যুদ্ধাপরাধ: রাজশাহীর টিপু সুলতানের রায় বুধবার

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের মামলায় রাজশাহীর বোয়ালিয়ার মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু রাজাকার ওরফে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে রায় আগামীকাল বুধবার। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। 

আদালতে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।

এর আগে গত ১৭ অক্টোবর এই মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষামাণ রাখা হয়।

গত বছরের ২৭ মার্চ এ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে একই বছরের ৮ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ আসামির বিরুদ্ধে মামলায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজশাহীর বোয়ালীয়ায় ১০ জনকে হত্যা, দুইজনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩টি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন দেয়ার অভিযোগ এসেছে। 

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি আর্মি ও স্থানীয় রাজাকাররা। স্থানীয় সেই সব রাজাকারদের মধ্যে টিপু সুলতানই বেঁচে আছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ আসামি জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ করতেন। এ আসামি ১৯৮৪ সালে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে অবসরে যান। 

টিপু সুলতান ১৯৭৪ সালের ১০ আগস্ট একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ছাড়া পান। গত বছরের ১ জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের মামলায় মতিহার থানার পুলিশ তাকে ফের গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখান হয়।

আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে যে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে তা হলো- ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টা থেকে পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত আসামি আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতান ওরফে টিপু রাজাকার স্থানীয় অন্যান্য রাজাকার ও পাক সেনারা বোয়ালীয়া থানার সাহেব বাজারের এক নং গদিতে (বর্তমানে জিরো পয়েন্ট) হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবর মন্ডলকে আটক করে। পরে তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পে নিয়ে দিনভর নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে তাঁর লাশ মাটিচাপা দেয়।

অপরটি হলো- ১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর রাত আনুমানিক ২টায় টিপু সুলতাস, স্থানীয় রাজাকার ও ৪০ থেকে ৫০ পাক সেনা বোয়ালিয়া থানার তালাইমারী এলাকায় হামলা চালায়। এ হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা চাঁদ মিয়া, আজহার আলী শেখসহ ১১ জনকে আটক করে নির্যাতন চালায়। এসময় তারা তালাইমারী এলাকার ১২ থেকে ১৩টি বাড়ি লুট করে। পরে আটক ১১ জনকে রাবির শহীদ শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্প ও টর্চার সেলে নিয়ে ৪ নভেম্বর মাঝরাতে নয়জনকে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়।

সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া বাকি দুইজনের মধ্যে একজন এখনো জীবিত আছেন। তিনিও এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানান।

প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল মনে করেন সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তারা আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ কারণে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া হয়েছে শুনানিতে।   

এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৪১তম রায়।

আরো পড়ুন:

যুদ্ধাপরাধ: রাজশাহীর টিপু সুলতানের রায় যেকোনো দিন

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //