শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন: অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুসদে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফে আগুন লাগানোর ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট অফিসার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ মামলাটি করেন।

সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর।

সাম্প্রতিক দেশকালকে ওসি বলেন, “মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তবে আসামিদের কোনো সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।” পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চারুকলায় রাখা মোটিফে আগুন দেন এক যুবক। আগুন লাগানোর দুই মিনিটের মধ্যে টি-শার্ট পরিহিত ওই যুবক গেট টপকে পালিয়ে যান।

মোটিফে শনিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। শিল্পকর্মগুলো চারুকলা অনুষদের দক্ষিণ পাশের গেটসংলগ্ন প্যান্ডেলের ভেতরে রাখা ছিল। আগুনে এতে ফ্যাসিস্ট মুখাকৃতিটি সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায় এবং পায়রা মোটিফটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়, পরে মামলা হয়।

‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফে আগুন লাগানোর ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যতদ্রুত সম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিটিকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক হোসেন কামাল এবং সহকারী প্রক্টর এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী। সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনার দোসররা’ এই ঘটনায় সরাসরি জড়িত।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “হাসিনার দোসররা গতকাল ভোররাতে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে। যারা এই দুঃসাহস দেখিয়েছে—সফট আওয়ামী লীগ হোক বা আওয়ামী বি-টিম—তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে, দ্রুত।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগুন লাগার ঘটনা দুর্ঘটনা নয় বরং ইচ্ছাকৃত।

পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “এটির (মোটিফগুলো) চারপাশে প্রচুর ক্যামেরা। আমরা ডিজিটাল রেকর্ডগুলো নিয়ে ফরেনসিক করব। কারা এটি করেছে সেটা ইনভেস্টিগেশনে বের হয়ে আসবে।”

১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ পয়লা বৈশাখে শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে এর নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা।’

নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা।’

প্রত্যেক বছর পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে এই শোভাযাত্রা বের হয়। সেখানে বিভিন্ন প্রতিকৃতি শোভা পায়।

জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।





সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh