নির্যাতনের অভিযোগে মামলার আবেদন কিশোরের

নির্যাতনের অভিযোগ তুলে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলার আবেদন করেছেন কার্টুনিস্ট  আহমেদ কবির কিশোর।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১০ মাস ধরে কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পাওয়া কিশোর আজ বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার আবদেন করেন।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস আজ বেলা দেড়টার পর থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা কিশোরের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। সেখানে কিশোর তাঁর ওপর হওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দেন। কিশোরের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আদালতে কিশোর বলেন, গত বছরের ২ মে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তার কাকরাইলের বাসায় ১৭–১৮ জন লোক এসে তাকে প্যান্ট–শার্ট পরে বাইরে আসতে বলেন। এ সময় তার মুঠোফোন ও কম্পিউটার জব্দ করেন ওই লোকেরা। তাদের মধ্যে একজনের নাম জসিম বলে তিনি তখন শুনতে পান। কিশোর ওই লোকদের কাছে জানতে চান, কী অপরাধে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে কি না। তখন তাকে বলা হয়, ‘নিচে গিয়ে গাড়িতে ওঠ, পরে সব জানতে পারবি।’

ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তবে মামলার আবেদনে কারও নাম উল্লেখ করেননি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি আদেশের জন্য রেখেছেন।

কিশোরের বড় ভাই আহসান কবির বিবিসিকে বলেন, তার ভাইকে ২০২০ সালের ২ মে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। তিনদিন নির্যাতনের পর তাকে ৫ মে র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে ২ মে কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, পরবর্তী তিনদিন কারা নির্যাতন করেছিল, তা যেহেতু তারা জানেন না, তাই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন তারা।

গত ৪ মার্চ কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ঢাকার স্থানীয় পত্রিকার কাছে তার উপর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা দেন কিশোর।

তিনি বলেন, কীভাবে কোন ওয়ারেন্ট কিংবা কোন পরিচয়পত্র না দেখিয়ে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কীভাবে গোপন বন্দিশালায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এরপর তাকে কোন জামিন না দিয়ে ১০ মাস কারাগারে আটক রাখা হয়।

এই নির্যাতনের জেরে তার কান পর্দা ফেটে যায়। তার দেহে মারাত্মক আঘাতের চিহ্নও তিনি ডেইলি স্টারের সাংবাদিককে দেখিয়েছেন।

পুলিশের এফআইআরে লেখা হয়েছে তাকে ৫ মে ভোরবেলা গ্রেফতার করা হয়। এর অর্থ অন্তত ৬০ ঘণ্টা সময় ধরে তাকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়েছিল। স্টারের তরফ থেকে এবিষয়ে র‌্যাবের সাথে যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটির মিডিয়া ও আইন বিষয়ক পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ্ জানান, আইন মেনেই আহমেদ কবির কিশোরকে আটক করা হয়েছে। একজন আসামি যা খুশি তাই বলতে পারে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১০ মাস কারাবন্দি থাকার পর গত ৩ মার্চ কিশোরের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। পরদিন ৪ মার্চ তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //