রবার্ট পেন ওয়ারেনের মুখোমুখি মার্টিন লুথার কিং

সমন্বিত সমাজে এগিয়ে যাওয়া অনেক কম কঠিন- মার্টিন লুথার কিং

১৮ মার্চ,১৯৬৪ সালে পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী কবি এবং ঔপন্যাসিক রবার্ট পেন ওয়ারেন আটলান্টায় মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের অফিসে এক আলাপচারিতায় বসেছিলেন। আর সে আলাপচারিতার ফাঁকেই ওয়ারেন নিয়ে নেন মানবতার ঝান্ডা নিয়ে কাজ করা মার্টিন লুথার কিংয়ের এক সাক্ষাৎকার। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে ওয়ারেনের লেখা প্রকাশিত বই- ‘হু স্পিকস ফর দ্যা নিগ্রো?’ বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। ১৯৪০ সালে ওয়ারেন তার লেখা এক কবিতায় মার্কিন মুল্লুকজুড়ে নাগরিক অধিকার, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ ও তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর কথা তুলে ধরেছিলেন। তার লেখনীতে কিং, ম্যালকম এক্স, ব্যার্ড রাস্টিন ও রালপ এলিসনের মত মানুষের নাম ওঠে আসে। আর যা তার কাছে সংরক্ষিত করে রাখা হয়। পরে এসব লেখা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নানা গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 

রবার্ট পেন ওয়ারেরেনের সিভিল রাইটস ওরাল হিস্ট্রি প্রজেক্টে হতে জানা যায়, কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয় ও ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিতে ওয়ারেন এবং কিং-এর মধ্যে সাক্ষাৎকারটি ইতিহাসের দলিল হিসেবে সর্বসম্মতভাবে সংরক্ষিত করা হয়। পরে সি-স্প্যান রেডিওতে প্রথমবার ২০০৬ সালের অক্টোবরে এবং ওয়াশিংটনে সদ্য সমাপ্ত মার্টিন লুথার কিং স্মরণে ৫০ তম বার্ষিকীর সমাবেশে এটি পুনঃসম্প্রচার করা হয়।  সেই সাক্ষাৎকারের চৌম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো। 

ওয়ারেন: এখন, কৃষ্ণাঙ্গদের সমস্যা, দায়িত্ব এবং বাধ্যবাধকতার বিষয়ে  আপনার আন্দোলনের তৃতীয় ধাপে কী থাকবে বলে আপনি মনে করেন?

কিং: আমি মনে করি এটি হবে এমন যেখানে কিনা কৃষ্ণাঙ্গদের  দায়িত্ব থাকবে ‘মহাত্মা গান্ধীর’ নেয়া গঠনমূলক কাজের আদলে। এসব কর্মসূচির আওতায় সাধারণ মানুষ তাদের নিজস্ব অবস্থা এবং তাদের নিজস্ব মান উন্নতির জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করবে। আমি মনে করি এই পর্যায়ে, বিচ্ছিন্ন সমাজে কৃষ্ণাঙ্গদের আবির্ভাবের পর অবশ্যই তাদের মান উন্নয়নে প্রচুর সময় ব্যয় করবে যারা বিচ্ছিন্নতার কারণে অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছে--

ওয়ারেন: হ্যাঁ 

কিং: বৈষম্য এবং দাসত্বের উত্তরাধিকার। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে যে কৃষ্ণাঙ্গদের এই মানগুলিকে উত্তোলনের জন্য এক ধরণের অপারেশন বুটস্ট্র্যাপের সাথে জড়িত থাকতে হবে। এবং আমি মনে করি, এই পিছিয়ে থাকা মানগুলিকে উত্থাপন করার মধ্যদিয়ে এটিকে আরও অনেক বেশি সবল করে তুলবে। আমি বলব সমন্বিত সমাজে এগিয়ে যাওয়া অনেক কম কঠিন।

ওয়ারেন: মুল কথায় আসা যাক। দুই সপ্তাহ আগে একজন বিশিষ্ট পত্রিকার কর্মী আমাকে বললেন – (জন্মসূত্রে তিনি দক্ষিণের নাগরিক)- "ড. কিং এর জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ; কারণ তিনিই আমাদের একমাত্র আশা।" তবে শ্বেতাঙ্গরা প্রায়শই সহিংসতার কথা বলে থাকেন। ডক্টর কেনেথ ক্লার্ক তার এক লেখায় মন্তব্য করেছেন যে, অনেক শ্বেতাঙ্গ লোক নিরাপত্তা ইস্যুতে বেশ উদ্বেগজনক। কিন্তু অন্যদিকে আমি শুনেছি যে কৃষ্ণাঙ্গদের পক্ষ থেকে কিছু সম্মুখ প্রতিরোধ আর স্বয়ংক্রিয় মানসিক প্রতিরোধের মাধ্যমে আপনার নেতৃত্ব "বিক্রয়" প্রথাকে সমর্থন নয় বরং একটি আবেদন হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেছে যেন এটি না করা হয়। আপনার কথা হলো- সাদাদের চাটুকারিতা নয়। মানুষের নিরাপত্তা জরুরি। এ বিষয়গুলোয় আপনার বক্তব্য যদি বলেন?

কিং: আমি মনে করি, প্রথমে, একজনকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে আমি কী সম্পর্কে কথা বলছি এবং আমি যখন "ভালোবাসা" বলি তখন আমি কী প্রকাশের চেষ্টা করছি তা দিয়ে। দেখুন প্রেমের নীতি অবশ্যই এই সংগ্রামের কেন্দ্রে থাকতে হবে। আমি নিশ্চয় একটি স্নেহপূর্ণ আবেগ সম্পর্কে কথা বলছি না কিংবা গ্রীক ভাষায় যাকে বলে- "ইরোস" সে বিষয়েও কথা বলছি না। 

ওয়ারেন: হ্যাঁ 

কিং: আমি গভীর কিছু বিষয়ে কথা বলছি। আমি মনে করি কিছু একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে, 

ওয়ারেন: এই ভুল না বুঝতে কী করা যায়? আমি আপনার লেখা পড়েছি এবং বক্তব্য শুনেছি। কিন্তু এর পরও কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের বড় এক অংশের মধ্যে এমন ভুল বোঝাবুঝি রয়ে গেছে।

কিং:  ঠিক আছে, আমি মনে করি যারা প্রকৃত অর্থ দেখতে অস্বীকার করছেন তাদের জন্য এটি পরিষ্কার করা যেতে পারে। আর আমি এটা করেছি.

ওয়ারেন: আমি দেখেছি।

কিং: আমি এটা বারবার পত্রিকায় বলেছি।

ওয়ারেন: হ্যাঁ।

কিং: কিন্তু আমি মনে করি না হিংসা ও ঘৃণা এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।

ওয়ারেন: হ্যাঁ।

কিং: আমি মনে করি তারা এটিকে সমাধান করার চেয়ে অনেক বেশি সামাজিক সমস্যা তৈরি করবে। আর আমি বরাবর খুব শক্তিশালী ভালবাসাপুর্ন প্রেমের কথা ভাবছি। আমি ভাবছি কীভাবে আমাদের কাজে প্রেমের কথা থাকবে। আপনি বলবেন, "আপনার শত্রুদেরকে ভালবাসুন" এবং কেবল এটিকে ছেড়ে দিন, কিন্তু আপনি আপনার শত্রুদেরকে এমন পর্যায়ে ভালবাসেন যেন আপনি তাদের নিজেদের খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য একটি লাঞ্চে বসাতে পারেন। আপনি জেলে যেতে ইচ্ছুক।

ওয়ারেন: হ্যাঁ।

কিং: আমি মনে করি না যে কেউ এটিকে কাপুরুষতা বা একটি দুর্বল পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করুক। 

ওয়ারেন:  হ্যাঁ 

কিং: এই যুক্তিগুলির অনেকগুলি তাদের কাছ থেকে এসেছে, যারা এতটাই তিক্ততায় জড়িয়ে পড়েছে যে তারা গভীর নৈতিক বিষয়গুলি দেখতে পারছেন না। 

ওয়ারেন:  অথবা সাদা মানুষ, যারা আত্মতুষ্টিতে জড়িয়ে পড়েছে

কিং: হ্যাঁ।

ওয়ারেন: এটা বুঝতে অস্বীকার করে।

কিং: হ্যাঁ, আমি তাই মনে করি. আমি দুটোই ভাবি। আন্দোলনে কোনো কেন্দ্রীভূত নেতৃত্বের প্রয়োজন আছে কিনা সেটিও ভাবি আমি। 

ওয়ারেন: আরেকটি সাধারণ প্রশ্ন। যতদূর আমি জানি, অতীতে সমস্ত বিপ্লবের প্রবণতা ছিল... একটি কেন্দ্রীভূত নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার --

কিং: হুম --

ওয়ারেন: এখন আপনি অনেকগুলো জিনিস, ব্যক্তিগত গুণাবলীর মাধ্যমে নিজেকে একটি অদ্ভূত ভূমিকায় আটকে রেখেছেন। যা হয়ত ঈশ্বর আর আপনি জানেন। কিন্তু যদি বলি- এই বিপ্লব এমন নীতিতে চলছে না যেখানে আমরা একক নেতৃত্বের বিষয়টি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এটি ছাড়া কী বিপ্লব টিকে থাকতে পারে?

কিং: আমি তাই মনে করি।

ওয়ারেন: এমন একটি সমস্যা রয়েছে যা নিয়ে এখন অনেকেই কথা বলছেন, এখন থেকে হারলেম এবং ডেট্রয়েট এবং শিকাগোর মতো বড় কেন্দ্রগুলিতে আরও বেশি এ বিষয়ে কথা চলছে। সবাই ভাবছেন নেতৃত্ব এলোমেলো হয়ে পড়েছে --

কিং: হুম ---

ওয়ারেন: --এলোমেলো ও সহিংসতা

কিং: হ্যাঁ। 

ওয়ারেন: এটাই কি বড় কেন্দ্রীয় সমস্যা যা এখন আপনারা সবাই সম্মুখীন হচ্ছেন?

কিং: ঠিক আছে, আমি মনে করি এটি একটি বাস্তব সমস্যা। এবং আমি মনে করি এই সমস্যার একমাত্র উত্তর হল জাতি কোন স্তরে যেতে সক্ষম; কোন গতিতে আমরা সমস্যার সমাধানের দিকে যেতে যাই। জাতিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা যত বেশি অগ্রগতি করতে পারব এবং যত বেশি আমরা একটি সমন্বিত সমাজের লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হব, তত বেশি আমরা আশা জাগাতে পারব। আর তা জনগণের জন্য,  জনসাধারণের জন্য। আর এটা বিক্ষিপ্ত সহিংসতার সম্ভাবনা কমিয়ে আনবে বলে আমার মনে হয়।

অন্যদিকে, যদি আমরা বাধাগ্রস্ত হই এবং যদি এমন কিছু ঘটে যেখানে নাগরিক অধিকার বিল জলের সাথে ভেসে যায়, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- কৃষ্ণাঙ্গরা যদি মনে করেন যে সে একটি নোংরা স্থান হতে আরেক নোংরা স্থানে কিংবা একটি বস্তি হতে আরেক বস্তিতে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই তবে তাদেরকে হতাশা গ্রাস করবে। এতে সংগ্রাম সুশৃঙ্খল এবং অহিংস রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।

তাই আমি মনে করি এটি অগ্রগতির হার এবং গতি এবং নেতৃত্বের স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করবে।এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন এবং ব্যাপক কর্মসূচীরও প্রয়োজন। 

কিং: যেখানেই স্কুলগুলোকে বাসিং সিস্টেম চালুর মাধ্যমে একীভূত করা যেতে পারে, সেখানে এটি সমাধানে ভয়ানক অসুবিধা হবে বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি এটি করা উচিত কারণ যাতে শিক্ষার্থীরা একটি সমন্বিত মানের শিক্ষা পেতে পারে।

ওয়ারেন: আপনি কি শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের কথা বলছেন?

কিং: ঠিক তাই ---

ওয়ারেন: এ ব্যবস্থায় শুধু নিগ্রোদেরই শ্বেতাঙ্গ সন্তানের সঙ্গে থাকার বা আরও ভালো স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে যা তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সংশয় উত্থাপন করছে?

কিং: ঠিক তাই। অন্যভাবে যদি দেখি, আমি অনুভব করি যে যখন একটি শ্বেতাঙ্গ শিশু শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গ শিশুদের সাথে স্কুলে যায়, তখন সে শিশুটির বিশ্ব সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বড় হয় না। বরং জটিল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে সেসব শিশুরা বিকশিত হয়। 

ওয়ারেন: ঠিক আছে, সে আপনার সমকক্ষ না হলে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে না, বিষয়টি কী এমন? 

কিং: ঠিক। এটা একই জিনিস। 

ওয়ারেন: তাহলে শাখের করাত? 

কিং: হ্যাঁ । আমি মনে করি একজন আমেরিকান সমাজে একটি নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গেই বসবাস করতে পারেন। সে হিসাবে আফ্রিকান, ইউরোপীয় এমন ঐতিহ্য বিবেচনা না করাই শ্রেয়। আমি মনে করি যে আমরা কৃষ্ণাঙ্গরা সবাই আমেরিকান। আমরা আসলেই কিন্তু আফ্রিকা সম্পর্কে কিছুই জানি না। যদিও আমাদের শিকড় সেখানে রয়েছে হয়ত। আমি বলতে চাচ্ছি যে আজকের একজন নিগ্রো সে আফ্রিকা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এবং আমি মনে করি তাকে এই সত্যের মুখোমুখি হতে হবে যে সে একজন আমেরিকান, তার সংস্কৃতি মূলত আমেরিকান। আমাদের ভাগ্য আমেরিকার নিয়তির সাথে বাঁধা।

আমরা এই ধারণাটি নিয়ে এতদিন বেঁচে আছি। যদিও লোকেরা বলছেন এটি সময় নিচ্ছে এবং সময়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আর এটির সাথে সামঞ্জস্য করা আমার পক্ষে খুব কঠিন। আমি বলতে চাচ্ছি- যখন আমি এমন শুনে থাকি তখন প্রায়ই বিরক্ত বোধ করি। 

ওয়ারেন: আমি আপনাকে আরও একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি। হারলেমে আপনার উপর যে হামলা হয়েছে তা আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

কিং: মানে?

ওয়ারেন: -- দুটি হামলা

কিং: দুজন 

ওয়ারেন: হ্যাঁ, হ্যাঁ।

কিং: ছুরিকাঘাত এবং ?

ওয়ারেন: ছুরিকাঘাত এবং আপনার দিকে জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারা। দুটি অভিজ্ঞতা অবশ্যই ভয়ঙ্করভাবে হতবাক হওয়ার মত। 

কিং: হুম

কিং: প্রথমটি, আমি জানি না। আর আমরা কখনও কারণ বা ভিত্তি কী তা জানতে পারব কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ আছে। এখানে আমার বিশ্বাস হয়ত উনি সত্যিই জানত না কেন তিনি এমনটা করেছেন। আমি সত্যিই মনে করি না বা মনেও হয় না যে তিনি হার্লেমে ওই সমাবেশের আশেপাশে ছিলেন।

ওয়ারেন: হ্যাঁ 

কিং: এবং বারবার শুনেছি, সে, আমি যখন হারলেমে এসেছি তখন সে হয়তো এমন ঘটনার প্রতি সাড়া দিয়েছেন। অথবা এমনও হতে পারে যে তিনি এতটাই বিভ্রান্ত ছিলেন যে তিনি এমন যে কারও সাথে হয়ত তা করতেন যে কিনা খবরের শিরোনামে ছিলেন। সে সময় নানাদিকেও কিন্তু উনি ডিম ছুঁড়েছেন --

ওয়ারেন: হ্যাঁ 

কিং: আপনি জানেন তারা আমার কোমল 'ভালোবাসা' সম্পর্কে জেনেছেন। তবে আমি ওই ব্যক্তিকে ভালবাসি। ম্যালকম এক্স- আগের দিন একটি মিটিং করেছিলেন আর সেখানে আমার সম্পর্কে অনেক কথা হয়েছিল । আর তারা জেনেছিলেন যে আমি পরদিন রাতে সেখানে থাকব। 

তিনি অহিংসা সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছিলেন, অহিংসার সমালোচনা করেছিলেন ও বলেছিলেন যে আমি নিগ্রো পুরুষ। আমি নাকি মহিলাদের কুকুর দিয়ে কামড়ানোর অনুমোদন দিয়েছি। আমি নাকি বলি, নিজেকে রক্ষা করো না। আমার অনুভূতি তারা কখনই বুঝতে পারেনি যে আমি যা বলেছি, সেটা আমি বলছি --

ওয়ারেন: একই পুরানো গল্প?

কিং: তারা বিভ্রান্ত করে থাকে, তারা দেখতে পায় না যে মন্দের প্রতি অপ্রতিরোধ এবং অহিংস প্রতিরোধের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

এও বলছি না যে আপনি বসে থাকুন এবং ধৈর্য ধরে অন্যায়কে মেনে নিন। আমি একটি খুব শক্তিশালী শক্তির কথা বলছি, যেখানে আপনি একটি অশুভ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আপনার সমস্ত শক্তি দিয়ে দাঁড়ান এবং কাপুরুষ নন প্রমাণিত করেন।

ওয়ারেন: ব্রিঙ্কলে এবং হার্লেমের একটি জরিপে একটি আশ্চর্যজনক বিষয় ওঠে এসেছে যে হারলেমের জনসংখ্যার একটি বড় শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যালঘু বলে মনে করেন না। আপনার মন্তব্য?

কিং: তাই নাকি?

ওয়ারেন: আপনি জানেন না?

কিং: মনে হয় তারা তাও করে না -

ওয়ারেন: -- যদিও এটা বাস্তবিকভাবে করা হয়েছে।

কিং: হ্যাঁ।

ওয়ারেন: তাদের ভাষ্য- তারা আশেপাশে খুব কম সাদা লোক দেখতে পায়।

কিং: এটা ঠিক; তারা কখনই হারলেমের বাইরে যায় না।

ওয়ারেন: কৌশলগত আবেদন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

কিং: হ্যাঁ।

ওয়ারেন: তারা বলে, "আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।"

কিং: হ্যাঁ। সেটা ঠিক, আমি মনে করি এটা --

ওয়ারেন: এটা বিপজ্জনক সত্য, তাই না?

কিং: ঠিক। এটি একটি বিপজ্জনক সত্য। আপনি হারলেমের অনেক লোককে হারলেমের বাইরে যেতে দেখবেন না। আমি বলতে চাচ্ছি যে তারা শহরের কেন্দ্রস্থলের বাসিন্দা নয়। তাদের মধ্যে তিক্ততা জমা হতে শুরু করেছে। নোংরা বস্তিতে অবস্থান করছেন তারা। তারা কোন পথ দেখতে পাচ্ছেন না।এটা খুবই সহজ যে একজনের পক্ষে সহিংসতা এবং ঘৃণা সম্পর্কে কথা বলা সহজসাধ্য নয়। আমি এটি কখনও ভাবিনা। তবে আমি মনে করি এটি একেবারেই সত্য, যদি আপনি তাদের সাথে কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে অহিংসা সম্পর্কে কথা বলেন তবে তারা এটি পুরোপুরি দেখতে পাবেন না। 

ওয়ারেন: এটা ঠিক। তারা এটি উপলব্ধি করতে পারেন না।

কিং: ঠিক তাই। তারা এটা ধারণ করতে পারেন না। 

ওয়ারেন: আপনি যখন লাঞ্ছিত হয়েছিলেন সেসময় প্রথম প্রকৃত প্রতিক্রিয়া কী ছিল?,

কিং: হ্যাঁ, আমার অনুভূতি খুব ভাল মনে আছে। প্রথমে আমার কাছে এটি ছিল খুব হতাশাজনক বিষয়। কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এরা আমার নিজের লোক। এরা ছিলেন নিগ্রো। আন্দোলনের ফলে আপনি যে ত্যাগ ও যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়েছেন তা কিন্তু আপনার নিজের লোকেদের মধ্যে সবসময় বুঝে ওঠার কথা নয়। 

তারপরও খুব আকর্ষণীয় বিষয় ছিল- যখন আমি সরাসরি গির্জায় গেলাম এবং লোকদের সাথে কথা বলেছিলাম তখন আমি নিজের সম্পর্কে তেমন ভাবিনি। ভাবছিলাম সেই সমাজ সম্পর্কে, যে সমাজ মানুষকে এইরকম প্রতিক্রিয়া দেয়। এটা এতই আকর্ষণীয় ছিল যে কিভাবে আমি খুব দ্রুত আমার মন থেকে ওই খারাপ অনুভূতি সরিয়ে সরিয়ে নিতে পারব। তবে নিজের জন্য দুঃখিত হওয়ার পাশপাশি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার বিষয়টি অনুভব করছিলাম। 

পরে অবশ্য আমি উঠে গিয়ে কথাও বললাম। আমি তাদের জন্য দুঃখিত। আমি উদ্বিগ্ন যে পরিস্থিতি, দারিদ্র্য, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং ব্যক্তিদের এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এমন সমস্ত পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে কঠোর পরিশ্রম না করে হয়তো আমরা সবাই এদেরকে উস্কানি দিয়ে নেতিবাচক বিষয়ে অবদান রাখতে চাই।

সূত্র: দ্যা আটলান্টিক ডট কম

(অনুবাদকৃত )

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //