নারী-শিশুদের লক্ষ্য করে ঢাকা নগরী বানানো হয়নি: মোহাম্মদ এজাজ

২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নদী, পরিবেশ ও নগর পরিকল্পনা নিয়ে গবেষণাসহ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন মোহাম্মদ এজাজ। রাজধানী ঢাকার খাল-বিল দখলমুক্ত করা ও নগরীর মানুষের অধিকার নিয়ে তিনি সব সময় সোচ্চার। নদী গবেষণা, পানি ব্যবস্থাপনা ও নগর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্স সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছেন। ঢাকা শহরের নতুন অভিভাবক হিসেবে নিজের কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিশাত বিজয়।

ঢাকা শহরের নতুন অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নিলেন, আপনার কাছে এ শহরের প্রধান সমস্যা কী বলে মনে হয়?

ঢাকায় এখন ডেমোগ্রাফির (জনঘনত্ব) জন্যে যথেষ্ট অবকাঠামো নেই। ম্যানেজমেন্টের জায়গা থেকে এটি একটি চ্যালেঞ্জ, আরেকটি চ্যালেঞ্জ পরিবেশগত- এই দুটি হচ্ছে মূল। 

তৃতীয় আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, এই সিটি নারী ও শিশুদের লক্ষ্য করে বানানো হয়নি। এখানকার প্রতিটি সিদ্ধান্ত নারীবিরোধী-শিশুবিরোধী। প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা বাদ রেখে করা হয়েছে। এটা নতুন করে করতে হবে।

এখন পর্যন্ত শহর নিয়ে (বিগত) মেয়ররা কথা বলেছেন গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা- এসব রেটরিক, ন্যারেটিভও নয়। রেটরিক  নির্বাচনের জন্যে ভালো, কিন্তু চলবেন কীভাবে? সেটার একটি ধারণা থাকতে হবে, প্রতিটি শহর-নগরের পুরো টিমের মাইন্ডসেট থাকতে হবে বা এই নগরের ফ্রেমিং এমন হবে। ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা, ইনক্লুসিভিটি, মানবাধিকার- এ রকম একটা নগর চাই। তাহলে নগরের অনেককিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে। 

আপনার প্রধান লক্ষ্য কি এই তিনটিই? 

শহরের মধ্যে প্রতিটি মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেখতে হবে বেঁচে থাকার অধিকার, সুরক্ষা, পরিবেশ ঠিক করতে পারছেন কি না। তখন আপনাকে গুলশান-বনানীর চিন্তা করতে হবে না, গ্রাসরুট নিয়ে চিন্তা করতে পারবেন। 

আপনার আগামী ১০০ দিনের পরিকল্পনা কী?

আমার এ রকম আলাদা ১০০ দিনের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা বিশেষ কিছু দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। যেমন- ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করতে হবে, কারণ সামনে বর্ষা আসছে। এরপর আমরা নজর দেব ঢাকার মানুষের খোলা জায়গা নেই- এ বিষয়ের দিকে। এটা মানুষের অধিকার। আমরা চাই, ঢাকায় নারী ও শিশুরা খেলার জায়গা পাবে, কিছু সুইমিং পুল হবে, কমিউনিটি সেন্টার হবে। এটা আমার এখনকার প্ল্যানে আছে। এ ছাড়া আমার ৩৬৫ দিনের প্ল্যান আছে।

ঢাকা শহরের ভেতরে হাউজিংগুলো কোনো খেলার মাঠ, পার্ক রাখেনি। এটা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?

আমরা আশপাশে সরকারি কোনো জায়গা পেলে মাঠ করে দেব। হাউজিংগুলো তো আর মাঠের জায়গা দেবে না। প্রশ্নটা ছিল হাউজিংগুলো নিজেরাই এটা করলে তাদের তো প্ল্যান পাস হওয়ার কথা না।

হাউজিংগুলোকে বাধ্য করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি? 

আমি এখানে বসেছি তো কেবল, দীর্ঘ মেয়াদে সুযোগ পেলে এটা করব। 

বায়ুদূষণ নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী? 

বায়ুদূষণ রোধে আমরা দুটি পরিকল্পনা নিয়েছি। একটি হচ্ছে ঢাকা শহরের বালি দূর করতে পানি ছিটানো হবে। আরেকটি খোলা ট্রাকে বালি আনা-নেওয়া বন্ধ করা। আমরা এটা মনিটর করব।

ঢাকা নগরীর চারপাশে যে সার্কুলার ওয়াটার করার কথা ছিল, সেটা কি হবে?

আমার পরিকল্পনা নেই। এটা বিআইডব্লিউটিএর করার কথা, এর জন্য ১৪টি সেতু ভাঙতে হবে। এটা সরকার না ভাঙা অব্দি হবে না। 

আপনার দিক থেকে কী করবেন নদী দূষণ রোধে?

বুড়িগঙ্গা স্যুয়ারেজ লাইন মুক্ত হবে। তুরাগে স্যুয়ারেজ পড়ে কি না পড়ে- আমরা জানি, সেটাও আমরা বন্ধ করব। 

ঢাকার গণপরিবহনের সমস্যার সমাধান হতো যদি অভ্যন্তরীণ নৌযান বৃদ্ধি করা যেত, বিশেষ করে কুড়িল থেকে হাতিরঝিল, এটা চালু সম্ভব? 

যদি দীর্ঘমেয়াদি আমি থাকি তাহলে এটা করার চেষ্টা করব। 

ঢাকার গণপরিবহন নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

আগামী মাস থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে হবে। এ রকম পরিকল্পনা আছে। আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আমরা নিজেদের বাস নিজেরাই চালাব। 

ঢাকার ফুটপাতে অনেক টাকা খরচ করলেও ব্যবহার করতে পারেন না পথচারীরা?

আমরা এবার ফুটপাত দখলমুক্ত করব। পুলিশ পাচ্ছি না, কিন্তু পুলিশ পাব, এটা সরকারেরই।

কারওয়ান বাজার কী সরাবেন?

এটা নিয়ে এখনো জানি না। বসলে বলতে পারব। 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনাদেরও।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh