জামাল সাহেবের রাস্তার ধারের একটি ৭ শতাংশের বাড়ি ছাড়া আর কোনো জমি নেই। রাষ্ট্রীয় কাজে পাশের জমির সঙ্গে জামাল সাহেবের বাড়িও ভূমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের কথা শুনেই তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। তার একমাত্র ভিটেবাড়ি তিনি হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না। জামাল সাহেবের মতো এমন আরো অনেকের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
সরকার নিজ প্রয়োজনে কিংবা অন্য কারো প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারে। সরকার দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণে অর্থাৎ ঘরবাড়ি, দালানকোঠা, অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেলপথ, সড়ক বা সেতুর প্রবেশপথ বা এ জাতীয় অন্য কিছু তৈরির জন্য সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে। এখন জানার বিষয় হচ্ছে, জমি অধিগ্রহণের চিঠি হাতে পেলে কী করবেন। সরকারের পক্ষ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ আইনের ৪ ধারায় নোটিশ জারির পর ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে আপত্তি দাখিল করতে পারবেন। জেলা প্রশাসক জমির পরিমাণ ও মান অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠাবেন। তাদের সিদ্ধান্ত জনপ্রয়োজন বা জনস্বার্থে গৃহীত হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, এর বিরুদ্ধে কোথাও আপিল করা যাবে না।
শেষবারের মতো ৭ ধারায় নোটিশ জারি করা হয়। ৭ ধারায় নোটিশ জারির পর আর কোনো অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন জানার বিষয় হচ্ছে, জমির মূল্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিভাবে আদায় করবেন। নোটিশ জারির সময় সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির বাজারমূল্য নির্ধারণের সময় স্থাবর সম্পত্তির পারিপার্শ্বিক এলাকার সমশ্রেণির এবং সমান সুবিধাযুক্ত স্থাবর সম্পত্তির নোটিশ জারির আগের ১২ মাসের গড় মূল্য হিসাব করা হবে।
তবে যে বিষয়গুলো সরকার পক্ষ থেকে বিবেচনা করা হয় সেগুলো হচ্ছে জমিতে উৎপন্ন যেকোনো ফসল বা বৃক্ষের জন্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষতি। অধিগ্রহণের কারণে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদ্যমান অপর স্থাবর সম্পত্তি থেকে প্রস্তাবিত স্থাবর সম্পত্তি বিভাজনের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি। অধিগ্রহণের কারণে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অন্যান্য স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বা উপার্জনের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি। অধিগ্রহণের কারণে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তার আবাসস্থল বা ব্যবসাকেন্দ্র স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হলে ওই রূপ স্থানান্তরের জন্য যুক্তিসংগত খরচাদি।
সরকারি কোনো প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাজারদরের ওপর অতিরিক্ত ২০০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য দুই কোটি হলে আপনাকে আরো চার কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ওই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে বাজারদরের ওপর অতিরিক্ত ৩০০ শতাংশ। অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য দুই কোটি হলে ছয় কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। অন্যান্য কারণে সৃষ্ট ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে বাজারদরের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ, অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য দুই কোটি হলে আপনাকে আরো দুই কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরির প্রাক্কলিত অর্থ জমা দেওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝিয়ে দেবেন। কোনো ব্যক্তি ক্ষতিপূরণের অর্থ নিতে অসম্মত হলে বা ক্ষতিপূরণ নেওয়ার দাবিদার পাওয়া না গেলে অথবা ক্ষতিপূরণ দাবিদারের মালিকানা নিয়ে কোনো আপত্তি দেখা দিলে ক্ষতিপূরণের অর্থ সরকারি কোষাগারে রাখা হবে। এ ছাড়া অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি নিয়ে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা কোনো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা বা আবেদন গ্রহণ করার এখতিয়ার রহিত করা হয়েছে।
স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭ এর (৪৭) ধারায় অধিগ্রহণ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা না করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের ৪২(২) অনুচ্ছেদে ও ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে স্থাবর সম্পত্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা না করার বিষয়ে বলা হয়েছে। তাই জামাল সাহেব বাড়ি রক্ষায় নোটিশ পাওয়ার পর অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে আপত্তি জানাতে পারবেন। নয়তো ক্ষতিপূরণ নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh