হাইকোর্টের আদেশে স্ত্রীকে ফিরে পেলেন তরুণ

রংপুরের বদরগঞ্জের হেমা শর্মাকে তার স্বামী শ্যাম সুন্দরের কাছে ফিরিয়ে দিলেন হাইকোর্ট। আজ রবিবার (১৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

আদালতে শ্যাম সুন্দরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম. তাজুল ইসলাম। অপরদিকে হেমার মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুররম শাহ মুরাদ। এদিন শুনানির একপর্যায়ে হেমা শর্মা হাইকোর্টকে বলেন, ‘এতদিন যেখানে ছিলাম সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়েছি।’

পরে ওই জবানবন্দি বিবেচনায় নিয়েই হেমা শর্মাকে তার স্বামীর হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এসময় আদালত বলেন, দুজনের মধ্যে যে বিয়েটা হয়েছে, সেটা তরুণী বা ছেলের পরিবারের কেউ অস্বীকার করছে না। আর আদালতে হাজির হয়ে এই তরুণীও বলেছে—সে স্বামীর কাছে যেতে চান। তার স্বামীও তাকে নিয়ে যেতে উচ্ছুক। আর তরুণী এটাও বলেছে যে মামার বাড়িতে থাকাকালে সে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ কারণে এই তরুণীর স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবনের স্বার্থে তাকে তার স্বামীর হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।

এরপরই সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা হেমা শর্মাকে তার স্বামী শ্যাম সুন্দরের হাতে তুলে দেন। স্বামীর কাছে ফিরতে পেরে খুশি হেমা শর্মা। তিনি বলেন, আমার পরিবার খুবই ভালো। কিন্তু বিঞ্চু রায় নামে একটা লোকের কারণে আমার আজ এই অবস্থা। আমি আমার স্বামীকে পেয়েছি। আমি আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট।

তার স্বামী শ্যাম সুন্দর বলেন, বিয়ের পর আমার নামে অপহরণসহ বিভিন্ন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি চাই আমার নামে করা মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। আমি আমার স্ত্রীর মা ও মামাদের সম্মান করি। আশা করি তারা আমার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ করে দেবেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর রংপুরের নোটারি পাবলিকে এফিডেভিট সম্পন্ন করেন শ্যাম সুন্দর ও হেমা শর্মা। পরে গত ১৩ জানুয়ারি ধর্মীয় নিয়ম মেনে উভয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের বিষয়টি জানার পর হেমাকে পরদিন ভোররাতে জোর করে তুলে নিয়ে যায় তার পরিবার। পরে এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে আবেদন করেন শ্যাম। কিন্তু কমিশন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।

রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, রংপুরের পুলিশ সুপার, বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সাত জনকে বিবাদী করা হয়।

রিট আবেদনে বলা হয়, শ্যামের বয়স ২২ বছর, আর  হেমার ১৯ বছর। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৩-এর বিধি ২২(১)(ক) অনুযায়ী দুজনে বিয়ে নিবন্ধিত হন। দুজনের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জে। কিন্তু বিয়ের পরদিনই স্ত্রীকে তার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্ত্রী হেমার ফোন পেয়ে জানতে পারেন, তার বয়স ১৫ বছর দেখিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রে (আসক) রেখে গেছেন তার মামা গণেশ শর্মা। পরে সেখান থেকে গত ২৫ মে মামার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এরপর থেকে শ্যাম তার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারছেন না।

রিটে আরো বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী তারা এখন স্বামী-স্ত্রী। কেউ তাদের এই পবিত্র সম্পর্ককে অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু এই বিয়ে মেয়ের মা ও মামারা মেনে নিতে পারছেন না। ইতোমধ্যে তার স্ত্রীকে বিদেশে পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। ভিসাও জোগাড় করে ফেলেছেন।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর হাইকোর্ট হেমা শর্মাকে আদালতে হাজির করতে তার মা সাবিত্রী রায় ও মামা গণেশ শর্মা ও নারায়ণ শর্মাকে নির্দেশ দেন। তারা যেন নির্বিঘ্নে আদালতে হাজির হতে পারেন সেই বিষয়ে রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা মোতাবেক রবিবার (১৩ নভেম্বর) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে সবার বক্তব্য শুনে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //