রমনা বটমূলে বোমা হামলা: ২১ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

২১ বছর পেরিয়ে গেলেও রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় মামলার বিচারকার্য শেষ হয়নি। ২০০১ সালে ওই হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর পর হত্যা মামলাটির রায় হয়েছে। তবে বিস্ফোরক মামলার কারণে এ রায় কার্যকর হচ্ছে না।

বর্তমানে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮৪ জনের মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। আগামী ২০ এপ্রিল মামলাটির যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে। এরপরই রায়ের দিন ধার্য হবে।

তিনি আরো বলেন, মামলার আসামিরা একাধিক মামলায় জড়িত থাকায় বিচারকার্য শেষ হতে সময় লাগছে। তবে গত ১০ এপ্রিল মামলাটির যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য ছিল। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফকে আবারো জেরা করার আবেদন করেছিলেন। আদালত তা নামঞ্জুর করায় উচ্চ আদালতে যেতে আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করে আসামিপক্ষ। পরে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২০ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে আছে। এ মামলার যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে। বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ হবে বলে আশা করছি।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মাওলানা আবদুল হাই ও মাওলানা শফিকুর রহমান।

এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন- শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আবু তাহের। যাবজ্জীবন দণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই ৯ জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যায় আরো একজন। ওই ঘটনায় রাজধানীর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র ওইদিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুইটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার প্রায় আট বছর পর ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা বারবার পরিবর্তন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল, বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসার কারণে বিচার শুরু হতে দেরি হয়।

২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ মামলা দুটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন।

২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি বিচারের জন্য মামলা দুটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়। ওই আদালতে একই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথক মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ বিচারের জন্য পাঠানো হয়। বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতেই আছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //