ভোটের সময় ‘হঠাৎ সাংবাদিক’: নির্বাচন কমিশনের গাফিলতি নয় কি

সেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রথম আলোয় চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধির একটি প্রতিবেদন দেখলাম। সেখানে তুলে ধরা হয়েছিল, ওই সময় দুটি নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ১৫৫টি ‘সাংবাদিক কার্ড’ দেওয়া হয়েছিল। এসব কার্ডধারী ব্যক্তি কখনো কোনো পত্রিকায় কাজ না করলেও নির্বাচনী মাঠে ‘হঠাৎ সাংবাদিক’ হয়ে গেছেন। কার্ডধারী এসব ব্যক্তির বেশির ভাগই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা নামসর্বস্ব পত্রিকার পরিচয়পত্র জমা দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ‘সাংবাদিক কার্ড’ সংগ্রহ করেছেন। নিয়েছেন যানবাহন ব্যবহারের অনুমতিও। এসব ‘হঠাৎ সাংবাদিকদের’ গলায় নির্বাচন কমিশনের কার্ড ঝুলিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতেও দেখা গেছে।

২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সপ্তম ধাপের ইউপি নির্বাচনে এসেও সেই একই চিত্র দেখা গেছে। তার মানে, এসব ‘হঠাৎ সাংবাদিকের’ লাগাম টানা সম্ভব হয়নি এক দশকেও। ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে সারা দেশের মতো শরীয়তপুরের ডামুড্যার একটি কেন্দ্রে ও জাজিরায় একটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

যথানিয়মে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমতি চেয়ে আমি একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে জাজিরা নির্বাচন অফিসে আইডি কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে আবেদন জমা দিলাম।

নির্বাচন অফিস থেকে বলা হলো, নির্বাচনের আগের দিন, অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর অনুমতিপত্র (নির্বাচন কমিশনের আইডি কার্ড) প্রদান করা হবে। সে অনুযায়ী, উক্ত তারিখে নির্বাচন অফিসে যাওয়ার পর দেখলাম, আমার মতো অনেকেই সাংবাদিক হিসেবে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। তাঁদের অনুমতিপত্র (আইডি কার্ড) ইস্যু করা হচ্ছে।

খেয়াল করলাম, যাঁদের নামে কার্ডগুলো ইস্যু করা হচ্ছে, তাঁদের অধিকাংশই সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত নন। কেউ রাজনীতিসংশ্লিষ্ট, কেউবা সাংবাদিকতার নাম করে বেআইনিভাবে নিজ স্বার্থ সাধনে জড়িত।

প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অপেক্ষার পর জাজিরা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা  মো. মিজানুর রহমান তালুকদার জানান, কার্ড শেষ হয়ে গেছে। যাঁরা বাকি আছেন, তাঁদেরটা যাচাই করে পরে আবার ব্যবস্থা করবেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, আমার আবেদনের সঙ্গে যেসব বৈধ কাগজপত্র জমা দিয়েছি, তার ২০ শতাংশ কাগজপত্রও আপনার ইস্যু করা অনুমতিপত্র পাওয়া ব্যক্তিরা জমা দেননি।

তাহলে তাঁদের যাচাইয়ের জন্য সময় না নিয়ে আমাকে কেন শুধু শুধু হয়রানি করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। যদিও পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার উপস্থিত থাকায় বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। এরপর ওই সময়ই আমাকে আইডি কার্ড প্রদানের নির্দেশ দেন।

এখন আমার কথা হচ্ছে, নির্বাচনের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রকৃত গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের এ ধরনের অবহেলাকে কেন চরম গাফিলতি ও গণতন্ত্রবিরোধী বলা যাবে না? আর স্বয়ং নির্বাচন কমিশনই যদি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে না পারে, তাহলে তা দুঃখজনক বিষয় ছাড়া আর কী হতে পারে?

নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করব, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমতি প্রদানে প্রকৃত গণমাধ্যমকর্মীদের হয়রানি করা থেকে বিরত থাকুন। আর ‘হঠাৎ সাংবাদিকদের’ বিষয়ে সতর্ক হয়ে কাজ করুন। নয়তো আপনাদের প্রধান প্রতিজ্ঞা গণতন্ত্র রক্ষার ধারা অব্যাহত রাখা মুশকিল হয়ে পড়বে।

সমাজকর্মী ও সংবাদকর্মী

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //