প্রতারক সাহেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

মহামারি করোনাভাইরাসের টেস্টে প্রতারণা ও জালিয়াতির হোতা রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

আজ সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। 

মামলায় সাহেদকে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় যাবজ্জীবন ও (চ) ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুটি সাজা একত্রে চলবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ওই অস্ত্র বাজেয়াপ্ত ও যে গাড়ি থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে, তার মালিকানা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

রায় ঘোষণার আগে সাহেদকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলায় ১৪ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ১১ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। 

করোনার ভুয়া রিপোর্ট, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে সাহেদের বিরুদ্ধে। গেলো ১৫ জুলাই সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার হন সাহেদ। পরে অভিযানে উদ্ধার হয় অস্ত্র। এ ঘটনায় ৩০ জুলাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আর ২৭ আগস্ট সাহেদের বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

পরে মাত্র ৫ কার্যদিবসে আলেচিত মামলায় ১১ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত। পরের ৩ কার্যদিবসে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ২৮ সেপ্টেম্বর রায়ের দিন ঠিক করেন বিচারক। 

সিএমএম আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, এ মামলা আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। অস্ত্র মামলায় যে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, সেটিই আমরা কোর্টে আবেদন করেছিলাম।

এদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যপ্রমাণ করতে না পারায় এ মামলায় সাহেদ খালাস পাবেন বলে দাবি আসামিপক্ষের আইনজীবীর। সাহেদের আইনজীবী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, উপস্থাপিত যেসব সাক্ষীকে জেরা করেছি, একজন স্বাক্ষীও সুনির্দিষ্টভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।

প্রসঙ্গত, গত ৬ জুলাই র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। পরীক্ষা ছাড়াই করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল তারা। র‌্যাব ভ্রাম্যমাণ আদালত অন্তত ছয় হাজার ভুয়া করোনা পরীক্ষার সনদ পাওয়ার প্রমাণ পায়। এর একদিন পর গত ৭ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে র‌্যাব রিজেন্ট হাসপাতাল ও তার মূল কার্যালয় সিলগালা করে দেয়। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।

এছাড়াও জানা যায়, রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এনআরবি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সুদসহ এক কোটি ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল হক বাদী হয়ে সাহেদসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সাহেদ ছাড়াও ওই মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইব্রাহিম খলিল, এনআরবি ব্যাংকের করপোরেট হেড অফিসের সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার মো. সোহানুর রহমান ও ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদ বিন আহমেদকে আসামি করা হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //