দ্রব্যমূল্যের ভারসাম্যহীনতা: সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব

‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’—কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার এ লাইন যেন চিরসত্যের চরম শিখরে এ সময়ে। খাদ্যাভাব নেই, তবে অর্থের অভাব এসে ভর করেছে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। ফলস্বরূপ প্রয়োজনীয় খাবার সামনে থাকলেও পকেটের দিকে তাকিয়ে শুধু দেখে যেতে হচ্ছে বাজারের সারিবদ্ধ দোকানগুলোর দিকে।

আজকের দিনে দেশের বহুমুখী উন্নয়ন হলেও এ দেশের বহুসংখ্যক মানুষই অপর্যাপ্ত আয়ের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানের বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। এ সব মানুষের দুর্দিন ক্রমশই ঘনিয়ে আসছে নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য ভারসাম্যহীনতার কারণে। বলছি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির ফলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের কথা।

এইতো কয়েক দিন আগে ১০ মার্চ আরেক দফা বাড়লো তেল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম। রমজান মাস আসন্ন। সেই উপলক্ষেই বোধ হয় এরূপ দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে এই যে একটা ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা, এটা কি নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থাৎ মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য যৌক্তিক?

বাজারে প্রতিদিনের দরকারি জিনিসের দাম বাড়াতে উচ্চবিত্তদের সাথে হয়তো ‘ভয়াবহ’ শব্দটা খাপ খায় না তবে বর্তমানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যে লাগামহীন চড়া মূল্য, তা যেন গেড়ে বসেছে সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের উপর।

এ দেশের ৭৮.৬% মানুষই গ্রামে বাস করছে, বাকি ২১.৪% শহুরে জীবনযাপন করছে। দেশের সিংহভাগই নিম্নমানের জীবনযাপন করছে, কেননা গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা শহরের তুলনায় অনুন্নত। গ্রামে বেশির ভাগ মানুষই কৃষিকাজ, গো-পালন, কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসা করে দুমুঠো ভাত জোগায়। এমতাবস্থায় দ্রব্যমূল্যের যে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বৃদ্ধি তাতে এসব মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে।

বর্তমানে যে শুধুমাত্র খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া এ রকমটা নয়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক চাহিদার কয়েকটি ক্ষেত্রেই এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। সব ধরনের শিক্ষাপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। খাতাপত্রের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যমূল্যের যে লাগামহীন বিস্তার নিয়ে চরম বিপাকে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। আগে হাতখরচের জন্য কিছু টাকা থাকত মাসশেষে। কিন্তু  এখনকার সময়ে যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত তারা বাড়িতে বাড়তি কোনো টাকা চাওয়ার সুযোগও পাচ্ছে না।

নিম্ন আয়ের মানুষের এই নিঃশব্দ হাহাকার কে শুনবে, দেখবে কে তাদের এই রংহীনতা? বেঁচে থাকাটাই যেন দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে সামনের পথে এগোতে গেলেই। যেসব পরিবারে মাত্র একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বিদ্যমান, সে ব্যক্তির পক্ষে আদৌ কি সম্ভব নিত্যদিনের এই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা? জীবনের নির্মম অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এসব মানুষকে প্রতিনিয়ত। এই অবস্থা চলমান থাকলে দেশের সাধারণ মানুষ হতাশ আর অসহায়ত্বের কিনারায় ডুবে মরবে। সাধারণ মানুষ মানসিকভাবেও নির্যাতিত হচ্ছে এর ফলে। দ্রব্যমূল্যের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাটাই বর্তমানের এ সমস্যার সঠিক উপায়ন্তর হবে।

মো. আবির হাসান

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //