পুলিশ হেফাজতে ফারুকের মৃত্যু

বংশাল থানার ওসি ও ৪ এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে বডি বিল্ডার মিস্টার বাংলাদেশ ফারুক হোসেনের মৃত্যুর অভিযোগে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম এবং একই থানার চার উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

আজ বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাপস কুমার পাল এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) ফারুকের স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপী এ আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদেশ অপেক্ষমান রাখেন। পরে আদালত মামলার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় ওসি ছাড়া অন্য যাদের আসামি করার আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমদাদুল হক, আবু সালেহ, মাসুদ রানা ও বুলবুল আহমেদ।

মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফারুক হোসেন খাজা দেওয়ান সিং লেন লালবাগের বাসা থেকে ব্যক্তিগত কাজে বের হন। এর এক ঘণ্টা পর ফারুক হোসেন স্ত্রী হ্যাপীকে ফোন দিয়ে জানান, তাকে সন্দেহজনকভাবে কায়েতটুলী ফাঁড়ির কতিপয় পুলিশ গ্রেপ্তার করে আটকে রেখে নির্যাতন করছে। দুই বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে তিনি সেখানে ছুটে যান। দেখেন, ফারুককে পুলিশ সদস্যরা মারধর করে আটকে রেখেছে। হ্যাপী সেখানে উপস্থিত এসআই ইমদাদুল হক, মাসুদ রানা, বুলবুল আহমেদসহ অন্যদের পা ধরে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান। তখন ইমদাদুল হক তাকে বলেন, ‘ফারুক অনেক বড় ক্রিমিনাল, তাদের গালিগালাজ করেছে। এমনিতে ছাড়া যাবে না। ওকে ছাড়তে হলে এক লাখ টাকা লাগবে’। তখন হ্যাপী জানান, তার স্বামী সিটি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। আগে বডি বিল্ডার ছিলেন মিস্টার বাংলাদেশ হিসেবে। তিনটি ছোট ছোট সন্তান, তার ইনকামেই সংসার চলে। তাকে ছেড়ে দিন। পরে এক লাখ থেকে কমিয়ে তারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাকে কুপ্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় আসামিরা ফারুককে ব্যাপক মারধর করে। আসামিরা জানায়, সে একজন মাদক ব্যবসায়ী। তারা কিছু করতে পারবে না। তাদের বড় স্যার জানে কি করবে। এর কিছুক্ষণ পর ফারুককে মোটরসাইকেলে করে বংশাল থানার দিকে নিয়ে যায়।

হ্যাপী তখন থানার ওসি মাইনুল ইসলামের হাত-পা ধরে আকুতি মিনতি করে স্বামীকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় না। তারা তাকে পরদিন সিএমএম আদালতে যোগাযোগ করতে বলে। পরদিন হ্যাপী কোর্টে যান স্বামীর খবর নিতে। সেখানে অনেক কষ্টে স্বামীর সাক্ষাৎ পান। স্ত্রীকে মারধরের কথা জানান ফারুক। তার কিছু হলে আদালতে বিচার চাইতে বলে। ফারুকের বিরুদ্ধে ১৫০ গ্রাম গাজার মামলা দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পারেন হ্যাপী। ৫টা-৬টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে যান। ১৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক ব্যক্তি হ্যাপীকে জানান, ফারুক মারা গেছেন। হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তিনি স্বামীর লাশ দেখতে পান। ফারুকের গলায়, বুকে, পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //