দাবি আদায়ে বেসরকারি শিক্ষকদের অনৈক্যই বড় বাধা

প্রায় পাঁচ লাখের বেশি বেসরকারি শিক্ষক আজ নিজ পেশায় বন্দী। তাদের বোবা কান্না কেউ শুনতে রাজি না। শিক্ষকগণ আগে মনে করতেন- আমাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছায় না। বিগত বাজেট অধিবেশনে মাননীয় কিছু সংসদ সদস্য শিক্ষকদের প্রাণের দাবি জাতীয়করণসহ শতভাগ ঈদ বোনাসের কথা জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দেশবাসী তা শুনেছেন।

শুনেও কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া সরকারের পক্ষ হতে দেখাননি। অন্তত মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীও একটি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারতেন মাননীয় সংসদ সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। শিক্ষক আন্দোলন একটি বৃহত্তর পেশাজীবী আন্দোলন হবার পরেও শিক্ষকদের দাবির কাছে সরকার উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক, অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক তাদের এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দেলন করতে দেখেছি। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে রাজপথ থেকে ঘরে ফিরানোর ব্যবস্থা করেছেন শুধু তাদের। এমপিওভুক্তির কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আজ পর্যন্ত দেখিনি। প্রতি বছর শিক্ষক দিবস আসলেই শিক্ষকগণ আশা করে বসে থাকেন- অন্তত সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সুখবর আসবে, কিন্তু সব আশা গুড়ে বালি হয়ে যায়।

শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের অনেকেই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। সরকার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করলে এদেরই বা কি লাভ হবে? অনেকের মতে- সরকারের অবসর ও কল্যাণের পদ ধরে রাখার জন্য অবসর শিক্ষক হবার পরেও নেতৃত্ব ধরে রাখার একটা কৌশল মাত্র। এতে সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শিক্ষক সংগঠনের প্রতি অবিশ্বাস জমে যায় ফলে অবসর শিক্ষক নেতৃত্বের পেছনে তারা আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছে করেন না।

অবসর শিক্ষক নেতাদের যদি এতোই রাজনৈতিক উচ্চ আকাঙ্খা থাকে তাহলে উনারা চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর স্ব স্ব সংগঠনের উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে পারেন। শিক্ষক সংগঠনকে বাঁচাতে চাকরি হতে অবসর নিলে নেতৃত্ব থেকেও অবসর গ্রহণ করা জরুরি। শিক্ষকদের এই অনৈক্যের সুযোগে সরকার পক্ষ আমাদের কোন কিছু না দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। বাজেট আসে আর বাজেট যায় শিক্ষকদের কপালে ভালো-মন্দ কিছুই জোটে না। সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেটে শিক্ষকদের শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবিও উপেক্ষিত। এটির মূল কারণ হলো- সঠিক শিক্ষক নেতৃত্বের অভাব।

মোটরযান শ্রমিক, মিল কারখানা শ্রমিক তাদের তেমন একাডেমিক শিক্ষা নেই, অথচ দাবি আদায়ে তারা শতভাগ সফল। শিক্ষক সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবার পরেও তারা এক ও অভিন্ন দাবিতে একই প্লাটফর্মে আসতে পারেন না- এটি শিক্ষকদের জন্য অশনি সংকেত ছাড়া আর কি? বেতন স্কেলের শতভাগ আমরা এমনিতেই অর্জন করিনি, একসময় আমরা কিছুই পেতাম না, এতদূর পথ আসা সবিই আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের ফসল। কিছু শিক্ষক অলস, কিছু শিক্ষক অন্যের সমালোচনা করে দিন কাটায় আর কিছু আছেন নিজের রাজনৈতিক উচ্চবিলাস নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান। তাহলে সাধারণ শিক্ষকদের অবস্থা মরিচের মতো। চাঁটগাইয়া ভাষায় কথা আছে ‘পাটা ওতার ঘষাঘষি মরিচের বারোটা’।

শিক্ষকদের জাতীয়করণসহ যে কোন দাবি আদায়ে সাধারণ শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে তার কোন বিকল্প নেই। সাধারণ শিক্ষকদের নিষ্ক্রিয়তার কারনে অসৎ নেতৃত্বের জন্ম হয়। কারনে অকারনে সংগঠনে পদ ধরে রাখে। কোন শিক্ষকের নিজস্ব রাজনীতি আদর্শ থাকতে পারে কেউ সরকার পক্ষ কেউ বিরোধীদলে কিন্ত শিক্ষক সবাইর দাবি এক ও অভিন্ন হতে হবে তারপরেই কেবল অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

-সহকারী অধ্যাপক

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //