রাজধানীর একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন আরমান সাহেব। অফিস শেষে সবার যখন বাড়ি ফেরার তাড়া, আরমান সাহেব তখন নিজের ডেস্কে বসে ফাইলপত্র গোছান, আবার কখনো কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকেন।
সহকর্মীদের কেউ কেউ মজা করে বলেন, কী ব্যাপার! বউয়ের সাথে ঝগড়া হলো নাকি? মুচকি হেসে আরমান সাহেব বলেন, না না, ঝগড়া হয়নি। ব্যাপারটা হলো আমার বউও চাকরি করে। তাই আমাদের মধ্যে যে আগে বাসায় পৌঁছাবে, তাকেই রাতের খাবার বানাতে হবে। তাই একটু দেরি করে ফিরলে ক্ষতি কী? এটা শুধু আরমান সাহেবের গল্প নয়, প্রতিটি চাকরিজীবী দম্পতির দৈনন্দিন জীবনের প্রতিচ্ছবি।
অফিসের চাপ, সংসারের দায়িত্ব এবং পারস্পরিক সমঝোতা, সব মিলেই চাকরিজীবী দম্পতির জীবন। গল্পটি প্রতিটি চাকরিজীবী দম্পতির সেই পরিচিত লড়াইয়ের প্রতীক, যেখানে তারা নিজেদের কাজ, সংসার ও সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই ব্যস্ততা ধীরে ধীরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অদৃশ্য দেয়ালও তৈরি করে। একটা সময় পর এই অদৃশ্য দেয়াল ভেঙে ফেলা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আর তখনই দাম্পত্য জীবনে অশান্তি শুরু হয়। যার শেষ পরিণতি সংসারে ভাঙন। অথচ পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলে দূরত্ব দূর করা কঠিন কিছু নয়।
দায়িত্ব ভাগাভাগি করুন : সংসারের কাজ এবং অফিসের কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে দায়িত্ব ভাগাভাগি করা অত্যন্ত জরুরি। কে কোন কাজ করবে, তা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। যেমন রান্না, বাচ্চাদের দেখাশোনা, বা বাজার করা।
সময়ের সঠিক ব্যবহার করুন : সময় ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অফিসের কাজ এবং পারিবারিক দায়িত্বের জন্য সময় ভাগ করে নিন। ক্যালেন্ডার বা টাস্ক ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন, যা আপনাদের পরিকল্পনাকে সহজ করবে।
সহযোগিতা ও সমর্থন : দুজনের মধ্যে সহযোগিতা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। একে অপরের কাজকে সম্মান করুন এবং প্রয়োজনে সমর্থন দিন। কখনো কখনো একজনকে একটু বেশি দায়িত্ব নিতে হতে পারে, এ বিষয়টিকে সহজভাবে নিন।
সমঝোতা করুন : কিছু ক্ষেত্রে সমঝোতা করতে হতে পারে। এটি সব সময় সহজ নয়, কিন্তু সম্পর্ককে সুস্থ রাখতে ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
অগ্রাধিকার নির্ধারণ করুন : কোন কাজগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা নির্ধারণ করুন। অফিস এবং সংসারের কোন কাজ আগে করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন।
সংসার নয়, দেয়ালটা ভাঙুন : একসঙ্গে জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই সব নয়। নতুন জীবনে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে নারী ও পুরুষ, উভয়েরই পুরনো অভ্যাসগুলো থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। বিয়ের আগে যা যা করা হতো, বিয়ের পর সবকিছু ঠিক আগের মতো চালানো কঠিন। বন্ধুত্ব, আড্ডা সবই করতে হবে, তবে জীবনের এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে। নতুন জীবনকে মেনে নিয়ে চলতে হবে।
সম্পর্ক হোক মধুর : দিনের শুরু যেমন ঘর, শেষটাও তেমনি ঘর। দীর্ঘ কর্মব্যস্ততার পর ঘরই শান্তির আশ্রয়। এই আশ্রয়কে টিকিয়ে রাখতে হলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সমঝোতা ও ভালোবাসা জরুরি। সমস্ত দিন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই একে অন্যের জন্য সময় বের করতে হবে। যেটুকু একান্তই দুজনের, যা সম্পর্ককে মজবুত রাখবে।
আত্মচর্চা : নিজের জন্যও সময় রাখুন। এটি মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : চাকরিজীবী দম্পতি চাকরি অফিস সংসার
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh