শতভাগ উৎসব ভাতা এবং জাতীয়করণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
পত্রের প্রারম্ভে আপনাকে মানুষ গড়ার কারিগর, জ্ঞানতাপস, আলোর দিশারী বেসরকারি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ সালাম ও আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এর আগেও বড় আশা নিয়ে বেশ কয়েকটি পত্র লিখে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। জানি না আপনার গোচরিভূত হয়েছে কিনা। তবে প্রতিকার যেহেতু পাইনি তাই ধরে নিচ্ছি হয়নি। বাধ্য হয়েই আবার জাবর কাটছি। আশা করি আপনার অথবা আপনার প্রেস উইংয়ের নজর কাড়তে সক্ষম হব। 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা এবং শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। দেশের পাঁচ লক্ষাধিক এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে অচিরেই আপনার নিকট থেকে দীর্ঘ ১৭ বছরব্যাপি দেয়া সিকিভাগ উৎসব ভাতা বদলে দিয়ে শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদান এবং জাতীয়করণের একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা শোনার জন্য। কিন্তু শিক্ষকরা আশায় বুক বাঁধলেও আপনার পক্ষ থেকে কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কোনরূপ আশার বাণী শুনতে পাচ্ছি না। তাই একরাশ বেদনা নিয়েই পত্রালাপ শুরু করছি।

হে সফল রাষ্ট্রনায়ক,
আপনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য উত্তরসূরি গণতন্ত্রের মানসকন্যা খ্যাত সফল রাষ্ট্রনায়ক। আপনি অত্যন্ত দুরদর্শীপূর্ণ সরকার প্রধান হিসেবে বিশ্বনেতৃত্বের আসনে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। আপনার আদর্শবাদ, চিন্তা-চেতনা, কল্যাণধর্মী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সংগ্রাম, মানবতাবোধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সাহসী ভূমিকা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। আপনি বাংলার অসহায় নিপীড়িত, নির্যাতিত, গরীব-দুঃখী মানুষের নিকট আর্ত-মানবতার মূর্ত প্রতীক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার, এশিয়ার বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর, শান্তির অগ্রদূত। দুরদর্শিতা, বাগ্মিতা, প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের কারণেই আপনি খ্যাতির চূড়ায় আসীন। দেশের এবং নিজের জন্য বয়ে এনেছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। আপনি বিশ্বের বিষ্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল। আপনি বিশ্ববরেণ্য চিন্তাবিদ ও পরিকল্পনাকারী। আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়নশীল দেশের তকমা অর্জন করেছে। প্রত্যাশার জাল বুনছি এজন্যে যে, আপনার গতিশীল নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত সত্ত্বেও আপনার দুরদর্শী ও সাহসী ভূমিকায় প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রায় এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিতে নির্মাণ করেছেন বেশ কিছু বৃহদাকার ফ্লাইওভার। নির্মিত হচ্ছে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। মোদ্দাকথা আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়েছে তা রীতিমত ঈর্ষণীয়।

হে মানবতার অগ্রদূত,
আপনি জনদরদী, অপরের দুঃখে আপনার প্রাণ কাঁদে। কিন্তু আমরা যারা বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, রহস্যজনক কারণে আপনার কৃপা দৃষ্টিলাভ এবং আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি! সংখ্যায় আমরা পাঁচ লক্ষাধিক এবং দেশের ৯৮ ভাগ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের দ্বারা পরিচালিত হলেও আমরা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। সরকারি কর্মচারিরা ২০১৫ সাল থেকে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট পেলেও আপনার আশির্বাদে আমরা পেয়েছি ২০১৮ সালে। তাও আবার কোনরূপ বকেয়া ছাড়া। একইভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে বৈশাখী ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও। রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আপনার কাছে সমান। বাঙালি স্বভাবতই উৎসব প্রিয় জাতি। বেসরকারি শিক্ষকরা এর বাইরে নয়। সমাজের আট দশটা মানুষের মত আমাদেরও স্বাদ-আহ্লাদ আছে। সন্তান-সন্ততি আছে। ঈদের কেনাকাটার শখ তাদেরও আছে। আমি নিজে একজন প্রধান শিক্ষক। আমার বেতন স্কেলের ২৫% ঈদবোনাস মাত্র ৮৭২৫/- টাকা। এ নামমাত্র টাকায় স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ঈদের কেনাকাটা আদৌ সম্ভব কিনা এ প্রশ্ন জাতির কর্ণধার আপনার কাছেই রাখলাম। লজ্জাস্কর হলেও সত্য আমরা মাত্র ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া পাই যা দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই কোথাও নাই। আমাদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০/- টাকা, বদলী সোনার হরিন! চাকরি যেখানে শুরু সেখানেই শেষ।

হে বিশ্ববরেণ্য চিন্তাবিদ,
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি, বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও ভরসার স্থল, আপনি দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী। আপনার নেতৃত্বে দেশ অনেক দুর এগিয়ে। বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশকে সমীহ করে। আপনি নিজেও স্বীয় দক্ষতা ও যোগ্যতাবলে খ্যাতির চূড়ায় আসীন। অথচ আপনারই আস্থাভাজন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক সমাজ অর্ধাহারে, অনাহারে কিংবা উৎসব-পার্বণে মলিন মুখে থাকবে তা নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত নয়। তাই আমরা যে মহানব্রত নিয়ে এ সেবামূলক পেশায় আত্মনিয়োগ করেছি তা যেন স্বার্থক ও সফল হয় তার কাণ্ডারী একমাত্র আপনিই হতে পারেন। আপনার একটি সাহসী সিদ্বান্তই বদলে যেতে পারে আমাদের ভাগ্যের চাঁকা। শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধিত হতে পারে বৈপ্লবিক উন্নয়ন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জাতির পিতার রক্ত যাঁর শিরা-উপশিরা ও ধমনীতে প্রবাহিত, তিনি বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে একদিন না একদিন জাতীয়করণ করবেন। আশার কথা যে, আপনি ইতমধ্যেই দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কিছু প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করেছেন। এজন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই। লক্ষ যেহতু শিক্ষার মানোন্নয়ন তাই বিচ্ছিন্নভাবে নয়, দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষকের মনের মনিকোঠায় ঠাঁই করে নেবেন এবং বাংলাদেশের শিক্ষার ইতিহাসে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করে রাখবেন ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমরা পাঁচ লক্ষাধিক এমপিওভূক্ত বেসরকারি শিক্ষক এখন হতাশায় ভূগছি। এতে শুধু আমরা নই, সমস্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। চাওয়া-পাওয়ার এ ফোবিয়া আক্রান্ত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন বোধ করছি। জাতির সংকটময় মুহুর্তে আপনাকে দেখেছি কান্ডারী হিসেবে ভূমিকা রাখতে। শিক্ষাবান্ধব তকমাটিও আপনাকেই মানায়। তাই আমাদের এ দুঃসময়ে আপনাকেই ত্রাণকর্তা হিসেবে কাছে পাবো এ প্রত্যাশা করছি। আপনি সবই জানেন এবং বুঝেন। তাই প্রত্যাশা করছি করোনায় বিপর্যস্ত বেসরকারি শিক্ষকদের আসছে ঈদুল আযহায় শতভাগ উৎসব ভাতার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা উপহার হিসেবে পেতে চাই বহুল প্রত্যাশিত জাতীয়করণের ঐতিহাসিক ঘোষণা। মুজিববর্ষ বয়ে আনুক আলোকবর্ষ। এ প্রত্যাশায় এ কিঞ্চিৎ আখ্যায়িকার ইতি টানছি।

ইতি
আপনারই গুণমুগ্ধ
মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ভূঞা
প্রধান শিক্ষক, পীর কাশিমপুর আর এন উচ্চ বিদ্যালয়, মুরাদনগর, কুমিল্লা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //