নির্বাচনের আগেই রাষ্ট্র সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতি ঘটবে: মাহফুজ আলম

মাহফুজ আলম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগীর দায়িত্বে ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর তিনি ছাত্র, নাগরিক ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন। তাকে প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে গত বছরের ১০ নভেম্বর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। বর্তমানে মাহফুজ আলম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তার সঙ্গে কথা বলেছেন এম ডি হোসাইন।

শুরুতেই মাহফুজ আলম অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বলেন, অনেকেই বলেন যে এই সরকার দ্রুত নির্বাচন দিয়ে চলে যায় না কেন। কিন্তু যেটা অনেকে ভুলে যান সেটা হচ্ছে, অভ্যুত্থানে অনেক শহীদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত এই সরকার। দেখতে অরাজনৈতিক মনে হলেও মূলত এটি রাজনৈতিক সরকার। কারণ এটি একটি রাজনৈতিক জয়ের ওপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করার সুবাদেই আমরা এখানে রয়েছি। গণ-অভ্যুত্থানে যারা জয়ী শক্তি, তারাই আসলে দেশ চালাচ্ছে। এটা খুবই রাজনীতি প্রভাবিত সরকার এবং রাজনৈতিক সরকার।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত নৈরাজ্য প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, এখন থেকে যেকোনো ধরনের ‘মব জাস্টিসের’ বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। যিনিই ‘মব জাস্টিস’ করেন না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণকে জানাতে চাই, যেখানে মব জাস্টিস পরিস্থিতি হবে, সে যে ধর্মের, লিঙ্গের, বর্ণের, জাতের হোন না কেন, আমরা এখন থেকে কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হব।

মাহফুজ আলম বলেন, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সামনে মব জাস্টিস অথবা কোনো থানা ঘেরাও থেকে শুরু করে যেকোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা কঠোর ভূমিকা রাখব। গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সব অংশীজনকে বলে দিয়েছি। আমরা অবশ্যই সামনে মব জাস্টিস পরিস্থিতি থেকে শুরু করে যেকোনো জায়গায় যত জটিলতা, অস্থিরতা, নৈরাজ্য বিষয়ে এখন থেকে জিরো টলারেন্স ভূমিকায় অবতীর্ণ হব।

সরকারের সফলতা ও চ্যালেঞ্জের বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচার, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, জুলাই শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার সক্রিয় ও সফল। কিন্তু সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ী শ্রেণি ও মিডিয়ার মধ্যকার গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর বিরোধ; স্বার্থান্বেষী ও মতান্ধতা; অন্যদিকে গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধশক্তির ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক্রমে উত্থান সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে। 

গণ-অভ্যুত্থানে পরাজিত একটি শক্তিশালী জোটের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার যুদ্ধ লড়ছে বলে মন্তব্য করেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, সরকার যুদ্ধ করছে গণ-অভ্যুত্থানে পরাজিত একটি শক্তিশালী দেশি-বিদেশি জোটের বিরুদ্ধে। স্বার্থান্বেষী মহল জনগণের মধ্যকার অভ্যুত্থানের ঐক্যকে নস্যাৎ করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সফলও হচ্ছে। 

মাহফুজ আলম বলেন, সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল ও অভ্যুত্থানের বিভিন্ন শক্তিকে মুখোমুখি না করাই আমাদের জন্য আখেরে ভালো হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং সে যুদ্ধ অন্য জায়গা থেকে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটা কন্ট্রোলরুম থেকে সে যুদ্ধের প্রতি সপ্তাহ ও দিনের কর্মসূচি চালু করা হয় ও মনিটর করা হয়। আমাদের সে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়তে হবে।

নির্বাচন কখন হতে পারে, এই প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন,  যথাসময়েই নির্বাচন হবে। তবে রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যা ও লুটপাটের বিচার, প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনরুজ্জীবন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরসহ নানা বিষয় আমাদের লক্ষ্য থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এ সরকারের আমলে এ দেশকে গড়ে তোলার সুযোগ ও সক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলেই ভিনদেশ থেকে দ্রুততার সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের প্রেসক্রিপশন আসছে। কিন্তু নির্বাচন যথাসময়েই হবে এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে এ দেশে নির্বাচনের আগেই রাষ্ট্র সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতি ঘটবে এবং খুনি, ধর্ষক ও লুটেরাদের বিচার হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh