নওগাঁর জামায়াত নেতা মন্টুসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নওগাঁ জামায়াতের সাবেক নেতা রেজাউল করিম মন্টুসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ মঙ্গলবার (৩১ মে) এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও কে এম হাফিজুল আলম।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নওগাঁয় সাতজনকে হত্যার পাশাপাশি আরো অনেককে আটকে রেখে নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠণ ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

দণ্ডিত আসামিরা হলেন- নওগাঁর মো. রেজাউল করিম মন্টু, মো. নজরুল ইসলাম ও মো. শহিদ মণ্ডল। তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক; বাকি দুজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এটি হবে ৪৬তম রায়। নওগাঁর তিন আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজাদ ও আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তাদের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ মামলায় আসামি ছিলেন চারজন। তবে এর মধ্যে মো. ইসহাক (৬২) তদন্ত চলার সময়ই গ্রেপ্তার অবস্থায় মারা যায়। এ কারণে অভিযোগ থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়। 

২৬ এপ্রিল এ তিনজনের বিষয়ে শুনানি শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়েছিল।

তদন্ত সংস্থা জানায়, আসামি মো. রেজাউল করিম মন্টু ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী জয়পুরহাট জেলার আমীর ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছিলেন। ওই সময় থেকেই তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি নিজ বাড়িতে চলে আসেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে তিনি আত্মগোপন করেন। বাকিরাও জামায়াতের সমর্থক বলেও জানানো হয়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা নওগাঁর (সাবেক রাজশাহী জেলার নওগাঁ মহকুমা) বদলগাছী থানায় অপরাধ সংঘটন করে।

আসামিদের বিরুদ্ধে সাতজনকে হত্যাসহ অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠণ, অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করার অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় মোট তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। 

প্রথম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর বিকেল আনুমানিক ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সময়ে আসামিরা নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের রানাহার গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র সাহেব আলী, আকাম উদ্দিন, আজিম উদ্দিন মন্ডল, মোজাফফর হোসেনকে হত্যাসহ ওই সময় ১০-১২টি বাড়ি লুট করে অগ্নিসংযোগ করে।

দ্বিতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সময়ে আসামিরা নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খোজাগাড়ী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র মো. নুরুল ইসলামকে হত্যা করেন। এসময় তারা ১৫-২০টি বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ করেন। 

তৃতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর বিকেল আনুমানিক ৫টা থেকে পরদিন অর্থাৎ ৯ অক্টোবর আনুমানিক বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময়ে নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের মো. কেনার উদ্দিন ও মো. আক্কাস আলীকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করেন। পরে অপহরণ করে জয়পুরহাটের কুঠিবাড়ি ব্রিজে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন। এই সময়ের মধ্যে আসামিরা ৪০-৫০টি বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ করেন। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //