একটা রুটিন কাজের দায়িত্ব পালন করে। তারা নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারি না। আর সংবিধান এমন একটা জিনিস, কারও খেয়ালখুশিমতো এটা পরিবর্তন করা যায় না। জনগণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান পরিবর্তন করা যায়। তবে সেখানে এই জনগণের সংখ্যা কত, সেটাও বিবেচ্য। এটা কোনো মামার বাড়ির আবদার নয় যে, চাইলেই সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। সেই বিবেচনায় বিএনপির এখনকার দাবির কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। আর নির্বাচনকালীন সরকার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। এখানে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ২০১৪ সালের মতো অগ্নিসংযোগ আর লুটতরাজ কায়েমের চেষ্টা করে, তাহলে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সেটা প্রতিহত করবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তখন তার দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে জনগণের পাশে থাকবে। 

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বারবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
পৃথিবীর আর কোনো দেশের নির্বাচন নিয়ে এরকম ভূমিকা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলো, সেখানে ৪৭ জন মানুষ মারা গিয়েছে। আবার থাইল্যান্ডে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা গ্রহণ করতে দেয়নি সেখানকার সেনাশাসকরা। পাকিস্তানেও কীভাবে অগণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তন হয়েছে, সেটা আমরা দেখেছি। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত নির্বাচনের পর সহিংসতা দেখা গিয়েছে। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো একটি গণতান্ত্রিক দেশে এরকম ঘটনা খুবই বিস্ময়কর। কিন্তু সেসব ঘটনা নিয়ে কোনো ভূমিকা নেওয়ার ঘটনা আমরা দেখতে পাই না। তবে আমাদের এসব উন্নয়ন সহযোগীরা আগামী নির্বাচন নিয়ে যেসব কথা বলছেন, তা আমাদের ভালোর জন্যই বলছেন। কিন্তু তারা কিন্তু বলছে না যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তারা শুধু বলছে যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। তাদের এই বক্তব্যকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এখন বিএনপি জানে যে, তাদের দশ বছরের ঘটনায় তারা যে পরিমাণ দুর্নীতি করেছে, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে, ২১ আগস্টের মতো বহু সন্ত্রাসী ঘটনার জন্ম দিয়েছে, তাতে তারা নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না। তাই তারা বিদেশিদের ভুল ধারণা দিচ্ছে। আপনারা জানেন, ২০১২ সালে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে জিএসপি সুবিধা বাতিলের সুপারিশ জানিয়ে প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সুতরাং বিএনপির পক্ষে সকল ধরনের জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজ করা সম্ভব। 

এর আগে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। কিন্তু সেই নির্বাচনগুলো নিয়ে তো নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা তো আন্তর্জাতিকভাবে অস্বীকৃত হয়নি। যদি সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হতো, তাহলে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের স্পিকার নির্বাচিত হতেন না। আবার সেই সংসদের সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে ইন্টার পার্লামেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হতেন না। এই সব পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তাদের কোনো লবিং করতে হয়নি। এই পদগুলোতে তারা নির্বাচিত হয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট মেম্বারদের ভোটে। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করার সময় একেকটি আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার আগে তিন থেকে চারজন প্রার্থীর দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল। তারপর প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার পর বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিতরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করে অভিযোগ জানিয়েছিল যে, তারা লন্ডনে টাকা পাঠাতে পারেনি বলে মনোনয়ন পায়নি। সুতরাং তারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। আর আমরা সত্যকে স্বীকার করতে ভয় পাই না। তাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্দ্বিধায় বলেছেন যে আমরা ২০১৮ সালের চাইতে আরও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। 

এখন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে?
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংবিধানের বিধি মোতাবেক। তাই আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কিংবা যে কোনো রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলেও নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকবে না। আবার সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন থাকে না। তাই বিএনপির উচিত বিদেশিদের ভরসা না করে জনগণনির্ভর হয়ে আগামীর নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা।

তাহলে সেই নির্বাচন নিয়ে আগের মতো প্রশ্ন উঠবে না?
দেখুন, কোনো কিছুই প্রশ্নহীন নয়। কেউ যদি খুব ভালো করে, তার মধ্যেও প্রশ্ন থাকে। আমরা তো বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধা দিচ্ছি না। এখন তারা যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে তো জোর করে তাদের নির্বাচনে আনা যাবে না। সেই অধিকারও আমাদের নেই। এটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। 

বিএনপির আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে সংঘাত তৈরি হওয়ার শঙ্কা থাকে। 
এখন বিএনপি যদি সংঘাতের পথে যায়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে। কঠোর হস্তে দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আন্দোলনের নামে অরাজকতা করলে সেটা সহ্য করা হবে না। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //