আমাদের দেশে নারীরা প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে সমাজে ইভটিজিং বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো নারী বা কিশোরীকে অশালীন মন্তব্য, ভয় দেখানো, তার নাম ধরে, বিকৃত নামে ডাকা, কোনো কিছু ছুড়ে দেওয়া, অহেতুক হাস্যরসের উদ্রেক, রাস্তাঘাটে হাঁটতে বাধা দেওয়া, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পিছু নেওয়া, অশ্লীলভাবে প্রেম নিবেদন, পথ রোধ করে দাঁড়ানো, প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদান ইত্যাদি ইভটিজিংয়ের মধ্যে পড়ে।
ইভটিজিং বা উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা যৌন হয়রানির আরেকটি রূপ। যার শিকার বাংলাদেশে মেয়েরা প্রায়ই হচ্ছেন। যার কারণে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে ইভটিজিংয়ের শাস্তির বিধান আছে।
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৩৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারীর শালীনতা নষ্ট করার অভিপ্রায়ে বা শালীনতা নষ্ট হতে পারে জেনেও তাকে আক্রমণ করে বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করেন, তাহলে সে ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে বা জরিমানাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দণ্ডবিধির আইনের ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করেন, কোনো প্রকাশ্য স্থানে অশ্লীল কাজ, গান বা উচ্চস্বরে কিছু বলেন, সেই ব্যক্তি তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায়ও এ বিষয়ে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। এ ধারায় বলা আছে, যদি কেউ কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কথা, অঙ্গভঙ্গি বা কোনো কাজ করে, তাহলে দায়ী ব্যক্তি এক বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সাজা বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশেও ইভটিজিংয়ের বিষয়ে বলা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের ৭৬ ধারায় এক বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড অথবা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ৭৫ ধারা অনুযায়ী, সমাজে অশালীন বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শাস্তি হিসেবে তিন মাস মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০১৮)-এর ১০ ধারা মোতাবেক যদি কোনো ব্যক্তি যৌনকামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে কোনো অঙ্গ দ্বারা কোনো নারীর অঙ্গ স্পর্শ করে বা শ্লীলতাহানি করে তাহলে সেই ব্যক্তি তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে, ম্যাজিস্ট্রেট তখনই অপরাধ আমলে নিয়ে শাস্তি দিতে পারবেন। এই আইনে শাস্তি হবে সর্বোচ্চ দুই বছর।
ইভটিজিংয়ের শিকার হলে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। যদি মামলা রুজু না হয় তাহলে থানায় জিডি করতে পারেন। তবে জিডি করলে অবশ্যই থানার অফিসারের স্বাক্ষর ও সিলমোহর, জিডি নং তারিখ সংবলিত অভিযোগের ১ কপি সংরক্ষণ করতে হবে। অভিযোগে জিডি নং ও তারিখ না থাকলে জিডি করার আইনগত মূল্য পাবেন না। থানায় মামলা না নিলে সংশ্লিষ্ট আদালতে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ দিতে পারেন। ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগ আমলে নিলে সিআর মামলা রুজু হবে। কেউ ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে এমন ঘটনা দেখলে, আশপাশে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকলে অবগত করা উচিত। ভ্রাম্যমাণ আদালত যদি হাতেনাতে প্রমাণ পায়, তাহলে ঘটনাস্থলেই শাস্তি আরোপ করতে পারবেন। ইভটিজিংয়ের শিকার হলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ডায়াল করলে পুলিশের সহায়তা নিতে পারবে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর লিখিতভাবে এবং সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ দাখিল করতে পারবে। জেলা পর্যায়ে বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করতে পারেন। এতে ইভটিজিংয়ের প্রতিকার পাবেন। তবে আইনি প্রক্রিয়ার চাইতে সামাজিকভাবে উত্ত্যক্তের প্রতিরোধ করা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ইভটিজিং আইন আইনি প্রতিকার
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh