ঊর্ধ্বগতির বাজারে ১২ হাজার ৫০০ টাকা যথেষ্ট নয়: তাসলিমা আখতার

বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। বর্তমান বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির তুলনায় এই মজুরি যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন দেশের পোশাক শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা।

শ্রমিকদের এই মজুরি বৃদ্ধি ও পোশাক শ্রমিদের নানা দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করছেন গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার। সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে শ্রমিকদের নানা দাবি ও মজুরি নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আহমেদ সেলিম।

সর্বনিম্ন ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি বর্তমান সময়ে শ্রমিদের জন্য কতটা সময়োপযোগী?
সাধারণত পোশাক শ্রমিকদের মজুরি পাঁচ বছর পরপর বৃদ্ধি পায়। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সেই তুলনায় এই ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি যথেষ্ট নয়। তাই গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি এবং মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের আমাদের যে জোট, তার পক্ষ থেকে আমরা সরকারের এই মজুরি ঘোষণাকে প্রত্যখ্যান করেছি। সরকারকে মজুরি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আহ্বান করছি। 

বাংলাদেশের ৪০ লাখ তরুণ শ্রমিক যারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যাদের হাত ধরে ৮৪ ভাগ রপ্তানি আয় আসছে সেই শ্রমিকদের আকাঙ্ক্ষা ২৫ হাজার টাকা মজুরি। বর্তমানে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যতটুকু প্রয়োজন, ১২ হাজার ৫০০ টাকার এই ঘোষণা শ্রমিকদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মেলে না। আমরা দেখেছি মজুরি পুনর্গঠনের পঞ্চম বৈঠকে গার্মেন্টস মালিকরা ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব এনেছিল। অনেক নাটক মঞ্চস্থ করার পর মালিকরা ১২ হাজার ৫০০ টাকার যে প্রস্তাব করতে পারল, সেটার প্রধান কারণ হিসেবে আমার মনে হয় মালিকরা শ্রমিকদের মানুষ হিসেবে গণ্য করেন না। বাজারে মালিকরা ৫৬ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির যে গৌরব করছেন এটা কোনো গৌরবের বিষয় না। দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি সেখানে ১২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বেঁচে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব না। 

গত কয়েক দিন থেকে মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে বেশ অসন্তোষ ছিল। বিভিন্ন কারখানায় অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছিল। এটা কেন?
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বেশ কিছুদিন থেকে শ্রমিকরা যখন বিক্ষুব্ধ ছিল ঠিক তখনই বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে, টিয়ারশেল নিক্ষেপের পাশাপাশি পুলিশ নির্যাতন করে দুজন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে তারা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করছে এবং তারা যাতে সংগঠিত হতে না পারে সে কারণে নির্যাতনকে বেছে নিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিভিন্ন কারখানায় ছাঁটাই শুরু হয়েছে। এই ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি ঘোষণার আগেই এ ধরনের নির্যাতনের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যারা ঠিক রেখেছে, সেই ৪০ লাখ শ্রমিককে কোনো নির্যাতন, গুলি কিংবা টিয়ারশেল নিক্ষেপ না করে ২৫ হাজার টাকা মজুরি সরকার পুনঃবিবেচনা করবেন।

বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে অনেক দেশ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি কতটা উদ্বেগের?
আমার মনে হয় না বিদেশি বায়াররা আসলেই বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। কারণ বাংলাদেশে যত সস্তায় মজুরি পাওয়া যায়, বিশ্বের অন্য কোনো দেশে তা পাওয়া যায় না। ফলে পণ্যের দামও কম থাকে। তবে মালিকদের দায়বদ্ধতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। এটা হয়তো মালিকদের ভয় দেখিয়ে ভালো কাজ আদায় করার কৌশল। ঘুরেফিরে তাদের বাংলাদেশে আসতেই হবে। 

নির্বাচনের আগ মুহূর্তেই কেন নতুন মজুরি ঘোষণা করা হলো?
গত এক বছর থেকে আমরা জোটের পক্ষ থেকে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা করার জন্য আন্দোলন করে আসছি। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা খাত থেকে শ্রমিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিলাম। এর মধ্যে চিকিৎসা, রেশনসহ বিভিন্ন দাবি ছিল। কিন্তু এসব দাবির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট ঘোষণা আমরা পাইনি। আমরা নানা সময়ে মালিকপক্ষকে বলে আসছিলাম, কোনোভাবেই নির্বাচনী আবহাওয়ার যে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে যেন শ্রমিকদের নিক্ষেপ না করা হয়। কিন্তু মালিকরা নানাভাবে কালক্ষেপণ করে একটা অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে মজুরি ঘোষণা করেছেন। 

দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব কি পোশাক খাতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে?
রাজনীতির সঙ্গে অনেক কিছুর সম্পর্ক আছে। কিন্তু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। ইউরোপ-আমেরিকার বাজার বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে যে দামে কাপড় নেয় বাংলাদেশ থেকে তার থেকে কম দামে নেয়। তাই বাংলাদেশে তাদের আসতেই হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //