কপ২৮ সম্মেলনে গ্রীন হাইড্রোজেনের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন: ফ্রাংক

চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে দুবাইয়ে এবারের কপ২৮ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বসবেন বিশ্ব জনগণের ভাগ্য নির্ধারণে কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানা দুর্যোগ ও প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে আলোচনার জন্য। উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীলসহ সকল রাষ্ট্রসমূহ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তৈরি সংকট মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতি আদায়ে প্রতিবছর হয়ে থাকে এই কপ সম্মেলন বা কনফারেন্স অব দ্যা পার্টিজ। 

আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে জলবায়ু পরিবর্তননের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের করনীয় কি এসব বিষয়ে এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিজের সঙ্গে খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ফ্রাঙ্ক ওটার্স। তিনি একাধারে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট,চেয়ারম্যান মিনা হাইড্রোজেন অ্যালায়েন্স, ডি ডেজার্টের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একইসঙ্গে ফ্রাঙ্ক দীর্ঘ মেয়াদি শক্তি সংরক্ষণ পরিষদের কো-প্রেসিডেন্ট এবং ভূমধ্যসাগরীয় গ্রীন ইলেক্ট্রন অ্যান্ড মলিকিউলস নেটওয়ার্ক নামক সংগঠনটির পরিচালক পদেও কাজ করছেন। সম্প্রতি তিনি কপ২৮ সম্মেলন নিয়ে এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিজের (ই অ্যান্ড ইউ) সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যার বিশেষ কিছু অংশ তুলে ধরা হল

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: আপনি কোন কোন বিষয় নিয়ে এবারের কপ২৮’র সাথে যুক্ত হচ্ছেন? 

ফ্রাঙ্ক: আমি অনেক ভাবেই এ সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত আছি। সম্মেলনে থাইসেনক্রপ নামক একটি সেশনের মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করব। এছাড়াও আমি সেখানে দীর্ঘ মেয়াদি এনার্জি স্টোরেজ কাউন্সিলের সঙ্গেও থাকব। একইসঙ্গে গ্লোবাল রিনিউয়েবল অ্যালায়েন্স (GRA) এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আমি। 

আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি কমিয়ে আনতে চাই আর এ লক্ষ্যে GRA, IRENA, এবং COP28 প্রেসিডেন্সি মিলে গত মাসে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছি। যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার তিনগুণ এবং জ্বালানি দক্ষতার পরিধি কীভাবে দ্বিগুণ করা যায়, সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মুহুর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং হলো কীভাবে বিশ্ব তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি পর্যন্ত কমানো যায়। 

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: হাইড্রোজেন এবং এ সম্পর্কিত প্রযুক্তি বিষয়ে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য এই সম্মেলনে কী কোনো বার্তা আসতে পারে? 

ফ্রাঙ্ক: আমি বিষয়টিকে দুভাবে দেখি। প্রথমত যে দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা ক্ষতির জন্য অর্থ দিবে, সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমরা পিছিয়ে। প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। 

দ্বিতীয়ত, নবায়নযোগ্য জ্বালানীর জন্য হাইড্রোজেন অপরিহার্য কারণ এটি ছাড়া আমরা সবুজ হাইড্রোজেন তৈরি করতে পারব না। 

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির তিনগুণ বৃদ্ধির বিষয়টি দিয়ে কী বুঝাতে চাচ্ছেন?

ফ্রাঙ্ক: এটা আমাদের প্রেসিডেন্সির একটি স্পষ্ট লক্ষ্য। কিন্তু এটা একটা রাজনৈতিক দর কষাকষির বিষয়। প্রাক-কপ আলোচনায় আমরা এ বিষয়ে খুব একটা সাফল্য দেখিনি। আপনি জানেন কিনা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়টি কারও জন্য ক্ষতিকর নয়। এটি সহজ হওয়া উচিত। তবে এ নিয়ে দর কষাকষির জায়গাটি রাজনৈতিক কারণে কঠিন হতে পারে।

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: IEA বলেছে যে, ২০৫০ সালের মধ্যে হাইড্রোজেন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যে ১০ টি ফ্যাক্টর রয়েছে তার মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টি অন্যতম। এই প্রেক্ষাপটে, ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির তিনগুণ বৃদ্ধির বিষয়টি একটি  অর্জনযোগ্য লক্ষ্য বলে মনে হচ্ছে।

ফ্রাঙ্ক: এটা ঠিক কিন্তু আমাদের অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে। আমরা বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য পুঁজি সংগ্রহের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। যাতে করে আরও নবায়নযোগ্য জ্বালানি তৈরি করা যায়। আফ্রিকা, সাহেল অঞ্চল, সাহারা এবং অন্যত্র বেশ কিছু অঞ্চলে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে এই শক্তি সংস্থানের। তবে বিনিয়োগের জন্য মূলধন জোগাড় করা কঠিন।

যদি আপনি নেদারল্যান্ডসের দিকে তাকান, দেখবেন সেখানে আমার গ্রামের ৪০ শতাংশ ছাদে সৌর প্যানেল বসানো রয়েছে। কারণ এটির পেছনে বিনিয়োগের জন্য মানুষের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। তারা বুঝেছে যে এটি সাশ্রয় করছে তাদের অর্থ। অন্যদিকে মৌরিতানিয়ায় গিগাওয়াট নির্ভর শক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে আর সেখানে আমাদের আরও বেশি ফোকাস করা দরকার। কারণ এটি খুব বেশি ঝুঁকি। এর বিকল্প হিসেবে আমাদের কিছু বের করতে হবে।

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: মৌরিতানিয়ার কাছে এখন বিশ্বের দশটি বৃহত্তম হাইড্রোজেন প্রস্তাবগুলোর মধ্যে একটি রয়েছে।

ফ্রাংক: হ্যাঁ।

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: আরেকটি বড় বিষয় হল NEOM, যেটি নির্মাণের জন্য অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে অফ টেক চুক্তির আওতায়। এটি কি এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সবুজ হাইড্রোজেন প্রকল্প হতে যাচ্ছে?

ফ্রাঙ্ক: আমাদের প্রয়োজনের মাত্রা বিবেচনায় এটা জরুরি ছিল। এই বছরের শুরুর দিকে অর্থায়ন বন্ধের জন্য ২৩টি ব্যাংক জড়িত ছিল। অফ-টেক চুক্তিটি বায়ু সম্পর্কিত ইস্যু নিয়ে করা হয়েছিল যেখানে তিনটি পার্টনার ছিল। আমার সন্দেহ তারা তাদের ব্যালেন্স শীটে ঠিকই বড় একটি  অংশ অর্থায়ন হিসেবে দেখিয়েছে। 

আমাদের এর পেছনের গল্প খুঁজে বের করা দরকার। কারণ সব প্রতিষ্ঠানের ব্যালেন্স শীটের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের প্রকল্প অর্থায়নে মন দেয়া উচিত। যদিও এটি ভবিষ্যতের নগদ অর্থ প্রবাহের উপর ভিত্তি করে। তবে প্রশ্ন হল, কীভাবে শুরু করবেন?

আইইএ সম্প্রতি একটি বিশ্লেষণে দেখিয়েছে, গ্রীন হাইড্রোজেন প্রকল্পগুলোর বিস্তারের বেশ কিছু পাইপলাইন হাতে রয়েছে। কিন্তু  FID’র হিসেবে এখনও পিছিয়ে। যা কিনা সমস্ত উদ্যোগের মাত্র ৪ শতাংশ অর্জনের কাছাকাছি রয়েছে। 

অতএব এখনও অনেক কিছুই অনুপস্থিত। আমি মনে করি এই শিল্পের জন্য প্রকল্পগুলোর ক্রমবর্ধমান যে সরবরাহের কথা বলা হচ্ছে তা কিছুটা অগ্রগতির দিকে। তবে আবারও বলব এটা সরকারের ওপর নির্ভর করছে। কারণ স্পষ্টতই এখনও খরচের ব্যবধানের বিষয়টি রয়েছে। আপনারা অন্যান্য প্রকল্পের মত গ্রীন হাইড্রোজেন উৎপাদনের প্রকল্পকেও ভাবছেন হয়ত! কিন্তু অন্য প্রকল্পে কার্বন নির্গমনের ফলে যে ক্ষতি হয় সেটির ক্ষতিপূরণ কিনত আপনারা পাচ্ছেন না। এবং আমরা কোনও স্কেলেই ইলেক্ট্রোলাইজার তৈরি করছি না, সেগুলো এখনও ব্যয়বহুল, তাই আমাদের অন্যভাবে ভাবা উচিত। সুতরাং এখনও এক্ষেত্রে ব্যয়ের বড় একটি গ্যাপ রয়েছে যা একভাবে বা বিকল্প উপায়ে হলেও কাউকে দিতে হবে। সরকারি প্রণোদনা, কোটা, ভর্তুকি বা অন্য যে কোনও উপায়ে এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা নেই। আমি মনে করি, এ মুহুর্তে বিষয়গুলো কার্যকর করার পাশপাশি শিল্পটি চালু করতে আমাদের সরকারকে ভূমিকা নিতে হবে। যেভাবে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য কাজ করেছি। হাইড্রোজেন প্রকল্পের বিষয়েও আমাদের এখনও সেই পর্যায়ে যেতে হবে।

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: আপনি আগে বলেছেন, আমাদের দ্রুত অগ্রসর হতে হবে এবং বড় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা এখন দ্রুত কোন পথে এগোচ্ছি? সামনে কোন ভাল খবর রয়েছে?

ফ্রাঙ্ক: দেখুন মৌরিতানিয়ায়, অস্ট্রেলিয়ায়, ওমান, নামিবিয়ায় এ প্রকল্পের বিষয়টি পাইপলাইনে রয়েছে। এখনও এই প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়নি। কারণ এটি এখনও পরিষ্কার হয়নি যে, কে, কোন শর্তে, কী অবস্থায় এসব জিনিস কিনবে! এই বিষয়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

আমাদের কিছু প্রচেষ্টা রয়েছে যদিও। জার্মানরা ইতোমধ্যে এইচ২ গ্লোবাল নিয়ে কাজ শুরু করেছে। যেটি এখন ইউরোপীয়করণ করা হচ্ছে হাইড্রোজেন ব্যাংক নামে। আর সে ব্যাংকটি প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের হতে চলেছে। তবে গিগাওয়াট এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, আমাদের দরকার টেরাওয়াট। তাই আমাদের এখনও ইনোভেটিভ উপায়ে কিছু ভাবতে হবে। বিশেষ করে অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার। অফটেকের কথাই যদি ভাবি, কেন কেউ চড়া হারে প্রিমিয়াম দিবে যা বহু বছর ধরে হয়ে আসছে। যতক্ষণ না আমাদের হাতে উপযুক্ত অর্থ আসছে। 

এর আগেও নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য আমাদের কাছে দীর্ঘ সময়ের জন্য ফিড-ইন ট্যারিফ ছিল, যা সত্যিই সহজ এবং প্রতিলিপিযোগ্য ছিল। এ মুহূর্তে আমরা একটি জটিল সিস্টেমে পড়ে গেছি যা মোটেও ভাল নয়। ইউরোপে সরবরাহ ও অফ টেকের ভিত্তিতে কার্বন মূল্য, CBAM, ভর্তুকি, কোটা এসব রয়েছে। জার্মানরা গত বছরের নভেম্বরে প্রথম H2 গ্লোবাল নিয়ে নিলাম প্রক্রিয়াও শুরু করলেও এখনও তারা এতে স্বাক্ষর করেনি। জানি না আগামী বছর আমি কি শুনব? সুতরাং এটি জটিল আর আমরা সেদিকেই যাচ্ছি। তবে আমাদের এ বিষয়গুলো সরল করতে হবে।

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: মার্কিন 'হাইড্রোজেন হাব' সম্পর্কে যদি বলেন, যেগুলোর অর্থায়ন করা হচ্ছে।

ফ্রাংক: এটা ভাল উদ্যোগ। প্রতিটি হাবের জন্য ৯ বিলিয়ন বা তার বেশি ডলারের দরকার। এটি একটি ভাল প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে যা ইকো-সিস্টেম তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু আপনি যদি বড় প্রকল্পগুলোর দিকে তাকান তবে উপলব্ধি করতে পারবেন আমাদের আরও অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে। 

এই হাবগুলোর জন্য এখনও কেউ স্বাক্ষর না করায় ইউএস এনার্জি সেক্রেটারির কাছে এই গ্রীষ্মে আরও এক বিলিয়ন ডলার অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তাই এটির রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি কিলোর জন্য ৩ ডলার দরকার যার কাছেও আমরা নেই। 

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: ওমান, ডুকমের বৃহৎ প্রকল্প এবং মিশর সম্পর্কে জানতে চাই? এগুলি NEOM ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম প্রকল্প বলে মনে হচ্ছে৷

ফ্রাংক: ওমানে সরকার ভাল কাজ করছে। তারা প্রকল্পগুলি শুরু করতে বিভক্ত উপায়ে অবকাঠামো তৈরি করে কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে তারা ভালই করছিল। পরে সরকার নিলামের দিকে ঝুঁকেছে। ঝুঁকি হল আপনি একটি দেশে বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের দিকে যেতে পারেন না। যদিও সরকার অবকাঠামো, সরবরাহ পাইপলাইন নির্মাণ,পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদির জন্য কাজ করতে তাদের ইচ্ছার কথা জনগণকে জানিয়েছে। এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে দেখবেন সরকার নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নেয়। অন্যদিকে ওমান এখনও এতটা ধনী নয় যে তারা সকল খরচ বহনে সক্ষম। এই মুহূর্তে তারা রপ্তানির দিকেই নজর দিয়েছে। 

তাহলে প্রশ্ন হল, হাইড্রোজেন বা অ্যামোনিয়া কোথায় বিক্রি করবেন, কারাই বা প্রিমিয়াম দিবেন আর কেনইবা দিবেন? মানুষ স্পষ্টতই এখন ইউরোপের দিকে তাকিয়ে আছে। মিশরও এটির  ব্যতিক্রম নয়। 

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: মিশরের অনন্য ভৌগলিক সুবিধা আছে বলে মনে করেন? অন্যথায় দেশটিকে তহবিলের অভাবে পড়তে হত।

ফ্রাংক: হ্যাঁ, মিশর ইউরোপে পাইপলাইন তৈরি করতে পারে, যা কিনা দুর্দান্ত হতে পারে। কিন্তু স্বল্পমেয়াদের জন্য লোকেরা অ্যামোনিয়া এবং অন্য তরল জাতীয় পদার্থের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওমান এবং মিশরের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো তারা পণ্য তৈরির জন্য সবুজ হাইড্রোজেন ব্যবহার করছে। আর সবুজ অ্যামোনিয়া তৈরিতে 'সবুজ ইস্পাত' দরকার আর যা মৌরিতানিয়ায় দেখা যাচ্ছে। সেখানে তারা ইউরোপে সবুজ ইস্পাত বিক্রি করার কথা ভাবছে যা কিনা জ্বালানি বিক্রির চেয়ে কঠিন এক পথ। 

এবং আপনি যখন সবুজ ইস্পাত তৈরি করছেন তাহলে সে দেশে থেকে আর কী তৈরি করতে পারেন? এটা আসলে অনেকগুলো প্রতিশ্রুতির সঙ্গে যুক্ত যা একটি উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থারও তৈরি করে থাকে। 

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: মনে হচ্ছে সৌদির হাতে এমন সম্পদ রয়েছে যাতে করে কার্বন মূল্যের ব্যবধান বন্ধ করতে সক্ষম হবে? যেভাবে অন্য দেশগুলো ভাবছে না? 

ফ্রাংক: হ্যাঁ। কিন্তু এটাও ঠিক ভর্তুকির কোনও সীমানা নেই। কার্বনের দাম নির্ধারণে যা সঠিক তা ঠিক রাখতে হবে। আমরা ইউরোপে এটি দেখেছি।

তারা শুরু করেছে, এখন অবকাঠামোও রয়েছে। সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জের একটি কার্বন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, অনুরূপ দুবাইতেও রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী প্রকল্পের আওতায়। আশা করি শীঘ্রই আমাদের কার্বন মূল্য নির্ধারণের কাঠামো তৈরি হবে। 

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: কোন প্রযুক্তি LDES-এর জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয়?

ফ্রাংক: সবকিছুরই একটা জায়গা আছে। রাসায়নিক, ইলেক্ট্রো-কেমিক্যাল, তাপ, মাধ্যাকর্ষণ ভিত্তিক বিভিন্ন প্রযুক্তি রয়েছে। আমাদের কাউন্সিল লিথিয়াম-আয়নের মতো আরও জরালো কিছু পদার্থের বিষয়ে পৃথক একটি মাপকাঠি রাখা উচিত।

এল আই ব্যাটারি সিস্টেমগুলো একটি লিনারস্কেলে রয়েছে। অন্যান্য ব্যাটারির প্রযুক্তির মত যেমন-ফ্লো ব্যাটারির কথা যদি ভাবি দেখব, এটি দীর্ঘ স্থায়িত্বের হয়ে থাকে। তাই দীর্ঘ মেয়াদি টেকসই প্রযুক্তি অবশ্যই বেশি দরকার। সস্তা ও দীর্ঘ মেয়াদি দুটো বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় এতে। এই কারণেই দীর্ঘমেয়াদী স্টোরেজ প্রযুক্তি আকর্ষণীয়, কারণ এটি দীর্ঘ সময়ের সাথে সস্তা হয়ে যায়।

এইতো কিছুদিন আগেও অনেক প্রযুক্তির বিষয়ে অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত দিক হতে প্রমাণ করতে হত যে এগুলো কার্যকরি হবে, ক্ষতিকর নয়। অথচ তারা এসব বিষয়ে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে।  

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: কপ২৮ -এ ফিরে আসি, MENA কী দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলনে তাদের নিজস্ব কাউন্সিল উত্থাপন করবে? এই শীর্ষ সম্মেলনে তাদের কী চাহিদা তুলে ধরবে?

ফ্রাংক: আমি মনে করি আমরা মরুভূমির মধ্যে জল খোঁজার চেষ্টা করব না। অনেকগুলো সম্ভাবনাময় উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। তবে কীভাবে এগুলোর অর্থায়ন হবে তা নিয়ে আমাদেরকে গতানুগতিকের বাইরে গিয়ে ভাবতে হবে। 

আবার, মৌরিতানিয়া সত্যিই কম দামের হাইড্রোজেন এবং 'সবুজ বিদ্যুতের' সম্ভাবনার একটি দুর্দান্ত উদাহরণ। এটি একটি চমৎকার সম্পদের দেশ। তাই আমরা মনে করি এ অঞ্চলে বিনিয়োগটি ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকির কারণ দেশটির ঋণের হার বেড়ে যাবে। বিনিয়োগের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্যয়বহুল প্রকল্প হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং আমরা যদি মৌরিতানিয়া তার নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংস্থানযোগ্য পণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি করতে পারি তবে অর্থের খরচ কমে আসবে। 

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: প্রতিশ্রুত $100 বিলিয়ন ডলারের বিষয়টির কী হবে?

ফ্রাংক: শক্তির রুপান্তরের জন্য অন্তত এটি দরকার। তাহলে মরুভূমির অঞ্চলেও একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হতে পারে। আপনি জানেন যে সৌদি আরবে অর্থায়ন করা তুলনামূলকভাবে তিউনিসিয়া বা মৌরিতানিয়ার চেয়ে অধিক সহজ। অন্যদিকে লিবিয়া বা এমনকি মিশরেও অনেক বেশি কঠিন অর্থায়নের কথা ভাবলে। সুতরাং আমরা কীভাবে বাজারগুলিকে একটি স্মার্ট উপায়ে সংযুক্ত করতে পারি যাতে বিনিয়োগগুলি বর্তমানের মতো ব্যয়বহুল না হয় সেই উপায় খুঁজে বের করতে হবে। 

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: তাহলে আমাদের এই কপ সম্মেলন থেকে নতুন অর্থের সন্ধান করা উচিত?

ফ্রাংক: হ্যাঁ।

এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিস: সুন্দর গঠনমূলক আলোচনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ফ্রাংক।

ফ্রাংক: আপনাকেও ধন্যবাদ। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //