কাঠবিড়ালি ও মানুষের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব

যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখে ৪৮০০ কিলোমিটারের যাত্রা

ভেনিজুয়েলা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে পাড়ি জমাতে ইয়েসন এবং নিকোকে কয়েক সপ্তাহ ধরে পথে চলতে হয়েছিল। যাত্রা পথে বিপজ্জনক জঙ্গল পাড়ি দেয়ার পাশপাশি একটি মৃতদেহ অতিক্রম করে তারা। আর এমন যাত্রার জন্য ইয়েসন তার ফোন বিক্রি করেছিল। কেননা তাদের এই ভ্রমণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ হাতে ছিল না। বলছিলাম একটি কাঠবিড়ালি নিকো ও ভেনেজুয়েলা নিবাসী ইয়েসনের ভ্রমনের গল্প। হ্যাঁ নিকো একতি কাঠবিড়ালি যে কিনা এই বিপদসংকুল যাত্রাপথে তার মালিক ইয়েসনের ঘাড়েই সর্বদা চড়ে ছিল। 

তবে দুঃখ হলো এখন যেহেতু ইয়েসন অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সম্ভবত তাকে নিকোকে পিছনে ফেলে যেতে হবে।

প্রাণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসার নানা নজির দেখা যায় সর্বত্র। তবে এই তালিকায় নতুন করে এই ঘটনা যোগ করা যেতে পারে। ভেনিজুয়েলার এই তরুণ যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন পেতে পাড়ি দিয়েছেন কণ্টকাকীর্ণ দীর্ঘ এক পথ। অর্থাভাবে মুঠোফোনটি বিক্রি করলেও ছেড়ে দেননি তার আদরের কাঠবিড়ালিটিকে। নিকোকে সঙ্গে নিয়ে ছুটেছেন ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পথ।

ইয়েসন (২৩) বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ছয় মাস ধরে মেক্সিকো সীমান্তে শরণার্থীশিবিরে রয়েছেন। গত শনিবার পর্যন্ত এ সংবাদটি সবার মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। 

ইয়েসন বলেন, মেক্সিকো পর্যন্ত আসতে তার কয়েক সপ্তাহ লেগেছিল। দীর্ঘ ওই পথ পাড়ি দিতে 

ইয়েসন ঘর ছাড়েন একটি ব্যাগ নিয়ে। সঙ্গে নেন কালো ডোরাকাটা সাদা লোমের নাইকোকে। আর প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বাঁচাতে নাইকোকে তিনি রেখেছেন ছোট্ট একটি উলের থলেতে।

ইয়েসন বলেন, ভেনিজুয়েলায় তার পরিবারের নিরাপত্তার ভয়ে তিনি শংকিত কিন্তু নিকো ছাড়া তার জীবন অনেকটাই অর্থহীন। 

এদিকে ইয়েসনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য এবং আশ্রয় পেতে অনুরোধ জানিয়ে সীমান্তে অপেক্ষামান রয়েছেন। আইন মতে কোন পশু পাখিকে সাধারণত সীমান্ত অতিক্রম করতে দেয়া হয় না। এর আগেও অনেকেই যারা প্রায় ৩ হাজার মাইল (৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার) পথ পাড়ি দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে রওনা দিয়েছেন  তারা শুধুমাত্র তাদের সন্তান বা প্রিয়জনদের সাথে করে নিয়ে যেতেন। 

আর ইয়াসেন তার প্রিয় সঙ্গী হিসেবে একটি কালো ডোরা এবং সাদা চুলের ঝাঁকওয়ালা কাঠবিড়ালি নিকোকে সাথে নেয়। 

ছয় মাস ধরে, ইয়েসন এবং নিকো মাতামোরোসে অন্যান্য শতাধিক অভিবাসীদের সাথে টেক্সাসের সীমান্ত শহর ব্রাউনসভিলের একটি ছাউনিতে তাঁবুতে থাকতেন। 

গ্ল্যাডিস কানাস, একটি বেসরকারি সংস্থা- আয়ুদান্ডোলেস এ ট্রিউনফারের পরিচালক বলেন যে, তিনি অন্য অভিবাসীদের মুখোমুখি হয়েছেন যারা তাদের পোষা প্রাণী - বিড়াল, কুকুর এবং এমনকি একটি খরগোশের সাথে একবার পার হতে চেয়েছিলেন। 

ইয়েসন নিকো সম্পর্কে জানান, একবার ভেনিজুয়েলায় তিনি কাঠবিড়ালিটিকে খুঁজে পেয়েছিলেন। কাঠবিড়ালিটি সদ্য জন্মগ্রহণের পর তাকে বাড়িতে নিয়ে যান তিনি। পরিবারের সদস্যরা তাকে ভালবেসে দই খাওয়ান। 

ইয়াসেন বলেন, পাইন গাছে চটকাতে পছন্দ নিকোর। আর প্রিয় খাবার টমেটো এবং আম। তবে বর্তমানে এমন সময় এসেছে যে নিকোর জন্য খাবার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। 

হাজার হাজার অভিবাসীর মতো, ইয়েসন ডরিয়েন গ্যাপ নামে পরিচিত বিপজ্জনক জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করেন। আর সেখানেই তিনি কম্বলের নীচে একজন ব্যক্তির মৃতদেহ খুঁজে পান। ইয়াসেন তার যাত্রার খরচের জন্য ফোনটি ৩৫ ডলারে বিক্রি করেন।

তবে নিকোকে যদি হারাতে হয় সে প্রসঙ্গে বলেন, "আমি চাই না যে সে আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হোক, কারণ আমি জানি যে আমরা উভয়েই হৃদয়ের তানে অসুস্থ হয়ে পড়ব।"

সূত্র:এপি 


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //