অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটলে আইনি প্রতিকার পাওয়ার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে। নির্যাতন, অপহরণ, হুমকি, অগ্নিসংযোগ, চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, ধর্ষণ, খুন, প্রতারণা, বেআইনি সমাবেশ, ইভ টিজিং, মিথ্যা সাক্ষ্যদান, জালিয়াতি, মাদক কারবারি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ফৌজদারি মামলা হয়ে থাকে।
থানায় মামলা হলে থানা কর্তৃপক্ষ সেটি বিজ্ঞ আদালতে স্থানান্তরিত করে। আদালতে এ ধরনের মামলাকে জিআর (জেনারেল রেজিস্ট্রার) মামলা হিসেবে ধরা হয়। এসব অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ থানায় মামলা নিতে বাধ্য। যদি কোনো অযৌক্তিক কারণে থানায় মামলা নিতে অস্বীকার করে তাৎক্ষণিক সেটা সংশ্লিষ্ট থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে পারেন। তাহলে তারা আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারেন। তবে বিভিন্ন কারণ বা সমস্যা দেখিয়ে থানার পুলিশ মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে অনেক সময়। এই পরিস্থিতিতে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শক্রমে বা সহায়তায় সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজ্ঞ আমলী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা যায়। আদালতে করা মামলার অভিযোগকে আরজি বলা হয়। যিনি আরজি দায়ের করেন তাকে ফরিয়াদী/বাদী বলা হয়। আরজিতে আদালতের নাম, যে আইনে মামলা দায়ের হবে সেই আইনের সংশ্লিষ্ট অপরাধের ধারা, বাদী ও আসামির নাম- ঠিকানা, সাক্ষীদের নাম-ঠিকানা এবং ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করতে হয়।
আর কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা বাদী সরাসরি আদালতে গিয়ে বিজ্ঞ অ্যাডভোকেটের মাধ্যমে মামলা দাখিল করলে সেটিকে পিটিশন রেজিস্ট্রার এবং সিআর বলে। আদালতে আরজি দাখিল করার পর ফরিয়াদী/বাদীর জবানবন্দি গ্রহণপূর্বক সারাংশ ম্যাজিস্ট্রেট লিপিবদ্ধ করবেন এবং তাতে বাদী বা সাক্ষীর সই নেবেন। বিজ্ঞ আদালত ফরিয়াদীর জবানবন্দি গ্রহণপূর্বক সন্তুষ্ট হলে সরাসরি মামলাটি আমলে নিতে পারেন। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় অভিযুক্তকে সমন/ওয়ারেন্ট ইস্যুর আদেশ দিতে পারেন বা সংশ্লিষ্ট থানাকে এফআইআর হিসেবে রুজু করার নির্দেশ দিতে পারেন। অথবা উপযুক্ত যেকোনো সংস্থাকে অভিযোগটি তদন্তপূর্বক রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিতে পারেন। অথবা বিজ্ঞ আদালত জবানবন্দি গ্রহণপূর্বক সেই আবেদন খারিজও করে দিতে পারেন। নালিশি পিটিশনটি খারিজ হলে অভিযোগকারী খারিজাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে দায়রা জজ আদালতে বা হাইকোর্ট বিভাগে আদেশ ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে রিভিশনের আবেদন করতে পারেন। এখানে উল্লেখ্য যে, বিশেষ আইনের প্রতিকারের ক্ষেত্রে যদি বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে মামলা করার কথা বলা থাকে তখন সে অনুযায়ী পিটিশন/মামলা দায়ের করতে হয়। যেমন- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করতে হবে।
এ ছাড়া থানা পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি, অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় মহামান্য হাইকোর্টে রিট দায়ের করে প্রতিকার চাইতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগ রায় প্রদান করলে পুলিশ রায় মানতে বাধ্য। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও প্রতিকার চাওয়া যায়। এ ছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থার কাছেও এ ধরনের অভিযোগ দেওয়া যায় (ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস, মহিলা আইনজীবী সমিতি)।
তবে আমাদের দেশের বাস্তবতায় অসহায় ও দরিদ্র বিচারপ্রার্থী নাগরিক থানায় আইনের আশ্রয় না পেলে পুলিশকে এড়িয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বা অন্যান্য ফোরাম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এ ছাড়া বেসরকারি কিছু সংস্থা, যেমন- ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস, মহিলা আইনজীবী সমিতির মতো বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা দুস্থ ও মামলা চালাতে অক্ষম ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh