নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ সাক্ষাৎকার

‘জাতির আয়না দিয়ে দেখে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি’

নরেন্দ্র মোদী যেদিন থেকে ৭ লোক কল্যাণ মার্গে (ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন) স্থান করে নিয়েছেন সেদিন থেকেই এ স্থানটি এক চিত্তাকর্ষক স্থানে রূপান্তরিত হয়েছে। বাসভবনের কলোনাডেড প্রবেশদ্বারটি একটি দীর্ঘ করিডোর পেরিয়ে যেন মিটিং কক্ষের গোলকধাঁধার দিকে নিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর স্টাডিরুমে ময়ূর ও পাখির দুটি ছবি ঘরের শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। ছড়ানো ছিটানো কাগজপত্র সমৃদ্ধ একটি বড় ডেস্ক এবং পাশের টেবিলে একটি কম্পিউটার কনসোল রয়েছে স্টাডিরুমে। এখানেই ২৬শে ডিসেম্বর, পিতলের বোতামে জড়ানো একটি সবুজ রঙের জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ইন্ডিয়া টুডে-এর চেয়ারপার্সন এবং প্রধান সম্পাদক অরুন পুরি, ভাইস চেয়ারপারসন কালি পুরি এবং সম্পাদকীয় পরিচালক (প্রকাশনা) রাজ চেঙ্গাপ্পার সাথে একটি সাক্ষাৎকারে বসেছিলেন। এসময় তিনি এক ঘণ্টার আলাপচারিতায় দেশ পরিচালনায় তার অনন্য ব্যবস্থাপনা শৈলী নিয়ে গভীর আলোচনার পাশাপাশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটির বিশেষ কিছু অংশ তুলে ধরা হলো: 

২০২৩ সালে আপনি ভারতে মিডিয়ার সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন আর এজন্য আপনাকে অভিনন্দন। এমন প্রাপ্তিতে আপনার কেমন লাগছে? 

আপনাকেও ধন্যবাদ। আমার কাছে এ বছর ভারতের জন্য অনেক ‘নিউজ মেকার’ রয়েছেন। কৃষকদের কথা ধরুন যারা কিনা এ বছর কৃষিতে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের পাশাপাশি মিলেটে বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছেন; আবার জি-২০ সম্মেলন সফলে আমার দেশের জনগণ বিশাল ভূমিকা পালন করেছেন; অন্যদিকে ‘বিশ্বকর্মা’র মধ্যদিয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠীরা তাদের সফলতার পথ খুঁজে পেয়েছেন; আমাদের এথলেটসরা এশিয়ান গেমস, এশিয়ান প্যারা গেমস ও টুর্নামেন্টে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন;  আমাদের যুবারা নতুন রেকর্ড করেছেন, বিজ্ঞান ক্ষেত্রে  উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে ভাল একটা শুরুর দিকে ভারত যাত্রা করছে, আমাদের নারী শক্তিরা সকল ক্ষেত্রে সম্মুখসারিতে তাদের ভূমিকা রাখছেন, বিশেষ করে নতুনভাবে নারীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সকল স্তরে নারী নেতৃত্বের পথ তৈরি হয়েছে ভারতে। দীর্ঘ সময় ধরে জনগণকে সেবা দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। এই সময়ের মধ্যে প্রচুর সফলতার মুখ যেমন দেখেছি আমরা, আবার অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনও হয়েছি। 

কোন কোন বিষয়গুলো আপনার কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল? 

২০২৩ সালের মধ্যে সকল ক্ষেত্রে ভারতের দ্রুত আরোহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।  বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার অন্যতম লক্ষ্য ছিল এটি। আমরা আমাদের জাতির সুপ্ত সম্ভাবনা উন্মোচনের আয়োজন করেছি। বৈশ্বিক ফোরামে, ভারতের উপস্থিতি এবং অবদানের বিষয়গুলো নিয়ে রীতিমত আলোচনা হচ্ছে। যে দেশটাকে একসময়  মনে হতো পেছনে ফেলে আসা দেশ, সেই দেশের জনগণ এখন সামনের সারিতে  থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ভারত এমন এক দেশ হয়েছে যেখান থেকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছে, আমরা আজ সেই দেশ যে দেশ কিনা নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বব্যাপী নতুন সব প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে সক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছে। ‘এটি ভারতের মুহূর্ত’-এ বিষয়ে আজ বিশ্বের সম্মতি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। 

২০২৩ সালের দিকে একটু তাকাই, আপনি কি এখন পর্যন্ত আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী এই বছরকে সন্তোষজনক হিসেবে দেখছেন এবং এই বছরটিকে কি আপনার এবং দেশের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট মনে করছেন?

এক বছরের মধ্যে আমার যাত্রার সময়কালকে মূল্যায়ন করার চিত্রটি সঠিক নাও হতে পারে। কারণ আমার দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিকল্পনাগুলোর একটি প্রগতিশীল উদ্ঘাটন রয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। যখন আমি কিছু শুরু করি, আমি সেটির শেষ পর্যায় সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখি। কিন্তু আমি কখনই শুরুতেই কোনো বিষয়ের চূড়ান্ত গন্তব্য বা নীলনকশা ঘোষণা করি না। সুতরাং, আপনি আজ যা দেখছেন তা আমি যা কাজ করেছি তা নয় কিন্তু। সামনে একটি বড় চিত্র অবশেষে উন্মোচিত হবে আপনাদের জন্য। আমি বড় পরিসরে কাজের পরিকল্পনা করে থাকি। বলতে পারেন একজন শিল্পীর মতো, বিন্দু থেকেই শুরু করি। আর যখন শুরু করি তখন চূড়ান্ত ছবি দেখা যায় না।

আপনার উদ্ভাবিত অনন্য পদ্ধতির কিছু উদাহরণ যদি দিন আমাদের?

গুজরাটের স্ট্যাচু অফ ইউনিটিকে উদাহরণ হিসেবে নিতে পারেন। যখন আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম যে আমরা একটি ১৮২ ফুটের মূর্তি তৈরি করব, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন এটি গুজরাট বিধানসভার ১৮২আসনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার কেউ ভেবেছেন নির্বাচনের আগে একটি সম্প্রদায়কে খুশি করার জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছি। অথচ দেখুন কীভাবে এটি একটি সম্পূর্ণ পর্যটন ইকোসিস্টেমের রূপ লাভ করেছে যেখানে সব বয়সের গোষ্ঠী এবং মানুষের আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগেও একদিনে ৮০ হাজার দর্শক এটি দেখতে এসেছিলেন। তাহলে এটা উপলব্ধি করা যায় যে, স্ট্যাচু অফ ইউনিটির জনপ্রিয়তার মাত্রা কোথায় দাঁড়িয়েছে। আমি কেবল একটি বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তার বিনিময়ে কয়েক ডজন সরবরাহ করেছি। এটাই আমার কাজের ‘স্টাইল’। যখন ভারত মণ্ডপের কাজ শুরু হয়েছিল তখন কেউ ভাবতেই পারেননি যে এখানে জি২০ অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু আমি একটা পরিকল্পনা নিয়েই এ কাজে হাত দিয়েছিলাম। আমি যদি নতুন সংসদ ভবন বা গরিবদের জন্য ৪০ মিলিয়ন ঘর তৈরির জন্য কাজ করতে পারি তবে আমি সকল ক্ষেত্রেই সমান পরিকল্পনা ও নিষ্ঠা নিয়েই সব কাজ সম্পাদন করে থাকি।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //