হাওরে গ্রেপ্তার বুয়েটের ২৪ জনসহ ৩২ শিক্ষার্থীর জামিন

সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তার বুয়েটের ২৪ জনসহ ৩২ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে তাহিরপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করে বিচারক ফারহান সাদিক জামিনের আদেশ দেন।

আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু হানিফ নোমান এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি আরো জানান, নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তার হওয়া বুয়েটের ২৪ জনসহ মোট ৩২ জন শিক্ষার্থীকে ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেছেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহিরপুর জোন আদালতের বিচারক ফারহান সাদিক।

অপরদিকে আরো দুইজনের জামিনের আবেদন আজকেই করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি তৈয়বুর রহমান বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হক।

এর পূর্বে গত রবিবার (৩০ জুলাই) একটি পর্যটকবাহী নৌকা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ট্যাকেরঘাট যাওয়ার পথে তাদের গ্রেপ্তার করে তাহিরপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনা জানাজানি হলে উপজেলা ও জেলা জুড়ে তোলপার সৃষ্টি হয়। পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার সবাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী।

এরপর আটকের ২৪ ঘণ্টা পর সোমবার (৩১ জুলাই) বিকালে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটানো, জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্র ও ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধে তাহিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল কবির বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। সন্ধ্যায় আদালতে সোপর্দ করা হলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারহান সাদিক ৩২ জনকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। এছাড়া দুইজনের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাদেরকে শিশু সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন।

এদের মধ্যে ৩১ জন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী। অন্য তিনজনের দুইজন এই বছর এসএসসি পাস করেছে। একজন অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শিশু তানিমুল ইসলাম (১৫) ও রায়হান ইসলাম সাজিদকে (১৭) শিশু সংশোধনাগারে এবং অন্যদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

তাহিরপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানান, মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তাদের সোমবার বিকেলে আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

এদিকে আদালত থেকে কারাগারে পাঠানোর সময় একাধিক শিক্ষার্থীর দাবি করেন, তারা কোনো অপরাধ করেননি। তারা সবাই টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেকে বেড়াতে এসেছিল। আর পুলিশ কোন কারণে কি তাদের অপরাধ কিছু না বলে ধরে নিয়ে আসে, পরে আদালত পাঠায়। কি মামলা দায়ের করেছে তাও জানেন না তারা।

তাহিরপুর থানা পুলিশ ভাষ্য, তাহিরপুর উপজেলা বাজারের নৌকা ঘাট থেকে রবিবার সকাল ৭টায় একটি নৌকায় করে ভুয়েটের ২৬ শিক্ষার্থী ও তাদের সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আরো ৮ জন শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনের একটি টিম টাঙ্গুয়ার হাওরের ঘুরতে যান। পরে পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাহিরপুরের নতুন বাজারের সামনে নৌকাটি আসলে পুলিশের দুটি স্প্রিট বোট পর্যটকবাহী নৌকাটি থামিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে (৩১ জুলাই) সোমবার বিকালে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) বিভিন্ন ধারায় তাহিরপুর থানার এসআই রাশেদুল কবীর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাইদ।

এদিকে টাঙ্গুয়ার হাওরে রবিবার বিকালে পুলিশের এই বিশেষ অভিযান নিয়ে এলাকায় নানা মহলে আলোচনা চলছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, হাওরে এই মৌসুমে অনেক পর্যটক আসেন। এদের মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য সংখ্যক থাকেন শিক্ষার্থী তারা দলবেঁধে আসেন, এই ঘটনায় হাওরে আসা পর্যটকদের মধ্যে প্রভাব পরেছে।

তাহিরপুর নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি শাহিনুর তালুকদার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,তাহিরপুর উপজেলা বাজারের নৌকা ঘাট থেকে রবিবার সকাল ৭টায় একটি নৌকায় করে ভুয়েটের শিক্ষার্থীসহ ৩৪ শিক্ষার্থী টাঙ্গুয়ার হাওরের ঘুরতে যান। টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরার পর দুপুরের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে ট্যাকেরঘাট পর্যটন এলাকায় যাওয়ার পথে তাহিরপুরের নতুন বাজারের সামনে নৌকাটি আসলে পুলিশের দুটি স্প্রিটবোট পর্যটকবাহী নৌকাটি থামিয়ে শিক্ষার্থীদের আটক করে তাহিরপুর থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

নৌকার চালকরা জানায়, তারা অন্যান্য পর্যটকদের মত স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা চলাচল করে। টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে গোসল করে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে ট্যাকেরঘাটের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে নতুন বাজারের কাছে গেলে পুলিশ নৌকাসহ বুয়েটের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসে।

জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত ঢাকা থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান তাদের থানায় নিয়ে আসার পরে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করার পরই তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এদিকে মঙ্গলবার বিকালে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তির জন্য তাদের একদল অভিভাবক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি তাদের সন্তানরা কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয় বলে চ্যালেঞ্জ করেন।

গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের একজন আলী আম্মার মুয়াজের বড়ভাই আলী আহসান জুনায়েদ অভিভাবকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

অভিভাবকরা বলেন, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ফলে নিরুপায় হয়ে আজকে অভিভাবক হিসেবে আপনাদের সহযোগিতা পেতে আপনাদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।

তাদের জ্ঞাতসারে গত শনিবার তাদের সন্তান/স্বজনেরা ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সাথে টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যায়। যাওয়ার পরে সুনামগঞ্জ গিয়ে আরো বেশ কয়েকজন বুয়েটিয়ানকে পেয়ে তারা আনন্দিত হয় এবং তারা সবাই একত্রে ঘোরার কথা জানায়।

সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ্ জানান, আটককৃতরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীও রয়েছে। আটককৃতরা সরকার বিরোধী নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মনে করছেন তারা সবাই ইসলামী ছাত্র শিবির কর্তৃক মোটিভেটেট।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //