অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক। ডা. বিধান মনোচিকিৎসার পাশাপাশি লেখালেখির সঙ্গেও সম্পৃক্ত। তার জন্ম ১৯৬৪ সালে সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর উপজেলার গলহা গ্রামে।
তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। মানসিক রোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৯৩ সালে ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল রিসার্স (আইপিজিএমআর) থেকে। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের দশম ব্যাচে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে যোগদান করেন। তা ছাড়া তিনি বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম ডি হোসাইন।
প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সারা দেশে বেসরকারিভাবে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কোনো নিয়মের মধ্যে আনার পরিকল্পনা কী আছে?
সব বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধনের আওতায় আনার কাজ চলছে। এ জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়াও সহজ করা হয়েছে। ফলে বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন না থাকলে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এটা কার্যকর করব আমরা। কারণ সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পাঠ্যপুস্তক দিয়ে থাকি। তাহলে শর্ত আরোপ করা যাবে যে রেজিস্ট্রেশন না থাকলে প্রতিষ্ঠান পাঠ্যপুস্তক পাবে না।
বেতনে না পোষালে অন্য পেশায় চলে যান- শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রাথমিকের উপদেষ্টার এমন বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সঠিকভাবে আমার বক্তব্য আসেনি। কারণ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে অত্যন্ত আন্তরিক। এর আগে আমার বিভিন্ন বক্তব্য এবং গণমাধ্যমে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে সেটা স্পষ্ট করেই বলেছি।
প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মানোন্নয়ন কী হয়েছে?
প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মানোন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সাক্ষরতার ক্ষেত্রে কোনো উন্নয়ন হয়নি। কাগজপত্রে সাক্ষরতার হার ৭৮ শতাংশ। বাস্তবে তা ৫০ শতাংশেরও নিচে। নিরক্ষর জাতি দিয়ে আমরা উন্নতি করতে পারব না। প্রাথমিকের কাজ হলো, একটা মানুষকে সাক্ষর করে তোলা- কথ্য ভাষা, লেখ্য ভাষা, গাণিতিক ভাষায় সাক্ষর করে তোলা।
জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে বর্তমান সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে?
স্বাধীনতার পর অনেক শিক্ষানীতি করা হয়েছে। সে জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবও পেশ করা হয়েছে। কিন্তু তা কখনো কার্যকর হয়নি। এটা মূলত আমাদের জাতীয় সমস্যা। এর জন্য দেশের অগ্রসর নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের সমৃদ্ধ দেশগুলো তাদের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে প্রণয়ন করে যেন দেশের প্রতিটি নাগরিক এই শিক্ষাব্যবস্থায় অনুপ্রাণিত হয়। এ জন্যই তাদের মধ্যে এক ধরনের মূল্যবোধের সঞ্চার হয়। অথচ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা দিন দিন বিভক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এত কম সময়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। সে জন্য মাঠ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় ও বিভিন্ন সভার আয়োজন করছি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোন বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন?
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইকিউ লেভেল পরীক্ষার জন্য দেশের উপযোগী ‘আইকিউ টেস্ট’ তৈরি করা জাতির এবং শিক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আইকিউ টেস্ট তৈরির জন্য কার্যকর সহযোগিতা ও কারিগরি সহায়তা করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে?
হাওরাঞ্চলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে ‘মিড ডে মিল’ চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে শিক্ষকদেরও নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
নতুন বছরের শুরুতে এবার শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক পায়নি? এ নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী?
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নানা ধরনের সমস্যা সমাধানে দিন পার করছে। এ জন্য এবার বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া যায়নি। এ ছাড়া বইয়ে পরিবর্তন ও পরিমার্জনের জন্য চলতি বছর বই বিতরণে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামী বছর প্রথম দিনেই সব শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh