জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের পর মামলাটিকে বিদ্বেষপূর্ণ মামলা বলে পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছে আপিল বিভাগ ।  মামলার রায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে উল্লেখ করে আপিল বিভাগ বলেন, এ মামলার বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগের রায় বাতিল করা হলো। ফলশ্রুতিতে, সব আপিলকারীদের দোষী সাব্যস্ত না করে তাদের সম্পূর্ণ খালাস দেওয়া হলো।

পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেন, আপিলের বিষয়বস্তু থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, এ মামলায় আইনের কাল্পনিক অপপ্রযোগ ঘটেছে। সেই বিবেচনায় এটি একটি বিদ্বেষপূর্ণ মামলা। এই রায় অন্যান্য আপিলকারী এবং যারা আপিল করেননি উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, এ মামলায় আসামিদের যে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে, নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তারা হারানো সম্মান ফিরে পাবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অযৌক্তিক বিচারিক কার্যক্রমের অবসান ঘটবে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে খালাসের রায়ে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদসহ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য আসামিরাও সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন।

রায়ের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, সর্ব্বোচ আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি।

এর আগে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি শেষ হয়। এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।

খালেদা জিয়ার আপিলের ওপর চার কার্যদিবস শুনানি শেষে রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয়।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন হাইকোর্ট বিভাগ এ মামলায় খালেদা জিয়াকে যে সাজা দিয়েছেন তাতে আইনের মারাত্মক ব্যত্যয় হয়েছে। শুধু তাই নয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের যে অর্থ আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে সেই অর্থও সুরক্ষিত আছে সেই অ্যাকাউন্টে তা সুরক্ষিত আছে। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই এ রায় দেওয়া হয়।

গত বছরের ১১ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেন আদালত। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে আপিলের সারসংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত সোমবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে এ মামলার অন্য পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অরফানেজ ট্রাস্টের নামে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান। 

একইসঙ্গে এই মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি ছয় আসামির প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

এরপর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল এবং ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। পরে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ-টু আপিল করেন খালেদা জিয়া।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh