শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি শেষের পর

করোনা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে উন্নত দেশগুলো। শুরুতেই করোনা প্রতিরোধে দেশগুলো লকডাউন দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থানেই রয়েছে দেশ। অবশ্য অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। চালু হয়েছে গণপরিবহনও। 

আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। তারপর শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির শর্ত নিয়ে কিছু শূন্যতা থেকে যাবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় অবস্থান করার সময় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে যেমন সামাজিক কিংবা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসানোর ব্যবস্থা করা কঠিন হবে, তেমনই বিশ মিনিট পর পর শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার সুযোগ দেওয়াটা আরো কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। এতে শ্রেণি কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি শৃঙ্খলাও নষ্ট হবে। 

এছাড়া দূরদূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে অবস্থানের সময় কতটা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে কোনো শিক্ষার্থী ঝুঁকিমুক্ত এলাকায় এলে তার মাধ্যমে সে এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি একে অন্যের সংস্পর্শে থাকে। তাই যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়ে যায়, তখন অধিক মানুষের করোনা পরীক্ষার ঝুঁকিতে পড়তে হবে। তখন এই চাপ সামাল দেওয়া সরকারের জন্য কতটুকু সহজ হবে কিংবা এইসব বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারের কতটা প্রস্তুতি আছে তা কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগেই ভাবতে হবে।

এদিকে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় দূরদূরান্তের শিক্ষকরা বহুদিন ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন। শিক্ষকদের বদলিব্যবস্থা না থাকা এবং নামেমাত্র বাড়িভাড়ার কারণে অনেক শিক্ষক দূরদূরান্ত থেকে নিজ নিজ কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করেন। যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে মোটরসাইকেল কিংবা গণপরিবহন ব্যবহার করে থাকেন। গণপরিবহনে যাতায়াত করা অবস্থায় কোনো শিক্ষক যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে যান, তাহলে ঐ শিক্ষক যেমন তাঁর সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হবেন, তেমনি নিজ পরিবারের জন্যও তিনি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবেন।

শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য করোনার এই দুর্যোগময় মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে উল্লিখিত সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবার বিবেচনার জন্য কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করছি—

ক. সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপনের ব্যবস্থা করা।

খ. বিশ মিনিট পর পর শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত ওয়াশব্লক স্থাপন এবং সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা।

গ. বিদ্যালয়ের সময় সংক্ষিপ্ত করা।

ঘ. সামাজিক কিংবা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা।

ঙ. বিভিন্ন জেলায় কর্মরত শিক্ষকদের দ্রুত নিজের বাড়ির পাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে আনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে বদলির ব্যবস্থা করা।


নরসিংদী

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //