‘ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনী গাজায় বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো’

দ্য ক্রেডলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে, ইহসান আতায়া, ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য, পিআইজে-এর আরব ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান এবং লেবাননের দূত, অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও তাদের অর্জন তুলে ধরেছেন। 

আতায়ার তরফ থেকে পাওয়া সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়গুলোর মধ্যে মধ্যে একটি ছিল যে, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের দ্বারা পরিচালিত "আল-আকসা ফ্লাড" অপারেশনটি মূলত আগাম একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ। ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনী গাজায় বড় রকমের হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো আর তাই এই অপারেশনের মাধ্যমে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন আরব রাষ্ট্রগুলোর প্রতি। 

ইহসান আতায়ার সাক্ষাৎকারটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো:

"আল-আকসা ফ্লাড’’ অপারেশনের মূল উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল? আপনার প্রত্যাশা কী ছিল এবং কতটা সফলতা এসেছে?

আতায়া: "আল-আকসা ফ্লাড" অভিযানের লক্ষ্য শুরু থেকেই ঘোষণা করা হয়েছে। মুলত আল-আকসা মসজিদকে (জেরুজালেমে) লক্ষ্যবস্তু করে মুসলিম ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অবমাননা ও আমাদের মহিলাদের উপর হামলা প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করা অন্যতম লক্ষ্য ছিল। আল-আকসা মসজিদ ঘিরে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব থেকে ফিরিয়ে আনা ও স্থানিকভাবে বিভক্তের পাশাপাশি সাময়িক কিছু সমাধানের ব্যবস্থা করা। 

আমাদের শত্রুরা ক্রমাগত এটি করতে কাজ করে যাচ্ছিল আর এ কারণেই এই অপারেশনটির নামকরণ করা হয়েছিল "আল-আকসা ফ্লাড।"

তদুপরি, অপারেশনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল একটি পূর্ব-অভিযানের মাধ্যমে শত্রু দলের আকস্মিক হামলার প্রস্তুতি নেওয়া। অবশ্যই, অপারেশনটি শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণভাবেই সাফল্য অর্জন করেছে। দখলদার বাহিনীর ভিত্তিকে দুর্বল করা এবং ভঙ্গুরতার মাধ্যমে পরাজিত করার সম্ভাবনাকে বেগবান করেছে। একইসঙ্গে সমস্ত ফিলিস্তিনকে মুক্ত করাও অন্যতম লক্ষ্য। বিপুল সংখ্যক ইহুদি সৈন্য এবং বসতি স্থাপনকারী, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের হাতে পড়েছে; তারা ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ের জন্য আলোচনার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ইসরায়েল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার মধ্যদিয়ে গাজায় নজিরবিহীন গণহত্যা চালিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উদ্দীপিত করে আসছে। তবে সব ফিলিস্তিনিদের শাস্তি দিয়ে এমনটা অর্জন করতে চায় তারা?

আতায়া: গাজার ফিলিস্তিনি জনগণ "ইনকিউবেটর" নয়, তারা প্রতিরোধের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফিলিস্তিনি জনগণকে পুনরায় বাস্তুচ্যুত করতে, তাদের ভয় দেখানোর জন্য ইহুদিবাদীদের হাতে মার্কিন প্রশাসনের নেতৃত্বে এই সমস্ত নজিরবিহীন গণহত্যা এবং বিধ্বংসী যুদ্ধ সত্ত্বেও তারাই শত্রুর মোকাবিলা করার দৃশ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয়েছে এবং শত্রুরা তার ঘোষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। 

প্রতিরোধ দলগুলো তাদের লক্ষ্য পূরণে পরবরতী প্রক্রিয়া  প্রসারিত করার জন্য "রেড লাইনস" হিসেবে কোনটিকে অনুসরণ করবে?

আতায়া: আমি মনে করছি আমাদের শত্রুপক্ষ সমস্ত লাল রেখা অতিক্রম করেছে। যুদ্ধের সম্প্রসারণ মূলত গাজার ঘটনার গতিপথের সাথে সংযুক্ত। গাজার প্রতিরোধ যদি ইহুদিবাদী-আমেরিকান প্রকল্পকে ভেঙে দিতে পারে এবং এই শত্রুকে একা মাঠে পরাজিত করতে পারে, তাহলে সমস্ত ফ্রন্ট খুলে এটিকে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত করা হবেই বা না কেন?

অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড শুরুতে সৈন্য এবং বসতি স্থাপনকারীদের দুর্বল করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পরাজয়ের দিকে নিয়ে যেতেই শুরু হয়েছিল। তবে তাদের দ্বিতীয় পরাজয় ছিল স্থল যুদ্ধ শুরু করে গাজা আক্রমণ। অতএব, এটি নির্ভর করে যুদ্ধের গতিপথ, আক্রমণ প্রতিহত করার প্রতিরোধের ক্ষমতা এবং গাজায় শক্তিশালী অবস্থান ধারণে তাদের সক্ষমতার ওপর। পাশপাশি শত্রু মোকাবেলায় কতটা পারঙ্গম সেটিও এবার দেখার বিষয়। 

আমরা জানি বিনিময় ছাড়া স্বাধীনতা লাভ সম্ভব নয়। আমাদের ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো গণহত্যা সেটির প্রমাণ। আমাদের আত্মত্যাগ সেটির দৃষ্টান্ত। ফরাসি উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে আলজেরিয়ার কয়েক মিলিয়ন মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।

আমরা "আল-আকসা ফ্লাড" অপারেশনের একীকরণ এবং সমন্বয়ের কথা সম্পর্কে বলছি। কে যুদ্ধের জন্য এ সময় বেছে নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন?

আতায়া: শুরু থেকেই আল-কাসাম ব্রিগেড এবং হামাস এটির ঘোষণা করেছিল। তারাই সময় বেছে নেওয়া এবং এই অপারেশনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু অপারেশন শুরু হওয়ার পর, গাজার অন্যান্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ দলগুলোকে জানানো হয়েছিল যাতে করে তারা এই যৌথ অপারেশনে যোগ দেন। কারণ তাদের কাছেও স্পষ্ট ভাবনা ছিল যে এই যুদ্ধটি বিশাল এবং প্রশস্ত হবে এবং শুধুমাত্র একটি সামরিক বাহিনীকে ধ্বংস করার মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ থাকবে না। ইসরায়েল সামরিক বাহিনীকে ধ্বংস করে তাদের সৈন্যদের বন্দী করে গাজায় ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য ছিল।

পিআইজে-এর আল-কুদস ব্রিগেড কি দক্ষিণ লেবানন থেকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযান শুরু করেছে । এমনটা কী নির্দেশ করছে? 

আতায়া: সামরিক অভিযান শত্রুদের লক্ষ্য করে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছিল। এটি ফিলিস্তিনি সংঘাতের ক্ষেত্রগুলির ঐক্য প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিল যে ফিলিস্তিনিরা একটি অবিভাজ্য ইউনিট, জনগণ ও প্রতিরোধ। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যেখানে যা ঘটছে সে বিষয়ে নজর রয়েছে, আর তা যেখানেই হোক না কেন। 

আল-কুদস ব্রিগেডের যোদ্ধারা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ঝড় তুলতে পারে সেটির প্রমাণ আমরা দিয়েছি। ইহুদিবাদী সৈন্যবাহিনী ও জায়নিস্ট পর্যবেক্ষণ এবং গোয়েন্দা সংস্থার চরম নিরাপত্তা বলয়ের প্রতি নির্মম আঘাত ছিল আমাদের অপারেশন, বলা যেতে পারে একটি নৈতিক আঘাত।

যুদ্ধ বিস্তৃত এবং অব্যাহত থাকবে। এমনকি পশ্চিম তীরে যেখানে অবিরাম সংঘর্ষ চলছে সেটি সহ সাম্প্রতিক সময়ে ইহুদিবাদী বর্বরতার বিরুদ্ধে আমাদের বিক্ষোভ তুঙ্গে। 

স্থল আক্রমণের বিষয়ে যদি বলেন?

আতায়া: আমার মতে এখন পর্যন্ত আমরা প্রতিরোধ  মোকাবিলা করার ক্ষমতা পরীক্ষা করার একটি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশপাশি দখলদারিতের স্থল আক্রমণে যাতে হতাশ না হয় আমাদের যোদ্ধারা সে বিষয়েও কজ করে যাচ্ছি। দখলদার বাহিনী খুব একটা অগ্রগতি করতে পারবে না বলে বিশ্বাস। 

(ভাষান্তরিত)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //