চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন করে আসছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্রথম দিকে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও এক সময় তা সহিংসতায় রূপ নেয়। তখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বিভিন্ন মানুষের অংশগ্রহণে সহিংসতা আরও বেড়ে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। চারদিকে ঘটতে থাকে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম।
এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে সংবিধানের ১৪১ক, ১৪১খ, ১৪১গ অনুচ্ছেদ অনুসারে জরুরি অবস্থা জারির বিধান রয়েছে। সংবিধানে জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য ক্ষমতাসীন সরকারকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাই এরূপ পরিস্থিতিতে সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন এবং জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ সাময়িকভাবে স্থগিত বা সীমিত করে দিতে পারেন।
জরুরি অবস্থা একটি সামরিক অবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষ পরিস্থিতির অবসান ঘটলে জরুরি অবস্থাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সংবিধানের ১৪১ক অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতির কাছে যদি সন্তোষজনকভাবে মনে হয় যে, এমন জরুরি অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে, যাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বা এর যেকোনো অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তা হলে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। তবে এরকম ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি-স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলে পরবর্তী কোনো ঘোষণার মাধ্যমে তা প্রত্যাহার করা যাবে এবং সংসদে উপস্থাপিত হবে। যদি ১২০ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগে সংসদের প্রস্তাব দ্বারা অনুমোদিত না হয় তবে সেই সময়ের পর আর কার্যকর থাকবে না। তবে যদি সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় এরকম কোনো ঘোষণা জারি করা হয় বা জারি করার পর ১২০ দিনের মধ্যে সংসদ ভেঙে যায় তাহলে তা পুনর্গঠিত হওয়ার পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ঘোষণাটি অনুমোদন করে নিতে হবে। তা না হলে ৩০ দিন পর ঘোষণা কার্যকর থাকবে না। সংবিধানের ১৪১খ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের তৃতীয় ভাগের অন্তর্গত বিধানাবলির কারণে রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করতে ও নির্বাহী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সমর্থ নন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার কার্যকর থাকাকালে এই সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪২ অনুচ্ছেদসমূহের কোনো কিছুই সেরূপ আইন-প্রণয়ন ও নির্বাহী ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করবে না।
সংবিধানের ১৪১গ অনুচ্ছেদ অনুসারে জরুরি অবস্থা ঘোষণার কার্যকারিতাকালে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আদেশের মাধ্যমে ঘোষণা করতে পারবেন। জরুরি অবস্থায় সংবিধানের তৃতীয় ভাগের অন্তর্গত মৌলিক অধিকারসমূহ বলবৎকরণের জন্য আদালতে মামলা রুজু করার অধিকার স্থগিত থাকবে। সাধারণত রাষ্ট্রের সংকটকালে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়ে থাকে। তাই এ সময় সাধারণ মানুষের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চলাচল করা ভালো। জরুরি অবস্থা সাময়িক, এই সময়কালে মৌলিক অধিকার বলবৎ থাকে না বা সীমিত করা হয়। এতে করে সভা সমাবেশসহ সকল গণজমায়েত বন্ধ হয়ে যায়। তাই গণজমায়েত থেকে বিরত ও আইন মেনে রাষ্ট্রের গোলযোগ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা প্রতিটি সচেতন নাগরিকের কর্তব্য।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh