প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থানে কাজ করছে এনআরবিসি ব্যাংক: গোলাম আউলিয়া

এনআরবিসি ব্যাংক গ্রামীণ জনপদে ব্যতিক্রমী লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের শহরমুখী প্রবণতা থেকে দূর করে গ্রামেই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য দেশে সর্বপ্রথম উপশাখা ব্যাংকিং চালু করেছে এনআরবিসি ব্যাংক। স্বল্প পরিসরে হাতের নাগালে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে উপশাখাগুলোর মাধ্যমে। এছাড়া পরিশ্রমী মানুষদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বিনা জামানতে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে এই ব্যাংক। এনআরবিসি ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম আউলিয়া। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- এম এইচ রশিদ। 

এনআরবিসি ব্যাংকের অগ্রযাত্রা ও সফলতা সম্পর্কে জানতে চাই।
২০১৩ সালের ২ এপ্রিল ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। এই ব্যাংকের সকল উদ্যোক্তাই প্রবাসী। ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নীতি হচ্ছে মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করা। গ্রামাঞ্চলে আমরা এমনভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছি যে ইতোমধ্যে এনআরবিসি ব্যাংক সাধারণ মানুষের ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র ও ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে। আমরা সেবার জন্য বেছে নিয়েছি দেশের উত্তরাঞ্চলকে, যেখানে ব্যাংকের সেবা পৌঁছায়নি। সেসব মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছি যারা এত দিন হতদরিদ্র ছিল, তাদের সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিল না। 

উপশাখা ধারণায় আপনারা প্রথম ব্যাংকিং শুরু করেন। এই ধারণা কীভাবে এলো?
আমি আগেই বলেছি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নীতি হচ্ছে ঘরে বসে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এজন্য তাদের কাছে সবার আগে ব্যাংকিং সেবা নিয়ে হাজির হতে হবে। এজন্য যেসব অঞ্চলে ব্যাংকের সেবা পৌঁছায়নি আমরা সেখানে ব্যাংকিং সেবা নিয়ে যাচ্ছি। স্বল্প খরচে স্বল্প পরিসরে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার চিন্তা থেকে উপশাখার ধারণা আসে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দুই-তিন জন লোকবল দিয়েই এটি পরিচালনা করা সম্ভব। আমরা সর্বপ্রথম উপশাখা স্থাপন করে ব্যাংকিং সেবা প্রদান শুরু করি। আমাদের উপশাখার বেশিরভাগই গ্রামীণ অঞ্চলে অবস্থিত। কারণ গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকের শাখা নেই বললেই চলে। এখন পুরো ব্যাংকিং খাতে উপশাখা জনপ্রিয় একটি সেবাকেন্দ্র। উপশাখার পাশাপাশি মানুষকে সেবা দিতে ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস, বিআরটিএ, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে বুথ ও সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করেছি। আমাদের ১০৩টি শাখাসহ উপশাখা, বুথ মিলে সারা দেশে এক হাজার ৬১৯টি স্থান থেকে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছি। গড়ে প্রতিমাসে আমাদের লোকেশন থেকে এক কোটি মানুষ সেবা পাচ্ছে। 

আমরা জানি ব্যাংক বড় অঙ্কের ঋণ প্রদানে অভ্যস্ত। আপনারা কেন ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে আগ্রহী হলেন?
আগেই বলেছি আমরা সেবার জন্য ওই সব মানুষকে বেছে নিয়েছি যারা নানা কারণে ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিল। আমরা চেয়েছি গ্রামের একজন হতদরিদ্র মানুষের নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হোক। ব্যাংকের শাখা না থাকায় গ্রামের সাধারণ মানুষ সিঙ্গল ডিজিট ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকেছে। এজন্য আমরা ক্ষুদ্রঋণ চালু করেছি। বিনা জামানতে, সহজ শর্তে ৫ থেকে ৯ শতাংশ সুদে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬৪ হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই ঋণের মাধ্যমে আমরা এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। পাশাপাশি দেশের যুবসমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করছি। নতুন যুব উদ্যোক্তা, নারী উদ্যোক্তা, তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাদের মাত্র ৭ শতাংশ সুদে ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক। 

ব্যাংকের প্রসঙ্গ এলেই সুশাসনের কথা আসে, খেলাপি ঋণের কথা আসে। এনআরবিসিতে এই দুটি প্রসঙ্গ কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?
খেলাপি ঋণের সঙ্গে সুশাসন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ব্যাংকের সব নিয়মনীতি পরিপালন করে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া ঋণ দিলে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতি ও পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশনা মোতাবেক ঋণ বিতরণ ও মনিটর করে থাকি। এজন্য আমাদের খেলাপি ঋণ অনেক কম। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি সুশাসন নিশ্চিত করতে। এজন্য সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। এতে অধিকাংশ কার্যক্রম অনলাইনে সম্পাদিত হচ্ছে এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত হচ্ছে। তাই কয়েক বছরে এনআরবিসি ব্যাংকের সুশাসন অনেক মজবুত হয়েছে। ফলে নতুন করে কোনো ঋণ খেলাপি হচ্ছে না। 

এনআরবিসি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে বলুন...
১০ বছরে সাধারণ মানুষ আমাদের গ্রহণ করেছে। এর ফলে আর্থিক সূচকগুলোতে আমরা টেকসইভাবে উন্নতি করতে পেরেছি। আমরা গ্রাহক সংখ্যা যেমন বাড়াতে পেরেছি তেমনি গুণগত মানসম্পন্ন ঋণ বিতরণ করতে পেরেছি। ২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ১৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। আগের বছরের জুনে যা ছিল ১৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে ঋণ বিতরণ ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //